এক মহিলার অপহৃত হওয়ার নাটকীয় দৃশ্যের ভিডিও সত্য ঘটনা বলে প্রচার
বুম দেখে ভিডিওটির উৎস একটি ফেসবুক পেজ, যেখানে এ ধরনের নাটকীয় দৃশ্যের ভিডিওকে বাস্তবের সিসিটিভি দৃশ্য বলে চালানো হয়।
সোশাল মিডিয়া জুড়ে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যাতে ট্যাক্সির জন্যে অপেক্ষারত এক মহিলার এক দল লোকের দ্বারা একটি চলন্ত ভ্যানে অপহৃত (kidnapped) হওয়ার চিত্রনাট্য-ভিত্তিক (scripted video) দৃশ্য দেখিয়ে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে যে, এটি বাস্তব ঘটনার সিসিটিভি দৃশ্য (CCTV Footage)।
বুম অবশ্য ভিডিওটির উত্স হিসাবে একটি ফেসবুক পেজ-এর সন্ধান পেয়েছে, যার কাজই হলো এ ধরনের নাটকীয় দৃশ্যের ছবি তৈরি করে সেটিকে বাস্তব ঘটনা বলে চালানো।
বুম এই ধরনের বেশ কিছু ভিডিওর পর্দাফাঁস করেছে, যেগুলির নির্মাতারা ফেসবুকে নিজেদের অনুসরণকারীর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য এ কাজ করে থাকে। ওরা দাবি করে যে, এই ভিডিওগুলি ওরা বানায় সচেতনতা বাড়ানোর জন্যে এবং কেবলমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্য নিয়ে। কিন্তু এই ভিডিওগুলি লক্ষ-লক্ষ লোক দেখে এবং এগুলি ভাইরাল করে ইসলাম-বিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য ও মতামত প্রচার করা হয়।
এই ভিডিওটি যেমন গত ২১ নভেম্বর, ২০২১ এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন এটি বাস্তবে ঘটমান এবং ফেসবুক, টুইটার ও ইউটিউবে এটি ভাইরাল করে মহিলাদের নিজেদের পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
ইংরাজি সাব-টাইটেল দিয়ে ভিডিওটির বর্ণনা করা হয়েছে, যাতে বলা হচ্ছে, এক মহিলা রাত্রিবেলা ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করার সময় খেয়াল করেননি যে, তাঁকে এক ব্যক্তি আড়াল থেকে সন্দেহজনকভাবে অনুসরণ করছেl ব্যক্তিটি ছবির ফ্রেমে দেখা যাচ্ছে না, এমন কাউকে ইশারা করছে, তার পর একটি কালো ভ্যান মহিলার সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে এবং অন্তত ২ জন লোক মহিলাকে টেনে ভ্যানের ভিতর ঢুকিয়ে নিচ্ছে।
ভিডিওটি ভাইরাল করে মহিলাদের সতর্ক করা হয়েছে তাঁদের নিরাপত্তা বিষয়ে আরও সজাগ থাকতে।
"নিজেদের বোনেদের এবং মেয়েদের বলে দাও, রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় মোবাইল ফোনে অত ব্যস্ত না থাকতে এবং সন্দেহজনক কিছু দেখলেই চিত্কার করে লোকজনের মনোযোগ আকর্ষণ করতে"।
ফেসবুকে পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে।
কংগ্রেসের অলকা লাম্বা পোস্টটি টুইটে উদ্ধৃত করেছেন।
তথ্য যাচাই
বুম অত্যন্ত নিবিড়ভাবে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে, ফেসবুক পেজে বানানো এই একই ভিডিও নানা সোশাল মিডিয়া মঞ্চে শেয়ার হয়েছে।
ভিডিওটির ৫৫ সেকেন্ডের মাথায় সঞ্জনা গলরানি নামটি দেখা যাচ্ছে, যার পাশে একটি পৃথিবীর প্রতীক বুঝিয়ে দেয়, এটি একটি প্রকাশ্য ফেসবুক পোস্ট।
খোঁজখবর করে আমরা দেখলাম এই সঞ্জনা গলরানি একটি যাচাই-করা ফেসবুক পোস্ট, যার অনুসরণকারীর সংখ্যা ৩০ লক্ষেরও বেশি। পেজটির ভূমিকায় লেখাঃ "আমি সচেতনতা বাড়াতে রকমারি ভিডিও এবং বানানো চিত্রনাট্যভিত্তিক ছবি শেয়ার করে থাকি।"
সঞ্জনা নিজেকে অভিনেত্রী বলে পরিচয় দেন। তাঁর সম্পর্কে যেটুকু পরিচয় মেলে, তা হলো, তিনি বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা।
সাজানো অপহরণ নাটকের ভিডিওটি এখন মুছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই পেজটিতে আপলোড হওয়া অন্যান্য ভিডিও থেকে স্পষ্ট, প্রায়শই এ ধরনের সাজানো চিত্রনাট্যভিত্তিক ভিডিওকে সিসিটিভি দৃশ্যের বাস্তবতায় মণ্ডিত করে বাস্তব অপরাধ হিসাবে সেগুলিকে চালানো হয়। ভিডিও ক্লিপগুলির সাব-টাইটেল ব্যবহার, তির-চিহ্নের প্রয়োগ এবং গোল করে দাগিয়ে দেওয়ার শৈলী একই রকম।
ভিডিওগুলি:
বুম পেজটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং তাদের উত্তর পেলেই এই প্রতিবেদনটি সংস্করণ করা হবে।
গত অক্টোবর মাসে বুম এ ধরনের একটি ভিডিওর পর্দাফাঁস করেছিল, যাতে একটি রেস্তোরাঁয় এক ব্যক্তির দ্বারা এক মহিলার পানীয়ে কোনও পদার্থ মেশানোর অপকর্ম সেখানকার এক সতর্ক কর্মীর ধরে ফেলার দৃশ্য ছিল। এই ভিডিওটি ভাইরাল করে দাবি করা হয়েছিল যে, দুষ্কর্মকারী ব্যক্তিটি নাকি একজন মুসলমান। বুম এও দেখেছিল যে ভিডিওটির নির্মাতা হামসা নন্দিনি নামের যাচাই-করা ফেসবুক পেজ-এর মালিক। এই পেজটির অনুসরণকারীর সংখ্যা ২৯ লক্ষ এবং এটিও সিসিটিভি ফুটেজ বলে দাবি করে বেশ কিছু সাজানো ভিডিও নিয়মিত শেয়ার করে থাকে।
এ বিষয়ে আমাদের তথ্য-যাচাই প্রতিবেদন পড়তে পারেন এখানে।
আরও পড়ুন: তাইল্যান্ডের বৌদ্ধ ভিক্ষুকের ছবি ভুয়ো দাবিতে ছড়াল নেপালের বলে