ইউনিফর্ম পরা স্কুল পড়ুয়ারা (যাদের অধিকাংশই মেয়ে)অঝোরে কাঁদতে-কাঁদতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, এমন দুটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এই বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়ে যে, কাশ্মীরে স্কুলে হিন্দু ছাত্র ছাত্রীদের নির্যাতন চলছে এবং এদের সকলকেই ভূতে ধরেছে ।
ভিডিও দুটি যেখানে তোলা, জম্মু-কাশ্মীরের সেই কাঠুয়ার অফিসাররা জানিয়েছেন, ভূতে ধরার এই গুজব ভুয়ো এবং গণ-হিস্টিরিয়া ছাড়া কিছু নয় ।
দুটি ভিডিওই যে ক্যাপশন দিয়ে শেয়ার হচ্ছে, তা হলঃ "এই ভাবে জম্মু কাশ্মীরে স্কুলে হিন্দু ছাত্র ছাত্রীদের নির্যাতন ও হিন্দু ছাত্রী দের যৌনতার শিখার করছে মুসলিমরা অত্যাচার করলো ভাবা যায় না।"
ভিডিওটি হিন্দিতেও ভাইরাল হয়েছেঃ “হরিয়ানার সফিদোঁ এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ভূতে ধরেছে । গোটা এলাকার বাসিন্দারা ভয়ে মরছেন ।” বেশ কয়েকটি ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল থেকেও ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে, যাতে একই ধরনের ক্যাপশন দিয়ে ঘটনাটিকে অতীন্দ্রিয় বানানোর চেষ্টা করা হয়েছেঃ
তথ্য যাচাই
একটি ভাইরাল ভিডিওয় মন্তব্য করা হয়, ছবিগুলি হরিয়ানায় নয়, জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়ায় তোলা হয়েছে । বুম ‘কাঠুয়ার স্কুল-গার্লরা’ এই শব্দগুলি বসিয়ে ইন্টারনেটে খোঁজ লাগিয়ে বেশ কিছু সবিস্তার সংবাদ-রিপোর্টের সন্ধান পায়, যার সঙ্গে প্রকাশিত ছবিগুলি ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে মেলে ।
ঘটনাটি প্রথম রিপোর্ট করা হয় ১৩ জুন কাঠুয়া জেলার বানি তহশিলের সিট্টি গ্রামের সরকারি হাইস্কুল থেকে । রিপোর্টে জানানো হয়, জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকরা পড়ুয়াদের পরীক্ষা করে সকলকেই শারীরিকভাবে সুস্থই দেখেছেন, কিন্তু তাদের আচরণে যেন কিছু অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েছে । এ ব্যাপারে আরও জানতে এখানে এবং এখানে ক্লিক করুন ।
সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়া টুডে একটি খালি ক্লাসরুমের ছবি সহ রিপোর্টটি প্রকাশ করে ।
কাঠুয়ার ডেপুটি কমিশনার বিকাশ কুন্দল জানান, জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকরা পড়ুয়াদের মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেননি । “আমরা ওই পড়ুয়াদের পরীক্ষা করার জন্য মেডিক্যাল অফিসারদের স্কুলে পাঠিয়েছিলাম, তাঁরা দেখেছেন পড়ুয়ারা যথেষ্ট সুস্থ ।”
কাঠুয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ অশোক চৌধুরীও তাঁর কথারই প্রতিধ্বনি করে বলেন যে, তাঁরা ১৪ জুন ওই স্কুলে ডাক্তারি দল পাঠিয়েছিলেন, যাঁরা পড়ুয়াদের পরীক্ষা করে তাদের কোনও অসুস্থতার চিহ্ন খুঁজে পাননি ।
বুম তখন বানি তহশিলের মহকুমা-শাসক দেবিন্দর সিং জাসোটিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে, যিনি এমনিতে সুস্থ পড়ুয়াদের অস্বাভাবিক আচরণের একটা ব্যাখ্যা দিয়ে জানান, “এটা একটা গণ-হিস্টিরিয়ার ব্যাপার । দুজন পড়ুয়া হয়তো শারীরিক-মানসিকভাবে একটু দুর্বল ছিল, তারাই ব্যাপারটা শুরু করে আর বাকিরা তখন দেখাদেখি অনুকরণ করতে থাকে । একজন শিক্ষক গোটা দৃশ্যটা তাঁর মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে শেয়ার করেন, আর তা থেকেই যত কাণ্ড” ।
মহকুমা-শাসক গোটা ঘটনাটিকেই একটা গণ-হিস্টিরিয়ার বেশি কিছু বলতে চাননি ।
তিনি আরও জানান—“এর মধ্যে কোনও অতীন্দ্রিয় বা ভৌতিক ব্যাপার নেই । আমরা পড়ুয়াদের কড়া ভাষায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, যারা পড়াশোনা করতে চায়, শুধু তারাই যেন স্কুলে আসে, বাকিদের হাতে ট্র্যান্সফার সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হবে ।”