সম্প্রতি একটি ভিডিও ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ওই বীভৎস ভিডিও ক্লিপিংটিতে এক নাবালিকার উপর এক মহিলার মারাত্মক অত্যাচারের ছবি দেখা যাচ্ছে। কয়েক জন ভিডিওটিকে হোয়াটসঅ্যাপেও পাঠিয়েছেন। ওই সব হোয়াটসঅ্যাপে মিথ্যে এবং জাতিবিদ্বেষমূলক মন্তব্য করে বলা হয়েছে যে ঐ মহিলা উত্তর পূর্বাঞ্চলের মানুষ।
এক পাঠকের থেকে বুম এই বীভৎস ভিডিওটি তার হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরে পায়। আমরা এই ভিডিওটি এখানে না দিতে মনস্থ করেছি।
প্রচুর ভারতীয় এই ভিডিওটি টুইটারে শেয়ার করে দাবি করছেন যে মহিলাকে শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতার করা হোক।
ভিডিওটি প্রায় তিন মিনিট দীর্ঘ। দেখা যায়, মহিলা প্রথমে শিশুটির দুই পায়ে পদাঘাত করছে। তার পর সে শিশুটির মুখে, বুকে, কোমরে পা দিয়ে আঘাত করে, এবং শিশুটির মুখের ওপর বসে পড়ে। পিছনে বাজনা বাজতে শোনা যাচ্ছে। শিশুটি যন্ত্রণায় কাঁদছে, তাও শোনা যাচ্ছে। মহিলাটির মুখ দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু তার গোড়ালিতে একটি ট্যাটু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটির বিশেষ বিশেষ অংশের রিভার্স ইমেজ করে আমরা বেশ কিছু সংবাদ প্রতিবেদনের সন্ধান পাই, যাতে দেখা যায় যে এই ভিডিওটি প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস প্রদেশে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে ভাইরাল হয়েছিল।
স্থানীয় বাসিন্দারা ভিডিওটি পুলিশের নজরে আনার পর টেক্সাসের কর্পাস ক্রিস্টি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এই ভিডিওটির বিষয়ে তদন্ত আরম্ভ করে। দ্য মিরর পত্রিকার সংবাদ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্যটি পাওয়া যাচ্ছে।
এর পাশাপাশি আমার কর্পাস ক্রিস্টি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ফেসবুক পেজে ৮ নভেম্বর ২০১৯ তারিখের একটি পোস্টেরও সন্ধান পেয়েছি, যেখানে পুলিশ সাধারণ মানুষকে এই ভিডিও সম্পর্কে জানা থাকা যে কোনও তথ্য জানাতে অনুরোধ করেছে।
কর্পাস ক্রিস্টি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট যে ভিডিওটি আপলোড করেছে, তাতেও এই মহিলা এবং নিগৃহীত শিশুটিকেই দেখা যাচ্ছে, কিন্তু এখানে ঘটনাক্রম সামান্য আলাদা। এখানে দেখা যাচ্ছে, মহিলাটি শিশুর ওপর বসে তাকে আঘাত করছে।
মহিলাটির গোড়ালিতে থাকা ট্যাটুর ছবিও পুলিশ আলাদা করে আপলোড করেছে, যাতে তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
কর্পাস ক্রিস্টি পুলিশের পোস্টটি এখানে দেখতে পারেন। বিশেষ দ্রষ্টব্য: পুলিশের ফেসবুক পেজে ভিডিওটি আছে। দেখার আগে বিবেচনা করে নিন।
দিনকয়েক পর, ১১ নভেম্বর কর্পাস ক্রিস্টি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট আরও একটি বিবৃতি দিয়ে জানায় যে এই নৃশংস ঘটনাটি সম্ভবত মেক্সিকোর।
কর্পাস ক্রিস্টি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট তাদের বিবৃতিতে লেখে, “এই মুহূর্তে যাবতীয় পারিপার্শ্বিক প্রমাণ বলছে যে এই ঘটনাটি আমাদের এলাকার মধ্যে ঘটেনি এবং এটি সম্ভবত মেক্সিকোর নুভো লিওন এলাকায় ঘটেছে। আমরা আরও জানতে পেরেছি যে ঘটনাটি সম্ভবত এক বছররের পুরনো। ঘটনাটি মেক্সিকোর ঠিক কোথায় ঘটেছে, আমরা সেই নির্দিষ্ট জায়গাটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি, যাতে সে দেশের শিশু সুরক্ষা সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষকে তা জানানো যায় এবং এই বিষয়ে তদন্ত করা যায়।”
কর্পাস ক্রিস্টি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এখনও বুমের ভয়েস মেসেজ এবং ইমেলের উত্তর দেয়নি।
বুম স্প্যানিশ ভাষাতেও বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদনের সন্ধান করে এবং এই ভিডিও সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রতিবেদনের হদিশ পায়। স্প্যানিশ সংবাদ সংস্থা এজেন্সিয়া এল ইউনিভার্সাল ১১ নভেম্বর একটি প্রতিবেদনে এই ঘটনাটির উল্লেখ করে লেখে, “এক অপ্রাপ্তবয়স্কের শারীরিক নিগ্রহ সংক্রান্ত যে ভিডিও বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ঘুরছে, এবং যার ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে, নুভো লিওন রাজ্যের জেনারেল ডাইরেক্টরেট অব ইনভেস্টিগেশন এবং দ্য সিভিল ফোর্স সাইবার পুলিশ সেই ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে। স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসও এই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত।
আরও কিছু স্থানীয় সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে যে কর্পাস ক্রিস্টি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট নুভো লিওন পুলিশকে এই ঘটনাটি সম্বন্ধে জানিয়েছে। প্রতিবেদনগুলি এখানে এবং এখানে পড়তে পারেন।
মেক্সিকোর নেটিজেনদের মধ্যে এই ভিডিওটি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে।
স্প্যানিশ ভাষায় কিছু ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে যে নুভো লিওন সাইবার পুলিশ ইতিমধ্যেই এই মহিলাকে শনাক্ত করতে পেরেছে। কিন্তু, বুম এই দাবিটি যাচাই করতে সক্ষম হয়নি।
দেখা যাচ্ছে যে ভিডিওটি প্রথমে টেক্সাসে ভাইরাল হয়েছিল এবং কর্পাস ক্রিস্টি পুলিশ জানিয়েছে যে ঘটনাটি সম্ভবত মেক্সিকোর। কাজেই, ভিডিওটি ভারতের, বা মহিলাটি এই দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ, এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নিতান্তই ক্ষীণ।