১৪ মে, ২০১৯ উত্তরপ্রদেশের গোন্ডা জেলায় চার মুসলমান যুবক এক হিন্দু যুবকের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি ভাইরাল হয়ে যায়। তবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলির অনেকগুলোতেই যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, তা পুরনো এবং এই ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কহীন।
ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলি বিভ্রান্তিকর। সেই পোস্টে দুটি ছবি আছে, তার মধ্যে একটি ছবি ২০১৩ সালের। অন্য ছবিটি কবেকার, বুম এখনও তা সন্ধান করতে পারেনি।
ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে: চার ‘শান্তির দূত’—ইমরাম, রমজান, নিজামুদ্দিন, তোফিল— উত্তরপ্রদেশের গোন্ডায় এক হিন্দু যুবকের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিল। যদিও এই চার জেহাদিকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিন্তু গণপিটুনি নিয়ে যাঁরা গলা ফাটান, সেই সুশীলরা সব কোথায়?’
মূল হিন্দি পোস্টটি হল: ‘‘उत्तर प्रदेश के गोंडा में एक हिन्दू युवा #विष्णुगोस्वामी को चार शांतिदूतों इमरान-रमज़ान-निज़ामुद्दीन-तुफैल ने पहले पेट्रोल से नहलाया फिर आग लगा दी हालांकि चारों जिहादी गिरफ्तार हैं पर #मॉब_लिंचिंग चिल्लाने वाला गैंग कहाँ है।’’
ঘটনার দু’দিন পর, ১৬ মে গোন্ডা পুলিশের অফিশিয়াল ট্যুইট হ্যান্ডেল থেকে এই ঘটনার মিথ্যে খবর ছড়ানোর বিরুদ্ধে ট্যুইট করা হয়।
ভাইরাল হওয়া পোস্টটি এখানে দেখা যাবে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
পাঠকের বিবেচনা কাম্য
বেশ কিছু পরিচিত দক্ষিণপন্থী পেজ থেকে ফেসবুকে পোস্টটি শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম আরও তথ্যের জন্য গোন্ডা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক বুমকে জানান, “সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা মুসলিম সম্প্রদায়ের, কিন্তু এই ঘটনার মধ্যে কোনও সাম্প্রদায়িক সংঘাত নেই।”
তিনি আরও জানান, “ঘটনার সুত্রপাত হয় একটা ছোট বচসা থেকে। পরে তা বড় আকার ধারণ করে। জেলায় যাতে কোনও সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়ে না পড়ে, আমরা তা সুনিশ্চিত করেছি।’’
প্রথম ছবি
বুম ভাইরাল হওয়া পোস্টের ছবিগুলির একটিতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে একটি ইউটিউব লিঙ্ক দেখতে পায়, যেখানে ২০১৩ সালে আপলোড করা এই একই ভিডিও দেখা যায়। ভাইরাল হওয়া পোস্টের ছবিটি এই ভিডিওরই স্ক্রিনশট। ভিডিওটি কোন ঘটনার এবং কোন সময়ের, বুম এখনও তা চিহ্নিত করতে পারেনি। ভিডিয়োটির বীভৎসতার কারণে সেটি আমরা এখানে দিলাম না, তবে ভিডিওটি এখানে ক্লিক করলে দেখা যাবে।
দ্বিতীয় ছবি
বুম দ্বিতীয় ছবিটিকে চিহ্নিত করতে পারেনি যেখানে এক ব্যক্তিকে আগুনে পোড়ার মারাত্মকভাবে দগ্ধ হতে দেখা যাচ্ছে। এই ছবিটি ওই একই ঘটনার কিনা, গোন্ডা পুলিশ সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করে।
ঘটনার পর্যায়ক্রম
সংবাদসূত্রে প্রকাশ, বিষ্ণু কুমার গোস্বামী ১৪ মে গোন্ডা-অযোধ্যা হাইওয়ের ধারে গিয়েছিলেন মদ্যপ অবস্থায় বেহুঁশ পড়ে থাকা বাবাকে তুলে আনতে। বাবার সঙ্গে বিষ্ণুর কথা কাটাকাটি হয়, এবং তা শেষ অবধি হাতাহাতিতে গড়ায়।
কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক জন যুবক এগিয়ে এসে গোলমাল মিটিয়ে দিতে চায়। কিন্তু, বিষ্ণু সম্ভবত তাদেরও আক্রমণ করেন। অশান্তি আরম্ভ হয়, এবং শেষ অবধি ওই যুবকরা বিষ্ণুর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
চার অভিযুক্তকে ইমরান, তৌফিল, রামজান ও নিজামুদ্দিন নামে সনাক্ত করা হয়েছে। এই সংবাদটি লেখার সময় অবধি তাদের সম্বন্ধে অন্য কোনও তথ্য জানা যায়নি।
গোস্বামীর অবস্থা সংকটজনক। লখনউ-এর একটি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। এই ঘটনা সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পারেন এখানে ও এখানে।
যেহেতু চার অভিযুক্তই মুসলমান, তাই এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে কোনও ভাবেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়াতে না পারে।
গোন্ডা পুলিশও বিষ্ণু কুমারের খুড়তুতো ভাই রাজ কুমার গোস্বামীর একটি ভিডিয়ো আপলোড করেছে, যেখানে তিনি এলাকার মানুষকে শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ করেছেন।