সোভিয়েত ইউনিয়নে সফরের সময় জওহরলাল নেহরু ও ইন্দিরা গান্ধী সমবেত জনতার উদ্দেশে হাত নাড়ছেন, এরকম একটি ছবিকে কংগ্রেস নেতা শশী থারুর এই ভুয়ো দাবি সহ টুইট করেছেন যে, এটি তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের ছবি। বুম দেখেছে, ছবিটি ১৯৫৫ সালে তোলা হয়, যখন নেহরু ও ইন্দিরা বর্তমানে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত শিল্পনগরী ম্যাগনিটোগর্স্ক সফরে গিয়েছিলেন।
থারুর এই ছবিটি টুইট করে তার ক্যাপশন দিয়েছেন—“নেহরু ও ইন্দিরাকে ১৯৫৪ সালে মার্কিন জনসমাজ বরণ করে নিয়েছিল, যদিও তার নেপথ্যে কোনও বিশেষ জনসংযোগ অভিযান, অনাবাসী ভারতীয়দের জড়ো করার কোনও সরকারি প্রয়াস কিংবা গণমাধ্যমে খুঁচিয়ে তোলা প্রচারের ঢক্কানিনাদ ছিল না।”
টুইটটির আর্কাইভ বয়ান দেখুন এখানে।
পরে অবশ্য থারুর টুইট করে জানান, “আমাকে বলা হয়েছে, আমাকে পাঠানো এই ছবিটি সম্ভবত রাশিয়ার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়।”
ভারতীয় যুব কংগ্রেসের অনলাইন পত্রিকা ‘যুব দেশ’ তার ফেসবুক পেজে এই একই ছবি একই বিভ্রান্তিকর ক্যাপশন সহ পোস্ট করেছে।
হিন্দিতে লেখা এই পোস্টটির ক্যাপশনটি অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, “১৯৫৪ সালে যখন নেহরুজি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান, তখন কোনও পেশাদার জনসংযোগ সংস্থা কিংবা কোনও ব্র্যান্ডিং বা সোশাল মিডিয়ায় কোনও আগাম প্রচার-অভিযান তার পটভূমি প্রস্তুত করেনি। অথচ মোদীজি এবং তার অন্ধ ভক্তরা বলে বেড়াচ্ছে যে, ২০১৪ সালের আগে হিন্দুস্তান বা তার প্রধানমন্ত্রীকে দেশের বাইরে কেউ জানতই না।”
(মূল হিন্দিতে লেখা – 1954 में जब नेहरू जी अमेरिका गए थे तब की ये तस्वीर है, तब ना कोई पीआर एजेंसी काम कर रही थी इनके लिए, ना कोई ब्रांडिंग हो रही थी और ना ही सोशल मीडिया पर कैम्पेनिंग! लेकिन मोदी जी और उनके अंधभक्त लोगों को बताएंगे कि 2014 से पहले हिंदुस्तान और उसके प्रधानमंत्री को देश के बाहर कोई जानता नही था!
