পাঞ্জাবের রাজপুরায় স্বঘোষিত গোরক্ষকরা দুজন লোককে নির্মমভাবে পেটাচ্ছে, এমন একটি অস্বস্তিকর ভিডিও ফেসবুকে ভুয়ো ব্যাখ্যা দিয়ে ভাইরাল হয়েছে, যাতে দাবি করা হয়েছে, এটি গোয়ায় হিন্দুদের হাতে খ্রিস্টানদের নিগ্রহের ছবি ।
বুম পাঞ্জাব পুলিশের গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল গুরমিত সিং চৌহানের সঙ্গে কথা বলেছে । এই অফিসারই ঘটনাটির তদন্ত চালিয়ে ২০১৬ সালে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছিলেন । তিনি জানালেন, অভিযুক্তরা গোরক্ষক, যারা পাঞ্জাবের বাইরে গরু পাচারের সন্দেহবশে দুজন গরু ব্যবসায়ীকে প্রচণ্ড মারধর করার দায়ে গ্রেফতার হয় ।
একদল লোকের দ্বারা দুজনকে পাশবিকভাবে পেটানোর এই ভিডিওটির ক্যাপশন ছিল—“একটি হিন্দু জনতা গোয়ায় দুজন খ্রিস্টানকে পিটিয়ে হত্যা করছে ।”
ভিডিওটি এতই মর্মান্তিক যে চোখে দেখা যায় না, বুম তাই এটি তার প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভিডিওটি একই ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে ।
টুইটারেও একই ধরনের সাম্প্রদায়িক ক্যাপশন দিয়ে ভিডিওটি শেয়ার হচ্ছে ।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটি মূল কয়েকটি ফ্রেমে ভেঙে তারপর খোঁজখবর চালিয়েছে দেখেছে, এটি একটি দীর্ঘতর ভিডিওর অংশ, যাতে হামলাকারীরা একজন নিগৃহীতের গায়ে প্রস্রাব করছে, এমন দৃশ্যও রয়েছে ।
২০১২ সালে ইউ-টিউবে ভিডিওটি আপলোড হয় । ভিডিওটির ৩ মিনিটের মাথায় হামলাকারীদের একজনকে পাঞ্জাবি ভাষায় বলতে শোনা যাচ্ছে—“এভাবেই আমাদের গরুরাও যন্ত্রণা ভোগ করে থাকে ।”
এখানে সেই কথা শুনুন , যদি অবশ্য শুনতে পারেন ।
ভিডিওতে কিছু মন্তব্য শুনলে মনে হয়, গরু-পাচারকারী সন্দেহেই গো-রক্ষকরা এই নির্যাতন চালাচ্ছে ।
এরপর বুম ‘গো-রক্ষক, পাঞ্জাব’ এই শব্দগুলি বসিয়ে সন্ধান চালালে স্বঘোষিত গোরক্ষক সতীশ কুমার সম্পর্কে বেশ কয়েকটি সংবাদ-প্রতিবেদনের খোঁজ পায়, যে ‘গো-রক্ষা দল’ নামে একটি সংগঠনই তৈরি করে ফেলেছে ।
দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্ট অনুযায়ী পাঞ্জাব পুলিশ একবার সতীশ কুমারকে গ্রেফতার করেছিল গরু-ব্যবসায়ীদের পায়ু-মৈথুন করে তাদের গায়ে প্রস্রাব করার অপরাধে।
রিপোর্ট অনুযায়ী “সতীশ ও তার দলের লোকেরা পাঞ্জাব থেকে গাড়িতে উত্তরপ্রদেশে গরু নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা তোলা চেয়েছিল । তারা তা দিতে না চাওয়ায় সতীশ ও তার দলবল তাদের মুখের উপর প্রস্রাব করে, তাদের মারধর করে, তাদের সেই প্রস্রাব পান করতে বলে এবং গোটা ঘটনাটার ছবিও তুলে রাখে ।”
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, দু বছর পরে এই সংক্রান্ত ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর ৬ অগস্ট একটি মামলা দায়ের হয় ।
বুম তখন পাতিয়ালা পুলিশের এসএসপি চৌহানের সঙ্গে যোগাযোগ করে, যিনি মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারও করেছিলেন । চৌহান ব্যাখ্যা করেন, মামলাটি পাতিয়ালায় নথিভুক্ত হলেও ঘটনাটি পাঞ্জাবের রাজপুরার এবং ২০১২ সালের, যার ভিডিওটি চার বছর পর ভাইরাল হয় ।
“আমরা পাতিয়ালায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করি l ভিডিওয় গোলাপি টি-শার্ট পরা লোকটিই সতীশ কুমার । সে ও তার শাকরেদরা গোরক্ষা দল নামে একটি বেআইনি গোরক্ষা সংগঠন চালায় । পাঞ্জাবের জাতীয় সড়কগুলিতে গরু-ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলা আদায় করে ওরা সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে । যে-কেউ তোলা দিতে অস্বীকার করলে তাকে এমনই নিগ্রহের শিকার হতে হয় ।”
চৌহান স্বীকার করেন, ২০১৬ সালে ভিডিওটি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পরেই পুলিশ সতীশ কুমারকে গ্রেফতার করে ।
বেশ কয়েকটি সংবাদ-মাধ্যম সতীশ কুমারের গোরক্ষা কর্মসূচি বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যার পরেই সতীশ ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা গরু-ব্যবসায়ীদের উপর নির্যাতন চালানোর এই অস্বস্তিকর ভিডিওগুলি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে ।
দ্য মিন্ট পত্রিকা উল্লেখ করেছে, সোশাল মিডিয়ায় গো-রক্ষা দলের পোস্ট করা ভিডিওগুলিতে গরু নিয়ে যাওয়া গাড়ির চালকদের উপর নৃশংস অত্যাচার চালানোর দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে ।