সেখ সলমন নামে একজন সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী পশ্চিমবঙ্গ মুসলিম বুদ্ধিজীবী মহল ফেসবুক পেজে একটি ভুয়ো পেট্রোল বিলের ছবি দিয়ে দাবি করেছেন, সেটি মুম্বাইয়ের সাই বালেজি পেট্রোল পাম্পের।
তিনি ৮ এপ্রিলের ওই পোস্টের ক্যাপশানে লিখেছেন- “পেট্রল পাম্পের বিলে লেখা যদি আপনি পেট্রোলের দাম কমাতে চান তাহলে মোদিকে(বিজেপি)পুনরায় ভোট দেবেন না। ভক্তরা সাই বালাজি পেট্রোল পাম্পের চোখ খুললেও আপনাদের কবে খুলবে মিত্র। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পোস্টটিতে ৫৭০ টি লাইক ও শেয়ার হয়েছে।”
পোস্টের আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
বিলটিতে দেখা যাচ্ছে পেট্রোল-এর দর লিটার প্রতি ৮৭.৮৮ টাকা। এবং নিচে একটি বার্তায় লেখা হয়েছে, পেট্রোলের দাম কমাতে চাইলে জনগণ যেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভোট না দেয়।
তথ্য যাচাই
বুম ছবিটিকে বিশ্লেষন করে দেখেছে ছবিটি ভুয়ো এবং বিল মেশিন বিক্রোতাদের নমুনা বিলের ছবিকে এডিট করা। বিস্তারিত বিশ্লেষন করলে ছবিটিতে আরও নানান অসঙ্গতি ধরা পড়ে। হরফের ধরন ও বিলের আকারের তারতম্যে এটিতে ফটোশপের ইঙ্গিত মেলে।
বুম ছবিটিকে বিশ্লেষন করে সাই পেট্রোলিয়াম নামে সার্চ করেছিল। হাতপোযোগি বিল মেশিন প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতা সংস্থা, গোল্ডমাইন ইলেকট্রোসিস্টেম প্রাঃ লিমিটেড এর হদিশ পায়। সাধারনত পেট্রোল পাম্প, টোল কেন্দ্র এবং পার্কিং লটে তাৎক্ষনিক রসিদ তোরির দাম মেটানোর এই মেশিন গুলো দেখতে পাওয়া যায়।
বুম ওই সংস্থার ওয়েবসাইটে “পেট্রোল পাম্প বিলিং সিস্টেম” এর জায়গায় দেখেছে একটি নমুনা বিল রাখা আছে।
এই বিলটি এবং ওই ভুয়ো ছবি দুটোর মধ্যে অনেক সাদৃশ্য আছে। এমনকি মুম্বাইয়ের পশ্চিম ভিকরোলির “সাই বালাজি পেট্রোলিয়াম” পেট্রোল পাম্পের নাম-ধামও মিলে যায়।
বলাবাহুল্য, রসিদ প্রদত্ত যানটির নম্বরও(এমএইচ০৪বিজেড৯৬৮০) মিলে যায়। ভুয়ো বিল এবং নমুনা রসিদে গ্রাহকের নাম(বৈভব)ও এক।
ওই বিক্রেতার ওয়েবসাইটে আরও বিভিন্ন পরিসেবা, যেমন- কেবিল পরিসেবা, পে অ্যান্ড পার্কিং প্রভৃতির “সাই বোলাজি” একই নামে নমুনা রসিদ আছে।
ভুয়ো রসিদটিতে তারিখ ২০ অগস্ট, ২০১২ থেকে ৪ অক্টোবর, ২০১৮ এবং পেট্রোলের প্রতি লিটার মূল্য ৭৪.৫০ টাকা থেকে ৮৭.৮৮ টাকায় পরিবর্তন করা হয়েছে। হরফের এই ধরন, আকার ও বিন্যাসের রকমফের পরিবর্তনে বেশ কিছু অসঙ্গতি ধরা পরে। যেমন উদাহরনসরূপ, “০৪/১০/২০১৮” তারিখের হরফ, সময়ের হরফ ‘১০:১৭’ এর চেয়ে আকারে ছোট। আবার রসিদের নম্বরের শেষ চার অঙ্ক ‘১৩৪৫’ প্রথমের বাকী নম্বরগুলি থেকে আকারে বড় মাপের।
বুম রসিদে দেখানো গাড়িটির নম্বর এমএইচ০৪বিজেড৯৬৮০ পরিবহন এবং সড়ক মন্ত্রালয়ের জাতীয় ই-রেজিস্ট্রেশন পরিসেবার সাহায্যে যাচাই করে দেখেছে। যেখানে গাড়ির মালিক এবং গাড়ি সম্পর্কে এসএমএসের মাধ্যমে সম্পূর্ণ তথ্য জানা যায়। কিন্ত এক্ষেত্রে কোনও তথ্য মেলেনি।
এই বিলটি দাবি করে পেট্রোল পাম্পটি হল একটি “এইচপিএল” ডিলারের। কিন্তু বাস্তবে এইচপিএল এই নামের পেট্রোল সরবরাহকের কোনও অস্তিত্ব নেই।
বুম আগের বছর এরকমই একটি ভুয়ো রসিদ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। প্রতিবেদনটি পড়া যাবে এখানে। এসএমহোক্সস্লেয়ার এর ওই রসিদ নিয়ে প্রতিবেদন পড়া যাবে এখানে।