মৃত প্রেমিকের পা দিয়ে সিঁদুর বালিকাকে, পসকো মামলা রুজু বর্ধমান পুলিশের
বুম দেখে ঘটনাটি বর্ধমান শহরের লক্ষীপুর মাঠ এলাকার। বর্ধমান পুলিশ পসকো আইনে মামালা রুজু করেছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।
এক নাবালিকাকে (minor) জোর করে মৃত প্রেমিকের পা ছুঁইয়ে সিঁথিতে (sindoor) সিঁদুর পরানো হচ্ছে এরকমই এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার সাক্ষী হলেনপূর্ব বর্ধমানবাসীরা। পরে সেই ভিডিও তুলে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
বুমের পাঠক/দর্শকরা একটি ভিডিও বুমের হেল্পলাইনে পাঠিয়ে বিষয়টির সত্যতা জানতে চেয়েছেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যায় নীল জামা পরা এক নাবালিকাকে কাপড় ঢাকা শায়িত এক ব্যক্তির পায়ের কাছে বসিয়ে মাথায় সিঁদুর পরানো হচ্ছে।
বুম সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই অস্বস্তিকর ভিডিও প্রতিবেদনে যুক্ত না করার।
আরও পড়ুন: ফুলবাগান মেট্রো স্টেশনে বাংলা সাইনবোর্ড নেই ভুয়ো দাবিতে ছবি জিইয়ে উঠল
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্ধমান শহরের কাঁটাপুকুরের বাসিন্দা ১৭ বছর বয়সী শেখ আফতাবের সঙ্গে ভিন ধর্মের ওই কিশোরীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয়। আফতাবের পরিবারের লোকজন বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে শনিবার ২৯ মে ২০২১ কিশোরীর বর্ধমান শহরের লক্ষ্মীপুর মাঠ এলাকার বাড়িতে যায়। কিন্তু নাবালিকা হওয়ায় বিবাহের প্রস্তাবে অসম্মতি প্রকাশ করেন কিশোরীর মা।
ওই দিন শেখ আফতাবের সঙ্গে ফোনে ঝগড়া হয় তরুণীর। আত্মহননের হুমকি দেয় আফতাব। রবিবার ৩০ মে ২০২১ সকালে আফতাবের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হতেই শোরগোল পড়ে যায় এলাকাতে। অভিযোগ, আফতাব আত্মহননের পূর্ব মুহূর্তের ছবি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠায় তরুণীকে। কিন্তু তাতে নাকি আমল দেয়নি সে।
প্রেমিকের অকালমৃত্যুর জন্য দায়ী করে এলাকাবাসী চড়াও হয় নাবালিকার উপর। জোর করে তরুনের পা দিয়ে সিঁদুর পরায় ওই নাবালিকার সিঁথিতে। হাতে শাঁখা পরতে বাধ্য করে। পরে মৃত প্রেমিকের লাশের সামনেই সিঁথির সিঁদুর মুছে, শাঁখা ভেঙে দেওয়া হয়।
এলাকার লোকজন নাবালিকা ও তাঁর মা-কে মারধর করে ও অকথ্য গালিগালাজ করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠায়।
রবিবার রাতে বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ করেছিলেন নাবালিকার মা। পূর্ব বর্ধমান পুলিশের তরফে পসকো আইনে (POCSO Act) মামাল রুজু করা হয়েছে। বুধবার রাতে সাতজন মহিলাকে গ্রেফতার করে বর্ধমান থানার পুলিশ।
বুম আইনের গবেষিকা ও সমাজকর্মী স্বতীলেখা মন্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন "ঘটনাটি দূর্ভাগ্যজনক। রামমোহন রায় কবেই সতীদাহ বন্ধ করেছে। সভ্য সমাজে এই সব সত্যিই মেনে নেওয়া যায় না। ছেলেটি যখন তার পরিবারের লোকজনকে এই বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তখনই অবিভাবকদের বিষয়টি নিয়ে সচেতন হওয়া উচিত ছিল।"
"১৫ বছরের নাবালিকাকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া আইনত অপরাধ। এসব ক্ষেত্রে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করলে চরম পরিণতি রোখা যেত," স্বতীলেখা বুমকে আরও বলেন।
আরও পড়ুন: কলকাতার নবসজ্জার ইসলামিয়া হাসপাতাল নিয়ে ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবি ভাইরাল