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অনাবাসী ভারতীয়দের সমাবেশে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যৌথ ভাষণের অনুষ্ঠান “হাউডি মোদী” উপলক্ষেই এই পোস্টটি রচিত হয়েছে।
তথ্য যাচাই
রুশ সার্চ ইঞ্জিন ইয়ানডেক্স-এর সাহায্য নিয়ে আমরা দেখেছি, ছবিটি আদেও ১৯৫৪ সালে তোলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়।
আমাদের তদন্তে জানা গেছে যে ছবিটি তোলা হয় ১৯৫৫ সালে তদানীন্তন সোভিয়েত রাশিয়ায় নেহরুর সফরের সময়।
ওই একই ছবি ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রুশ সংবাদপত্র ম্যাগনিটোগর্স্ক মেটাল-এর একটি নিবন্ধেও প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধের লেখক নিকোলাই জামেনস্কি তাঁর স্মৃতিচারণে জানিয়েছেন, কী ভাবে ম্যাগনিটোগর্স্কে থাকার সময় তিনি সফররত নেহরু ও ইন্দিরাকে দেখতে গিয়েছিলেন।
জামেনস্কি লিখছেন, “১৯৫৫ সালের অগস্ট মাসে জওহরলাল নেহরু ম্যাগনিটোগর্স্কে এসেছিলেন তার কন্যা ইন্দিরা গান্ধীকে নিয়ে। তার হুড-খোলা গাড়ি ‘ভিক্ট্রি’কে মোটরকেডের অন্যান্য গাড়ি থেকে আলাদা করে দিয়েছিল আগ্রহী জনতার ভিড়। আমি ভাগ্যবান যে আমি ওনাদের গাড়ির পাশে-পাশে দৌড়তে পেরেছিলাম। ইন্দিরা গান্ধী খুব সুন্দর উজ্জ্বল রঙের একটা শাড়ি পরেছিলেন এবং তিনি জনতার এই উচ্ছ্বাস দেখে রীতিমত ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলেন।”
ম্যাগনিটোগর্স্ক রাশিয়ার চেলিয়াবিন্স্ক ওবলাস্ট অঞ্চলের একটি শিল্পনগরী, যেখানে এই ছবিটি তোলা হয়। এই নিবন্ধটিতেই দ্বিতীয় একটি ছবিও ছাপা হয়, যেটি একটু অন্য কোণ থেকে তোলা এবং যাতে নেহরু ও ইন্দিরাকে গাড়ির উপর দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশে অভিবাদন জানাতে দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদসূত্র থেকে বুম জানতে পেরেছে, ১৯৫৫ সালের অগস্টে নয়, জুনে নেহরু ম্যাগনিটোগর্স্ক সফরে গিয়েছিলেন। দুটি ছবিতেই ম্যাগনিটোগর্স্ক থেকে প্রকাশিত একটি স্থানীয় সংবাদপত্র ম্যাগমেটাল-এর জলছাপ রয়েছে।
রুশ ফোটোগ্রাফার্স ইউনিয়ন-এর চেলিয়াবিন্স্ক আঞ্চলিক শাখার সরকারি ওয়েবসাইট ফোটোসয়ুজ৭৪-এ আমরা একই ঘটনার তৃতীয় একটি ছবিও পেয়েছি।
ফোটোগ্রাফটির ক্যাপশন,“ম্যাগনিটোগর্স্ক—এমএমকে-তে ১৯৫৫ সালে ভারতীয় প্রতিনিধিদল।” ভিন্ন কোণ থেকে তোলা ছবিটিতে ইন্দিরা গান্ধীকে জনতার দিকে হাত নাড়তে দেখা যাচ্ছে। ছবিতে ইন্দিরা এবং নেহরু সেই একই গাড়িতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এবং ইন্দিরা সেই একই শাড়ি পরে রয়েছেন, যা ভাইরাল হওয়া পোস্টটিতে দেখা গেছে
রুশ সংবাদমাধ্যমে সফরের খবর প্রকাশিত হয়েছিল
২০১৭ সালের ২৪ জুন একটি স্থানীয় সংবাদপত্র ম্যাগনিটোগর্স্ক ওয়ার্কার-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে পুরনো নিবন্ধটি উদ্ধৃত করে লেখা হয়—“এবং তার পরেই ঘটে সেই প্রধান ঘটনাটি—জওহরলাল নেহরু ম্যাগনিটোগর্স্কে পৌঁছলেন ১৭ জুন।” ২০১১ সালের ১৭ জুন রাশিয়ার একটি স্থানীয় সংবাদসংস্থা অ্যাকসেস নিউজ এজেন্সি নেহরু-ইন্দিরার ওই সফরের ৫৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে লেখা হয়েছিল—“বস্তুত ওই দিনটিকেই— ১৭ জুন ১৯৫৫ —ম্যাগনিটোগর্স্কে অসামরিক বিমান পরিসেবার উদ্বোধনের দিন হিসাবে শনাক্ত করা যায়। এদিন জওহরলাল নেহরু ও তাঁর কন্যা ইন্দিরা এবং উচ্চপদস্থ কিছু সহযোগীকে নিয়ে আই-এল ১৪ বিমান স্থানীয় বিমানবন্দরে সর্বপ্রথম অবতরণ করে।”