উত্তরপ্রদেশের উন্নাও জেলার এক আহত আইসক্রিম বিক্রেতার ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ছবিটিতে দাবি করা হয়েছে যে একজন হিন্দুকে ভুল করে মুসলমান ভেবে তাঁকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে জোর করা হয়, এবং তিনি তা বলতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে মারধর করা হয়। দাবিটি আসলে মিথ্যে।
পোস্টটিতে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে লোকটির নাম রাকেশ এবং ‘হিন্দু সন্ত্রাসবাদীদের’ সামনে নতিস্বীকার করতে অসম্মত হওয়ারজন্য তাঁকে মারধর করা হয়েছে।
নিগৃহীতের নামহরিশঙ্কর বর্মা।তাঁর ছবিই মিথ্যে দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।
হরিশঙ্কর বর্মার ছেলে অবধেশ বর্মার সঙ্গে বুম কথা বলেছে। শুক্লাগঞ্জের বাসিন্দা অবধেশ এই মারধরের সঙ্গে সাম্প্রদায়িক কোন ঘটনা জড়িত নয় বলে জানিয়েছেন।
একটি হিন্দি ক্যাপশনের সঙ্গে পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে। ওই ক্যাপশনে বলা হয়েছে, “কোতোয়ালির গঙ্গাঘাটে আইসক্রিম বিক্রেতা রাকেশকে মুসলিম ভেবে ভুল করে গৈরিক গুন্ডারা মারধর করেছে। তাঁকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করা হয়েছে।”
(হিন্দিতে মূল পোস্টটি, “ गंगा घाट कोतवाली क्षेत्र के अंतर्गत कोतवाली के सामने आइसक्रीम बेचने वाले राकेश; को #जयश्रीराम ना कहने पर मुसलमान समझकर भगवागुंडों ने मारा पीटा ।)
এই একই ছবি একই মিথ্যে দাবি সহ বাংলাতেও ভাইরাল হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখতে পায় ওই আইসক্রিম বিক্রেতার গাড়িতে বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য একটি ফোন নম্বর দেওয়া আছে।
বুম কিংস আইসক্রিম নামের একটি স্থানীয় আইসক্রিম ব্র্যান্ডের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আক্রান্ত ব্যক্তি ওই ব্র্যান্ডের আইসক্রিম বিক্রি করতেন। কিংস আইসক্রিমের মালিক ধীরেন যাদব জানান, “এই ছবিটি ইউপির বিভিন্ন স্থানীয় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এক সপ্তাহ ধরে ভাইরাল হয়েছে। ওঁকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বলা হয়নি। ওই আইসক্রিম বিক্রেতার নাম হরিশঙ্কর বর্মা এবং তিনি উন্নাও-এর শুক্লাগঞ্জের বাসিন্দা। এক স্থানীয় গুন্ডার সঙ্গে হরিশঙ্করের ঝগড়া হয় এবং তার ফলে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তারা পরস্পরকে চেনে এবং পরে সমস্যাটা মিটেও যায়।”
আমরা হরিশঙ্কর বর্মার ছেলে অবধেশ বর্মার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনিও একই কথা জানিয়েছেন এবং এই ঘটনার সঙ্গে কোনও সাম্প্রদায়িক ব্যাপার জড়িত থাকার দাবিটি উড়িয়ে দিয়েছেন।
“এই সমস্ত দাবি মিথ্যে। আমার বাবা রোজকার মতো তাঁর কাজ থেকে ফিরছিলেন। সেই সময় কিছু স্থানীয় গুন্ডার সঙ্গে তাঁর ঝামেলা বাধে, এবং গুন্ডারা তাঁকে মারধর করে। গঙ্গাঘাটের আইনশৃঙ্খলার অবনতি লোকের নজরে আনার জন্য আমি হোয়াটসঅ্যাপে ঘটনাটি শেয়ার করতে চেয়েছিলাম। কেউ ছবিটি চুরি করে এবং ঘটনাটিকে একেবারে বদলে দেয়। তখন থেকে আমি প্রচুর মানুষের ফোন পাচ্ছি। এবং আমি আরও পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই যে আমার বাবাকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে জোর করা হয়নি।”
আমরা শুক্লাগঞ্জ থানার সঙ্গেও যোগাযোগ করি। শুক্লাগঞ্জ থানার স্টেশন হেড অফিসার শ্যাম পাল জানান যে এই ঘটনাটি থানা পর্যন্ত আসেনি এবং কোন অভিযোগও দায়ের করা হয়নি।
শ্যাম পাল বলেন, “ঘটনাটি ঘটে গঙ্গাঘাটে। এটি পারস্পরিক বিবাদের ঘটনা এবং পরে বিবাদ মিটে গেছে বলে আমাদের জানানো হয়। কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।”