১৯৯২ সালে বিতর্কিত জমিতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসে তাঁর ভূমিকা এবং অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ নিয়ে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার সময় তোলা সাধ্বী প্রজ্ঞা ঠাকুরের একটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার হচ্ছে এই ভুয়ো দাবি নিয়ে যে, মসজিদ ধ্বংসের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৪ ।
ভিডিওটির ক্যাপশনে স্পষ্ট ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর মসজিদ ধ্বংসে নিজের ভূমিকা নিয়ে প্রজ্ঞা মিথ্যা বলছেন ।
পোস্টটির দাবি—প্রজ্ঞা ঠাকুরের জন্ম হয় ১৯৮৮ সালের ২ এপ্রিল, অতএব মসজিদ ধ্বংসের সময় তাঁর বয়স ৪-এর বেশি হতে পারে না । ভিডিও-র সঙ্গে দেওয়া বিবরণে প্রজ্ঞার নামের বানানেও ভুল করা হয়েছে, তাঁকে ‘সাধ্বী প্রাচী’ বলা হয়েছে । হিন্দি বিবরণীতে লেখা হয়েছে—“মিথ্যে কথা বলায় সাধ্বী প্রাচী এমনকী নরেন্দ্র মোদীকেও পিছনে ফেলে দিয়েছেন ।”
৩০ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে সাধ্বীকে রিপোর্টারকে বলতে শোনা যাচ্ছে—“না, না, রামমন্দির তৈরি হবেই । আমরাই তৈরি করব । একটা বিরাট মন্দির । আমরা আপনাদের জানাব, যখন এটা তৈরি করব । হাজার হোক, আমরাই তো মসজিদটা ধূলিসাত্ করেছি!”
যখন রিপোর্টার তাঁর কাছে জানতে চান যে, তিনি বাবরি মসজিদ ধ্বংসকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন কিনা এবং সে ব্যাপারে তিনি গর্বিত কিনা, উত্তরে সাধ্বী বলেন—“অবশ্যই! আমি তো গিয়েছিলাম, মসজিদের কাঠামোর উপরে চড়েছিলাম এবং সেই কাঠামো ধূলিসাৎ করে দিই । এবং এজন্য আমি গর্বিত!”
ভিডিওটি এখানে দেখতে পারেন এবং তার আর্কাইভ সংস্করণটি এখানে ।
বর্তমানে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এই পোস্টটি মাস্টার স্ট্রোক নামে একটি পেজ থেকে শেয়ার হয়েছে ।
এমনকী যাচাই করা টুইটার হ্যান্ডেলগুলিও ওই পোস্টের বক্তব্য শিরোধার্য করে তা টুইট করে বসে আছে—
সাধ্বী প্রজ্ঞা ঠাকুর ২০০৮ সালের মালেগাঁও (মহারাষ্ট্র) বোমা বিস্ফোরণ মামলায় একজন অভিযুক্ত । ২০০৮ সালেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং ২০১৭ সালে মুম্বই হাইকোর্ট তাঁকে জামিন দেয় । এখন তিনি ভোপাল থেকে ভারতীয় জনতা পার্টির টিকিটে লোকসভায় প্রার্থী ।
তথ্য যাচাই
বুম ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে তাঁর দাখিল করা ওকালতনামায় দেখেছে, তাঁর বয়স ৪৯ বছর বলে উল্লেখিত । তার অর্থ, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় তাঁর বয়স ছিল ২২ বছর ।
তাঁর ওকালতনামাটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন ।
সরকারি নথিতে বয়সের তারতম্য লক্ষ করা যাচ্ছে
বুম দেখেছে, ২০১৬ সালে মুম্বই হাইকোর্টে পেশ করা তাঁর জামিনের আবেদনে প্রজ্ঞার বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ৪৪ বছর, যা সঠিক হলে বাবরি ধ্বংসের সময় তাঁর বয়স ছিল ২০ বছর । ২০১৬য় যদি তাঁর বয়স ৪৪ হয়ে থাকে, তাহলে গত তিন বছরে তা বেড়ে ৪৭ হওয়ার কথা, কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কাছে ২০১৯-এর এপ্রিলে পেশ করা ওকালতনামায় তিনি তাঁর বয়স ৪৯ বলে উল্লেখ করেছেন ।
তবে যাই হোক, কোনও হিসাবেই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় তাঁর বয়স ৪ বছর হওয়ার দাবি ধোপে টেকে না ।
মুম্বই হাইকোর্টে পেশ করা প্রজ্ঞার জামিনের আবেদনের প্রাসঙ্গিক অংশ নীচে তুলে দেওয়া হলঃ