বাংলাদেশের ভিডিও পশ্চিমবঙ্গে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা বলে চালানো হল
বুম দেখে ভিডিওটি বাংলাদেশের। ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করায় জোর করে এক মহিলাকে বাপের বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়।
বাংলাদেশে (Bangladesh) এক মহিলা ধর্মান্তরিত হয়ে একজন মুসলিমকে বিয়ে করার জন্য তাঁকে হেনস্তা করার অস্বস্তিকর এক ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। আর সেই সঙ্গে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে যে, সেটি, ৩ মে, পশ্চিমবঙ্গের পিঙ্গলায় এক মহিলার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত।
এই সপ্তাহের শুরুতে পশ্চিমবঙ্গের(West Bengal) পশ্চিম মেদিনীপুর (Paschim Medinipur) জেলায়, এক ২০ বছরের মহিলাকে নির্মাণ কর্মীরা ধর্ষণ (Rape) করে খুন করে। ঘটনাটি ঘটার পরে, নেটিজেনরা এই মিথ্যে দাবি করেন যে, নির্যাতিতা ভারতীয় জনতা পার্টির একজন কার্যকর্তা ছিলেন, যাঁকে তৃণমূলের গুণ্ডারা তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে খুন করে। বুম নিহতের পরিবার ও পিঙ্গলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা ওই মহিলার মৃত্যুর সঙ্গে রাজনীতির যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেন। তাঁর পরিবারের কথা অনুযায়ী, যে রাজমিস্ত্রিরা তাঁদের বাড়ির পেছনে একটা মাটির ঘর মেরামত করছিলেন, তারাই ওই মহিলাকে সেখানে ডেকে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে।
আরও পড়ুন: বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসার সঙ্গে জড়াল ধর্ষণ ও খুন হওয়া নির্যাতিতার ছবি
বিচলিত করার মতো ওই ভিডিওটিতে কয়েকজন লোককে এক মহিলাকে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়। সেটির ক্যাপশনে বলা হয়, "বিজেপি কার্যকর্তা পোলিং এজেন্ট ****। বাংলার টিএমসির কি আরও বড় প্রমাণ চাই? ১৫-২০ গুন্ডা এই মেয়েটিকে অপহরণ, ধর্ষণ ও খুন করে। বাংলা মানুষের বসবাসের জন্য নয়, জন্তুদের জন্য। আর লোকে এটা মনে করে আনন্দে আছে যে, সেখানে সঠিক ঘটনাই ঘটেছে।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: भाजपा कार्यकर्ता बूथ पोलिंग एजेंट *** बंगाल टीएमसी को इससे बड़ा सबूत भी चाहिए क्या उठा के ले जाते हुए लड़की को दिन दहाड़े 15-20 गुण्डो द्वारा बलात्कार और फिर हत्या दरअसल बंगाल इंसानों का नहीं हैवानों का गढ़ हैं ओर यहां लोग खुश हो रहे की सही हुआ)
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
একই বক্তব্য সমেত ভিডিওটি ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম নিশ্চিত হতে পেরেছে যে, ভিডিওটি বাংলাদেশের। কারণ, তাতে মানুষজনের ভাষায় পূর্ববঙ্গের উচ্চারণের টান স্পষ্ট। আমরা ভিডিওটির কয়েকটি প্রধান ফ্রেম বেছে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তার ফলে, বাংলাদেশের এক রহমত আলি হেলালির ফেসবুক পোস্ট আমাদের নজরে আসে। তাতে ওই ভিডিওর একটা দীর্ঘ সংস্করণ ২৭ এপ্রিল ২০২১ পোস্ট করা হয়।
ওই পোস্টে মহিলাটিকে শ্রাবন্তী রানী ওরফে জান্নাতুল ফিরদৌস বলে শনাক্ত করা হয়। পুলিশের সাহায্যে, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাঁকে তাঁর হিন্দু মা-বাবার হাতে তুলে দেন। বাংলাদেশের ভোলায় দৌলতখাঁ নামে এক জায়গায় ঘটনাটি ঘটে। ভিডিওটিতে শ্রাবন্তী ওরফে জান্নাতুল ফিরদৌসকে প্রতিবাদ করতে দেখা যাচ্ছে। তিনি বলছেন, তিনি তাঁর মা-বাবার সঙ্গে যেতে চান না। তিনি তাঁর স্বামী কামরুলের সঙ্গেই থাকতে চান।
এই সূত্র ধরে আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করি। তার ফলে ওই ঘটনা সংক্রান্ত কিছু সংবাদ প্রতিবেদন সামনে আসে।
'আমাদের সময়'-এ প্রকাশিত খবরে বলা হয়, শ্রাবন্তী রানী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে কামরুল ইসলামকে বিয়ে করেন। তাঁর বাবা শঙ্কর চন্দ্র মণ্ডল লিখিত অভিযোগ করলে, 'উইমেন অ্যান্ড চাইল্ড অ্যাবিউস প্রিভেনশন অ্যাক্ট'-এর অধীনে অপহরণের মামলা রুজু করা হয়। এবং স্থানীয় পুলিশ ওই মহিলাকে 'উদ্ধার' করে তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেন।
ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, "দৌলতখাঁ পুলিশের ওসি বলজুর রহমান বলেন, মেয়েটি নাবালিকা ছিল এবং ধর্মান্তকরণ বা বিয়ে করার কোনও আইনি যোগ্যতাই তার ছিল না।" ওই ঘটনাটি সম্পর্কে দৌলতখাঁ থানা একই বক্তব্য ফেসবুকে পোস্ট করে।
'ঢাকা পোস্ট' তাদের রিপোর্টে বলে যে, শ্রাবন্তীর স্বামী কামরুল দাবি করেন যে, তাঁর স্ত্রীর বয়স ১৮। তাতে আরও বলা হয়, শঙ্কর চন্দ্র মণ্ডল ও নিয়তি রানীর মেয়ে শ্রাবন্তীর জন্ম ৩ মার্চ ২০০৩-এ।
আমরা একটি ফেসবুক পোস্ট দেখতে পাই, যেটিতে কামরুল ঘটানাটির বিবরণ দেন।
বেশ কিছু ইউটিউব চ্যানেলও ওই ঘটনাটির ভিডিও শেয়ার করে।
আরও পড়ুন: না, পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসার সঙ্গে এই ভিডিওটির কোনও যোগ নেই