বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ১৬ জুনের ম্যাচে ভারত পাকিস্তানকে হারানোর পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রিকেট-সম্পর্কিত ভিডিও ও ছবির ছড়াছড়ি, যা শেয়ার করা হচ্ছে পাকিস্তানিদের প্রতিক্রিয়া হিসাবে। তবে এই সব ছবি ও ভিডিওর অধিকাংই বেশ পুরনো এবং সদ্য-অনুষ্ঠিত ম্যাচের সঙ্গে সেগুলির সম্পর্কও নেই।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এই ধরনের তিনটি পোস্ট (দুটি ভিডিও এবং একটি স্থির ছবি)বুম বিশ্লেষণ করেছে, যেগুলির দাবিগুলি ভুয়ো।
কোরান পাঠরত মহিলার ভিডিও
ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যাচ্ছে, একটি স্টেডিয়ামে দর্শক-অনুরাগীদের ভিড় ও হট্টগোলের মধ্যে বসেও এক মহিলা তাঁর ব্যাগের ভিতর রাখা একটি বই থেকে কিছু পাঠ করছেন। হাত-ব্যাগের ভিতর রাখা বইটির খোলা পৃষ্ঠায় উর্দু অক্ষরে লেখা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ১৪ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপটিতে মহিলাকে বারবারই দেখা যাচ্ছে বইটিতে উঁকি দিতে।
ভিডিওর ক্যাপশনে লেখাঃ “স্বর্গীয় কিতাবটিও তাদের বাঁচাতে পারেনি, কেননা তাতে লেখা রয়েছে, যে দিন ভারতীয়দের সঙ্গে তাদের মোকাবিলা হবে, সেটাই হবে তাদের কায়ামতের দিন।”
পোস্টটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বুম নিজে থেকে ভিডিওটি খুঁজে পায়নি, তবে এটা যে বেশ কিছু কাল ধরে ইন্টারনেটে রয়েছে, তা জানতে পেরেছে। খোঁজখবর চালিয়ে দেখা গেছে, চার বছর আগে ইউ-টিউবে ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছিল, যার ক্যাপশন ছিল: “২০১৫-র ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় প্রার্থনারত মহিলা।”
২০১৫-র ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ মার্চ।
বুম আরও একটি পোস্টের সন্ধান পেয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, মহিলাটি আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে পাকিস্তানের খেলা চলাকালে পাকিস্তানের জয়ের জন্য প্রার্থনা করছিল। এ সংক্রান্ত রিপোর্টটি এখানে পড়তে পারেন। পাকিস্তানের সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের খেলাটি হয় ১৫ মার্চ এবং পাকিস্তান তাতে জয়লাভ করে।
বিক্ষুব্ধ অনুরাগীর ভিডিও
টেলিভিশনে খেলা দেখতে-দেখতে উত্তেজিত হয়ে পড়া এক ক্রিকেট অনুরাগীর ভিডিও শেয়ার হচ্ছে, যার ক্যাপশন হল: ‘জয়ের আসল মজা এই ভিডিওটা দেখতে-দেখতে উপভোগ করা যায়’। ১৫ সেকেন্ডের এই ক্লিপটিতে রবিবার বাংলাদেশের ম্যাচ চলাকালীন উত্তেজিত এক বাংলাদেশি সমর্থকের টিভি সেট লক্ষ্য করে চিৎকার করার ছবি ধরা রয়েছে।
ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের একটি দীর্ঘতর ভিডিওর কাটছাঁট করা অংশ।
অনুসন্ধান চালিয়ে বুম ইউ-টিউবে আপলোড করা অনুরূপ কিছু ক্লিপের সন্ধান পায়, যার একটি গত বছর শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের। ভারত ওই ম্যাচে বাংলাদেশকে পরাজিত করেছিল।
ইউটিউবে আপলোড হওয়া অনুরূপ একটি ভিডিওর স্ক্রিনশট নিয়ে বুম দেখেছে, খেলোয়াড়দের জার্সি এবং বিপক্ষ দলের বোলারের নামও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
টেলিভিশন স্ক্রিনে ফুটে ওঠা বোলারের নাম সৌম্য, যিনি বাংলাদেশের ডান-হাতি জোরে বোলার। তাঁর জার্সির লাল-সবুজ রঙও বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের জার্সির রঙ। পাকিস্তানি দলের জার্সির রঙ শুধুই সবুজ।
‘আমরা কাশ্মীর চাই না, আমাদের বিরাট কোহলিকে দিয়ে দাও’
ভাইরাল হওয়া তৃতীয় পোস্টটি একটি স্থির ছবির, যাতে একদল লোক একটি ব্যানার ও পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে দাঁড়িয় রয়েছে। ব্যানারে লেখা—‘আমরা কাশ্মীর চাই না, বিরাট কোহলিকে আমাদের দিয়ে দাও।’ ২০১৯-এর সদ্য-অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ম্যাচে পাকিস্তানের পরাজয়ের পর এটাই নাকি ছিল পাকিস্তানিদের প্রতিক্রিয়া, এমনটাই দাবি করা হয়েছে।
বুম দেখেছে, ভাইরাল হওয়া এই ছবিটির ব্যানারের লেখাটি ফোটোশপ করা। মূল লেখাটি ছিল—‘আমরা আজাদি চাই।’ মূল ছবিটি ২০১৬ সালের এবং পাকিস্তানের নয়, কাশ্মীরের। শ্রীনগর উপত্যকায় কাশ্মীরি তরুণদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সময় ছবিটি তোলা হয়।
মূল ছবিটি নীচে দেওয়া হল:
বুম এডিট করা ছবিটি খন্ডন করেছে এখানে- পাকিস্তানি ক্রিকেট ফ্যানরা কী বলেছিলেন—‘আমরা কাশ্মীর চাই না, আমাদের বিরাট কোহলিকে দিয়ে দাও?’