আলজিরিয়ার বিখ্যাত আইন-আল-ফুয়ারায় এক ব্যক্তি একটি মূর্তিকে ভাঙচুর করছে, এমন একটি পুরনো ভিডিও জিইয়ে তুলে বলা হচ্ছে, এটি ইতালিতে অভিবাসী এক মুসলিমের অপকর্ম। ২ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যাচ্ছে, ফোয়ারার উপরের এক নারীমূর্তির বুক ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে ভাঙছে শাদা জোব্বা পরা একটি লোক। তার চারপাশে জড়ো হওয়া ক্রুদ্ধ মানুষরা এর প্রতিবাদ করছে। তিনজন পুলিশ অফিসারও তাকে বাধা দেওয়ার বা থামানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু লোকটি হাতুড়ি দেখিয়ে তাদের হুমকি দিচ্ছে।
বুম-এর হোয়াট্স্যাপ হেল্পলাইন নম্বরে (৭৭০০৯০৬১১১) একটি বার্তা এসেছে, যাতে লেখা—“এক অভিবাসী মুসলিম ইতালির একটি মূর্তি ভাঙতে চেষ্টা করছে, কারণ মূর্তিটিতে নারীশরীরের অংশ দেখা যাচ্ছে। ইউরোপ জানে না, আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে তার জন্য কী অপেক্ষা করে আছে। ওরা ভারতকে মানবাধিকার এবং মুসলিমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর ঔচিত্য নিয়ে জ্ঞান দেয়। এবার ওরা বুঝবে, মুসলিমরা কী আচরণ করে থাকে।”
একই ক্যাপশন দিয়ে ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
পোস্টটি দেখতে এখানে এবং তার আর্কাইভ বয়ান দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটিকে মূল ফ্রেমে ভেঙে-ভেঙে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, ২০১৭ সালে আলজিরিয়ার এই ঘটনাটি সে সময় সংবাদ-মাধ্যমে রিপোর্ট হয়েছিল।
ফ্রান্স ২৪ রিপোর্ট করেছিল, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭, আলজিরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সের সেতিফ জনপদে এক মুসলিম ছেনি-হাতুড়ি নিয়ে একটি মূর্তি ভাঙতে শুরু করে।
ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মেল-ও ঘটনাটি রিপোর্ট করে।
যাঁরা ঘটনাটি দাঁড়িয়ে দেখছিলেন, তাঁদের অনেকেও ঘটনার ছবি তুলে সোশাল মিডিয়ায় নিন্দাসূচক মন্তব্য সহ সেগুলি আপলোড করেন।
ঘটনার দিনেই অর্থাৎ ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ এক প্রত্যক্ষদর্শী ভিডিও সহ একটি ট্যুইট করেন, যা নীচে দেওয়া হল-
গুগল ম্যাপস ব্যবহার করে বুম ফরাসি ভাস্কর ফ্রঁসোয়া দ্য সাঁ-ভিদাল-এর তৈরি ওই মূর্তিমতী ফোয়ারার অবস্থানও শনাক্ত করেছে।
সেতিফ জনপদে আইন-আল-ফুয়ারার সামনের রাস্তার যে ছবি গুগল-এ পাওয়া গেছে, তা ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ছবির সঙ্গে মিলে যায়।
আইন-আল-ফুয়ারা আলজিরিয়ার একটি বিখ্যাত ভাস্কর্য, যা এর আগে ১৯৯৭ সালের ২২ এপ্রিল বোমা বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং ২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এক কট্টর ইসলামপন্থী সেটি হাতুড়ি দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ সম্পর্কে আরও জানতে এখানে ক্লিক করুন।