দাবি: পশ্চিমবঙ্গে এক হিন্দু যুবককে তার বাড়ির ছাদে গেরুয়াপতাকা তোলার জন্য নৃশংস ভাবে মারধর করা হয়েছে।
রেটিং:মিথ্যে
তথ্য: এটি আসলে উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়ার এ বছরের মার্চের ঘটনা এবং এর সঙ্গে সাম্প্রদায়িক কোনও বিষয়ের সম্পর্ক নেই।
তথ্য যাচাই:
উত্তর প্রদেশের ভিডিওটিতে দেখানো হয়েছে যে একদল লোক এক যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করছে। এই ভিডিওটি হোয়্যাটসআপ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এই মিথ্যে বিবৃতির সমেত ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যে পশ্চিমবঙ্গে এক হিন্দু যুবককে তার বাড়ির ছাদে গেরুয়া পতাকা তোলার জন্য মারধর করা হয়েছে।
ভিডিওটি হোয়্যাটসআপ, ফেসবুক ও ইউটিউব-এ ভাইরাল হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ভুয়ো বার্তা, যাতে বলা হয়েছে, “পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের এখন এই অবস্থা। এই হিন্দু ছেলেটি তার বাড়ির ছাদে গেরুয়া পতাকা তুলেছিল।”
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে পাঁচ-ছ’জন লোকের একটি দল এক যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে লাঠি ও বেল্ট দিয়ে মারছে এবং সেখানে উপস্থিত কিছু লোক তাদের সেলফোনে এই নৃশংস ঘটনাটি রেকর্ড করছে।
বুম নিউজ রিপোর্ট অনুসন্ধান করে দেখে যে ভিডিওটি আসলে ২৮ মার্চ, ২০১৮ তারিখের, উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়া জেলার। এটি মোটেই পশ্চিমবঙ্গের ঘটনা নয় যা ভাইরাল পোস্টগুলিতে দাবি করা হয়েছে। প্রহৃত ব্যক্তির নাম শামসাদ আহমেদ। তিনি মূল অভিযুক্ত নাসির আহমেদের কাছে তাঁর বকেয়া টাকা ফেরত চাইলে তাঁকে নৃশংস ভাবে মারধর করা হয়। (নীচে এএনআই ইউ পি -এর টুইট দেখতে পাবেন)
এএনআই-এর টুইটে লেখা হয়: দুষ্কৃতীরা এক যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে। যুবক নিজের টাকা ফেরত চাইতে এলে ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাটির ভিডিও ভাইরাল হয়। পুলিশ ঘটনাটি জানতে পারে এবং একজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ‘মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অন্য চারজনকে শনাক্ত করা হয়েছে, তবে তারা পলাতক।’
সংবাদসূত্রে প্রকাশ, শামসাদ নাসিরকে কয়েকমাস আগে ১৫০০ টাকা ধার দেন। নাসির টাকা ফেরত দেয়নি। দুজনের মধ্যে এই নিয়ে বচসা হয় এবং শামসাদ নাসিরকে মারেন। নাসির তার বদলা নিতে শামসাদকে একটি জনশূন্য জায়গায় ডাকে ও নিজের বন্ধুদের সঙ্গে মিলে তাঁকে মারধর করে।
বুম দেওরিয়ার অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট, সুরেন্দ্র বাহাদুরের সঙ্গে কথা বলে ঘটনাটির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। সুরেন্দ্র বাহাদুর জানান যে এই ঘটনাটির সঙ্গে সাম্প্রদায়িক কোনও বিষয়ের যোগ নেই। তিনি আরও জানান যে সব অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ৫০৬,৫০৪,৩২৩ ও ৩৯২ ধারায় চার্জশিট গঠন করা হয়েছে। এই ধারাগুলি ভয় দেখান, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কাউকে উত্তেজিত করা বা কাউকে অপমান করা ও আঘাত করা এবং ডাকাতির ঘটনায় প্রয়োগ করা হয়। (শামসাদের ফোনটি ঘটনার সময় চুরি যায়।)
ঘটনাটি সেই সময় অমর উজালা, নিউজ ১৮ হিন্দি, খবর এনডিটিভি-র প্রভৃতি সংবাদমাধ্যেমের হিন্দি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়।