বেআইনি অঙ্গ বিক্রি এবং শিশু অপহরণের গুজবে যাতে মানুষ বিশ্বাস না করে, সে জন্য উত্তরপ্রদেশ পুলিশ একটি ভিডিও তৈরি করে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের এক পদস্থ অফিসারকে ওই ভিডিওটিতে দেখা যায়। এই ভিডিওটি এডিট করে শিশু অপহরণ সম্পর্কে মিথ্যে গুজব হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে দেওয়া হল। এডিটেড ভিডিওটিতে একটি নেপথ্যকণ্ঠ দাবি করেছে যে গোরক্ষপুর পুলিশ ছেলেধরার দল সম্বন্ধে মানুষকে জানাতেই এই ভিডিওটি তৈরি করেছে।
এক মিনিটের এই ভিডিওতে গোরক্ষপুর পুলিশের অতিরিক্ত সুপার ডঃ কৌস্তুভকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। আসল ভিডিওতে ডঃ কৌস্তভ মানুষকে এই সব গুজবে কান না দিতে বলেছেন। এডিট করা ভিডিওতে ডঃ কৌস্তুভের কথা বদলে দেওয়া হয়েছে এবং সেখানে হিন্দিতে এক জনকে বলতে শোনা যাচ্ছে যে, “৫০০-র বেশি অঙ্গ বিক্রেতাকারী ভিখারির ছদ্মবেশে চার পাশে ছড়িয়ে পড়েছে।”
বুম গোরক্ষপুর পুলিশের অ্যাডিশনাল এসপি ডঃ কৌস্তুভের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এ সব দাবি একেবারেই উড়িয়ে দেন। তিনি জানান যে অঙ্গ বিক্রেতাকারীরা মানুষকে আক্রমণ করছে, এই ধরনের কোনও মেসেজ আদৌ শেয়ার করা হয়নি।
এডিট করা ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি নীচে দেওয়া হল—
এডিট করা এক মিনিটের এই ভিডিওতে এক জন সাধারণ পোশাক পরা ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, যিনি মানুষকে এই সব দুষ্কৃতীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলছেন আর অন্য দিকের প্যানেলে কৌস্তুভকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটিতে পুরানো কিছু ফুটেজও দেখা যাচ্ছে। সেখানে কিছু মানুষের ছবি দেখা যাচ্ছে যাদের স্থানীয় লোকেরা ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করেছিল।
ভিডিওটিতে হিন্দিতে এক জনকে বলতে শোনা যাচ্ছে “বাড়িতে কেউ নেই, পরে এসো বা এখন যাও, এ সব কথা একেবারেই বলবেন না। যদি বাড়িতে কোনও কুকুর থাকে তবে তাকে এ সব লোকেদের দিকে লেলিয়ে দিন। মূল দরজা কখনও খুলবেন না। বাড়িতে বাচ্চা থাকলে তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকুন। বারগোড়োয়া (গোরক্ষপুর) থেকে খবর পাওয়া গেছে যে পাঁচশোর বেশি লোক ভিখারি সেজে চার দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। রাস্তায় কারও সঙ্গে দেখা হলে তারা অঙ্গ বার করে নিচ্ছে। সুতরাং বন্ধুরা এই মেসেজ ছড়িয়ে দিন এবং নিজেরা নিরাপদে থাকুন। মাত্র ছয় সাত জন লোক এখনও পর্যন্ত ধরা পড়েছে। তারা স্বীকার করেছে যে পাঁচশোর বেশি লোককে এই কাজে লাগানো হয়েছে। এক একটা দলে ১৫ থেকে ২০ জন লোক আছে। তাদের মধ্যে বাচ্চাও আছে। এরা রাতের দিকে আসছে। আপনারা যদি বাচ্চার কান্নার শব্দও শোনেন, দরজা খুলবেন না।এই মেসেজটি চারপাশে ছড়িয়ে দিন। গোরক্ষপুর পুলিশের পক্ষ থেকে জনস্বার্থে প্রচারিত”। গোরক্ষপুর পুলিশের নামে মিথ্যে ভাবে ভাইরাল হওয়া মেসেজটি প্রচার করা হচ্ছে।
এই একই এডিট করা ভিডিও ক্লিপটি ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে। সেখানে হিন্দিতে ক্যাপশন করা হয়েছে। হিন্দি ক্যাপশনের অনুবাদ, “ভিখারির ছদ্মবেশে এসে কিছু লোক শিশু অপহরণ করছে। নিজেরা সতর্ক থাকুন ও বাচ্চাদের নিরাপদে রাখুন। এই ভিডিওতে যাদের ছবি দেখছেন তাদের মত অপরাধী আমাদের অঞ্চলেও ধরা পড়েছে”। হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন, “ऐसा भिकारी बनकर बहुत लोग निकले हैं बच्चों को पकड़ने के लिए कृपया आप सावधान रहें और अपने बच्चे को भी सावधान रखे क्योंकि हमारे इलाके में अभी बहुत सारे आदमी पकड़ा गए हैं जैसे कि यह वीडियो देख रहे हैं|)
বুম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এর আগেও কৌস্তুভের মিডিয়ার উদ্দেশ্যে দেওয়া বক্তব্য এডিট করা হয়েছে এবং মিথ্যে তথ্য ছড়ানোর জন্য প্রচার করা হয়েছে। আমরা ইউটিউবে এরকমই একটা ভিডিও দেখতে পাই, সঙ্গে ক্যাপশন— “কিডনি চোর ধরা পড়েছে।” ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে এবং ইউটিউবে যে ভিডিও আছে তাতে যে কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে তা একই।
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল হওয়া ভিডিও যাচাই করে দেখেছে যে কণ্ঠস্বরটি শোনা যাচ্ছে তা কৌস্তুভের কথার সঙ্গে ঠিক মিলছে না। এ ছাড়া ৩২ সেকেন্ডের মাথায় যখন ওই অফিসার কথা বলা বন্ধ করছেন, তখনও কণ্ঠস্বরটি শোনা যাচ্ছে।
আমরা ভিডিওটির উপরে ডান দিকে গোরক্ষপুর নিউজ চ্যানেলের লোগো দেখতে পাই। আমরা সার্চ করে দেখতে পাই গোরক্ষপুর নিউজে ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট আসল প্রতিবেদনটি প্রচারিত হয়েছিল।
ওই প্রতিবেদনে ‘গোরক্ষপুর পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হচ্ছে’ বলে যেসব মেসেজ ভাইরাল হয়েছে তার অনেকগুলি কৌস্তুভ মিথ্যে বলে প্রমাণ করেছেন।
ওই সংবাদ প্রতিবেদনে কৌস্তভ বলেছেন, “বেআইনি অঙ্গ বিক্রেতা এবং শিশু অপহরণকারীদের বিষয়ে কিছু মেসেজ ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। এই মেসেজগুলি গোরক্ষপুর পুলিশের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে বলে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে। এটা আসলে একটা গুজব। শহরে এই ধরনের কোনও দল কাজ করছে না। যদি কোনও ব্যক্তি বা ঘটনা সম্পর্কে সন্দেহ হয় তবে আমরা নাগরিকদের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানাতে অনুরোধ করছি।”
বুম কৌস্তুভের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, “এডিট করা ভিডিওটি একেবারেই মিথ্যে। আমি মিডিয়াকে জানাচ্ছিলাম যে কী ভাবে এই সব গুজব সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে এবং মানুষ এ সব ক্ষেত্রে যেন সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে চলে আসে।”