মরক্কোর চার বছরের পুরনো একটি ভিডিও, যাতে একদল লোককে এক মহিলাকে রাস্তার মাঝখানে প্রকাশ্যে লাঞ্ছনা করতে দেখা যাচ্ছে, সেটিকে এই ভুয়ো দাবি সহ জিইয়ে তোলা হয়েছে যে, ঘটনাটি সাম্প্রতিক কালের ভারতের এবং এতে জড়িত রয়েছে আরএসএস ও বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা।
সোশাল মিডিয়ায় ভিডিও ক্লিপটি শেয়ার করা হয়েছে বিভিন্ন ক্যাপশন দিয়ে যার প্রতিটিরই বক্তব্য, নিগ্রহকারী ব্যক্তিরা সকলেই দক্ষিণপন্থী উগ্রবাদী সংগঠনের সমর্থক।
৩০ সেকেন্ডের এই ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যাচ্ছে, একদল লোক এক মহিলাকে আচমকা আক্রমণ করছে পাউডারের মতো গুঁড়ো কোনও বস্তু এবং তরল কোনও সামগ্রী দিয়ে। তারা মহিলার হিজাব ধরেও টানাটানি করছে। মহিলাটি যখন চিত্কার করছেন এবং তাদের প্রাণপণে বাধা দিচ্ছেন, তখনও তারা নিগ্রহ চালিয়ে যাচ্ছে। ব্রিটিশ হাউস অব লর্ডস-এর সদস্য লর্ড নাজিব আহমদ পর্যন্ত ভিডিওটি টুইট করেন। পরে অবশ্য তিনি সেটি মুছে দেন, তবে বুম সেটিকে আর্কাইভ করার পরে।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটিকে মূল ফ্রেমে ভেঙে খোঁজ চালিয়ে দেখেছে, ২০১৫ সালের কিছু প্রতিবেদনে এটি ব্যবহৃত হয়েছিল। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ঘটনাটি মরক্কোর ক্যাসাব্লাঙ্কার। সেখানে আসুরার দিনে একদল যুবক এক মুসলিম মহিলাকে ডিম, ময়দা এবং জল দিয়ে হামলা করে। আসুরা হল মহরম মাসের দশম দিন। প্রতিবেদনগুলি পড়তে এখানে এবং এখানে ক্লিক করুন।
হাফিংটনপোস্ট মাঘরেব-এর ১০ জুলাই সংস্করণেও মরক্কোর এই ঘটনাটিকে ভারতে মুসলিম মহিলার বোরখার উপর হামলার ঘটনা বলে নেটিজেনদের ভুয়ো দাবির কথা তুলে ধরা হয়েছে।
ক্যাসাব্লাঙ্কার ভ্লগার ইয়াসিন জাররাম তাঁর ফেসবুক পেজে এই ভিডিওটি শেয়ার করেছেন।
মজার ব্যাপার হল, ফ্রান্স-২৪ সংস্থার একটি লেখায় জানানো হয়েছে, মরক্কোয় ডিম এবং ময়দা ছুঁড়ে মারা একটি উৎসবের ঐতিহ্য।
লেখাটি একটি রিপোর্টে দ্বিতীয় একটি ভিডিওর কথাও বলেছে, যাতে এক মুসলিম মহিলাকে লক্ষ করে ময়দা ও ডিম ছোঁড়ার দৃশ্য রয়েছে। প্রথম ভিডিওটিতে দেখানো মহিলাটি এই ভিডিওতেও উপস্থিত এবং সে বলছে যে ওই যুবকরা ‘স্রেফ মজা করছিল।’ তবে ভিডিওটি এখন মুছে দেওয়া হয়েছে। ফ্রান্স-২৪-এর নিবন্ধে অবশ্য সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে যে হয়ত চাপে পড়েই মহিলাটি বিষয়টিকে লঘু করে দেখাচ্ছেন।