স্পেনের একটি শিল্পকর্মের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি ঘরের ভিতর বিভিন্ন দেশের নোটের বান্ডিলের স্তূপ ডাঁই করা । অনলাইনে সেটি শেয়ার করে ভুয়ো ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে যে, তামিলনাড়ুর এক অজানা রাজনীতিকের গুদামে আগুন লেগেছে ।
হোয়াট্স্যাপে ভিডিও ক্লিপটি ভাইরাল হয়েছে এই ক্যাপশন দিয়ে—“টাকা, টাকা, শুধু টাকা! তামিলনাড়ুর এক রাজনীতিকের গুদাম! আজ সেখানে আগুন লেগেছে—তবে পুড়ে যাওয়া টাকার পরিমাণ সামান্যই! দেখুন তার হিসাব-বহির্ভূত টাকার পাহাড়ের ছবি!”
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ঘরের মেঝে থেকে সিলিং পর্যন্ত তাড়া-তাড়া গোলাপি, কমলা ও সবুজ রঙের নোটের বান্ডিল সাজানো ।
ভুয়ো দাবিটি আরও বিশ্বাসযোগ্য মনে হওয়ার কারণ, ছবির নোটগুলি ২০১৬ সালের নভেম্বরে বিমুদ্রাকরণ চালু হওয়ার পর বাজারে ছাড়া ভারতীয় নোটগুলির রঙের সঙ্গে মিলে যায়!
ভিডিওটি ফেসবুকেও হুবহু একই ক্যাপশন দিয়ে ব্যাপকভাবে শেয়ার হয়েছেঃ
তথ্য যাচাই
ভিডিওটি এর আগে সাবেক ফরাসি উপনিবেশ ক্যামেরুনেও ভাইরাল হয়েছে, যাতে দাবি করা হয়েছিল, সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই ভাবে টাকার লুকনো পাহাড় গড়ে তুলেছিলেন, যা তাঁর স্ত্রী পুলিশ এসে পৌঁছনর আগেই আগুনে পুড়িয়ে দিতে চেষ্টা করে । ফ্রান্স-২৪-এর দ্য অবজার্ভার গত ৩ মার্চ এই ভুয়ো খবরটির পর্দাফাঁস করে । এ সংক্রান্ত রিপোর্টটি পড়তে এখানে দেখুন ।
শিল্পকর্ম
ইউরোপীয় স্বপ্ন নামে এই শিল্পকর্মটির স্রষ্টা মাদ্রিদের আলেহান্দ্রো মঙ্গে । ২০১৮ সালের আর্ট মাদ্রিদ শিল্পোত্সবে এটি প্রদর্শিত হয় ।
ফ্রান্স ২৪ ওয়েবসাইট অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি উত্সবে হাজির এক দর্শক ভিডিওটি তোলেন । শিল্পী আলেহান্দ্রো মঙ্গে নিজেই তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ছবিটি আপলোড করে জানান—এটি একটি ভুয়ো ভিডিও ।
তার আগে ক্যারিবীয় দ্বীপ হাইতি এবং রাশিয়াতেও এই ভিডিওটি ভাইরাল হয় রাজনীতিকদের লুকনো টাকার পাহাড়ের প্রামাণ্য বিবরণ হিসাবে ।
এমনকী পাকিস্তানেও একটি ভুয়ো দাবি সহ ভিডিওটি ভাইরাল হয় ।
ফ্রান্স-২৪ ওয়েবসাইটের সঙ্গে কথাপ্রসঙ্গে শিল্পী মঙ্গে জানান—শিল্পকর্মটি আধুনিক সমাজের উপর (যেখানে সব কিছুই টাকার চারপাশে ঘোরাফেরা করে) তাঁর একটি মন্তব্যবিশেষ । “আমার বিশ্বাস, টাকাই বর্তমান সমাজে ঈশ্বর l আমার এই ভাস্কর্যটি লাক্ষা দিয়ে তৈরি, হাতে-আঁকা ৫ লক্ষ ভুয়ো নোটের বান্ডিল সাজিয়ে রচিত ।”
মঙ্গের ইনস্টাগ্রাম পোস্টের ছবিটি দেখলে বোঝা যায়, নোটগুলি সত্যিকারের নয়, হাতে-আঁকা ।
“এই ভাস্কর্যটির উদ্দেশ্য হল দর্শকদের চমকে দেওয়া, যাতে তারা এই বিপুল পরিমাণ স্তূপীকৃত নোটের বান্ডিল দেখে ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ হয়, যার কিছু অংশ আবার আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে । এটা খুবই চমকপ্রদ ব্যাপার যে, কিছু লোক আবার এই শিল্পকর্মটি ব্যবহার করে অপরাধ বা দুর্নীতির অভিযোগ আনছে”, জানালেন মঙ্গে ।