ছত্তীসগঢ়ের দুর্ঘটনার ভিডিও ধর্মীয় দাবিতে উত্তরপ্রদেশের ঘটনা বলে ছড়াল
বুম স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জেনেছে ঘটনাটি ছত্তীসগঢ়ের কাওয়ারধার, উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড়ের ঘটনা নয়।
মত্ত জনতার গাড়ি ভাঙচুর করার একটি ভিডিও মিথ্যা বিবরণী সহ সাম্প্রদায়িক ক্যাপশন দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে যে, এটি উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) প্রতাপগড়ে মুসলিমরা দুর্গাপুজোর (Durga Puja) মণ্ডপে হামলা করার প্রতিক্রিয়ায় হিন্দুদের প্রতিহিংসামূলক আক্রমণ।
বুম দেখলো, এই দাবিটা ভুয়ো এবং ঘটনাটি ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর ছত্তীসগঢ়ের কাওয়ারধা এলাকারl উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গেও বুম কথা বলে দেখেছে, যারা এটিকে সে রাজ্যের ঘটনা বলে অস্বীকার করেছে।
খবর হল, ছত্তীসগঢ়ের কবিরধাম জেলার কাওয়ারধা এলাকায় দক্ষিণপন্থী হিন্দু সাম্প্রদায়িকদের আয়োজিত একটি সমাবেশ হিংসাত্মক হয়ে ওঠেl ১০ অক্টোবর ইন্ডিয়া টুডে-তে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ধর্মীয় পতাকা সরানোকে কেন্দ্র করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে মারামারির প্রতিবাদ হিসাবে সমাবেশটি আয়োজিত হয়েছিল ৩ অক্টোবর, যাতে অনেক সম্পত্তিরও হানি হয়েছিলl হিংসাত্মক পরিস্থিতির সামাল দিতে ঘটনার পর শহরে কার্ফু জারিও করা হয়।
অথচ ছত্তীসগঢ়ের ঘটনাটির ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে এই মিথ্যা দাবি সহ যে, এটি মুসলিমদের তরফে দুর্গামণ্ডপে হামলা চালানোর প্রতিবাদে হিন্দুদের পাল্টা হামলা।
ফেসবুক-এর একটি পোস্ট ভিডিওটি শেয়ার করে হিন্দি ক্যাপশনে লিখেছে: "মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু লোক প্রতাপগড়ের লালগঞ্জ শহরে একটি দুর্গাপুজোর মণ্ডপে প্রবেশ করে, পূজার্চনা বন্ধ করে দেয় এবং ধর্মীয় পতাকা ছিঁড়ে দেয় l এর পরেই হিন্দুরা সক্রিয় হয়ে ওঠে l তারা প্রতিটি বাড়ি থেকে মুসলমানদের টেনে বের করে এনে বেধড়ক মারতে থাকে, মসজিদের ওপরে লাগানো নিশান ছিঁড়ে দেয় এবং ওদের গাড়ি ভাঙচুর করে l গোটা মুসলিম সম্প্রদায় আতংকিত হয়ে থানায় গিয়ে আশ্রয় নেয় l মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই ঘটনার জন্য হিন্দু যুবকদের প্রশংসা করেছেন l ভিডিওটা শেয়ার করুন ভাই সব...কেননা হিন্দুরা এখন জেগে উঠেছে l যারা এখনও জাগেনি, আমাদের তাদেরকে জাগিয়ে তুলতে হবে l"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
এই পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুনl
একই ভুয়ো দাবি সহ বিভিন্ন টুইটার হ্যান্ডেল থেকে এই ভিডিওটিই ভাইরাল করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে মূর্তি ভাঙায় গ্রেফতার ব্যক্তির ছবি ছড়াল কুমিল্লা হিংসা বলে
তথ্য যাচাই
বুম অত্যন্ত নিবিড়ভাবে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে, ভিডিওতে যে গাড়িটিতে ভাঙচুর চালানোর দৃশ্য রয়েছে, সেটির নম্বরপ্লেটে ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরের নম্বরদেওয়া:
আর এই সূত্র অনুসরণ করে বুম ফেসবুকে খোঁজ লাগিয়ে দেখেছে, অক্টোবর মাসের ৬ ও ৭ তারিখে ওই ভিডিওটিই শেয়ার হয়েছে, যার ক্যাপশনে ঘটনাটিকে ছত্তিশগড়ের কাওয়ারধার ঘটনা বলে হিন্দি ক্যাপশনে জানানো হয়।
সেই পোস্টগুলি দেখুন এখানে এবং এখানে।
টুইটারে অনুসন্ধান করেও বুম উত্তরপ্রদেশ পুলিশের একটি সরকারি তথ্য-যাচাই হ্যান্ডেলে দেখেছে, ভিডিওটিকে স্পষ্টভাবে ছত্তীসগঢ়ের কাওয়ারধার ঘটনা বলে শনাক্ত করা হয়েছে।
হিন্দিতে লেখা ইউপি পুলিশ ফ্যাক্ট-চেক-এর ওই টুইটের অনুবাদ করলে দাঁড়ায়: "৫ অক্টোবর, ২০২১ ছত্তীসগঢ়ের কাওয়ারধার একটি ঘটনাকে উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড়ের ঘটনা হিসেবে শেয়ার করার চেষ্টা দৃঢভাবে খারিজ করছে প্রতাপগড়ের পুলিশ এবং ওই ভুয়ো দাবির বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে l"
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ওই তথ্য-যাচাই দল ওই ভিডিওর একটি স্ক্রিনশটও টুইট করেছে, যাতে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা ভুয়ো দাবিটিও হুবহু নথিভুক্ত রয়েছে:
উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড় জেলার লালগঞ্জ থানার আইসি কমলেশ পালের সঙ্গেও বুম যোগাযোগ করেছে, যিনি ভিডিওর দাবিকে সম্পূর্ণ ভুয়ো বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন: "লালগঞ্জে এ ধরনের কোনও ঘটনাই ঘটেনি l এখানে তো খুব শান্তিতেই দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে l যে হোয়াটঅ্যাপ গোষ্ঠী এই ভিডিওটি শেয়ার করেছে, তার অ্যাডমিন-এর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে l ওদের ওপর নজরও রাখা হচ্ছে l"
এ ছাড়াও প্রতাপগড়ে কোনও রকম হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে কিনা, আমরা তার খোঁজও লাগিয়েছিলাম, কিন্তু সে রকম কোনও ঘটনার খবর নেই।
উপরন্তু বুম ছত্তিশগড় পুলিশের কাছেও এ ব্যাপারে জানতে চেয়েছেl ওঁদের উত্তর পেলে প্রতিবেদনটি সেই অনুযায়ী হালনাগাদ করা হবে।
আরও পড়ুন: ছবিটি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের দাদার নয়