পাকিস্তানি হিন্দু শরণার্থীদের সঙ্গে দেখা করছেন মোদী? একটি তথ্য যাচাই
বুম দেখে আশির দশকে গুজরাতের গ্রামে নরেন্দ্র মোদীর ছবিকে রাজস্থানের বারমেরে হিন্দু শরণার্থীদের ক্যাম্পে তোলা বলা হচ্ছে।
![পাকিস্তানি হিন্দু শরণার্থীদের সঙ্গে দেখা করছেন মোদী? একটি তথ্য যাচাই পাকিস্তানি হিন্দু শরণার্থীদের সঙ্গে দেখা করছেন মোদী? একটি তথ্য যাচাই](https://bangla.boomlive.in/h-upload/2021/03/21/944728-944632-modi-012.webp)
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি কালো-সাদা ছবিতে তাঁকে কিছু মানুষের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ছবিটি এই বলে শেয়ার করা হচ্ছে যে, রাজস্থানের বারমের-এর একটি শিবিরে উনি পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু শরণার্থীদের সঙ্গে দেখা করছেন।
বুম দেখে, নরেন্দ্র মোদীর ওয়েবসাইট নরেন্দ্রমোদী.ইন-এও ওই একই ছবি শেয়ার করে বলা হয়েছে যে, সেটি গুজরাতে তোলা হয়। ওই ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়েছে যে, মোদীকে দক্ষিণ ও মধ্য গুজরাতের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং আশির দশকে সারা গুজরাত জুড়ে তাঁর ঘোরাঘুরি অনেক বেড়ে যায়। সেই সময় প্রতিটি তালুক ও প্রায় প্রতিটি গ্রাম ঘুরে দেখার সুযোগ পান মোদী।
অভিনেতা ও ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া-র (এফটিআইআই) প্রাক্তন সভাপতি গজেন্দ্র চৌহান ছবিটি টুইট করেন। সঙ্গে দেওয়া হিন্দি ক্যাপশনে বলা হয়, "এটি ৩১ বছরের পুরনো একটি দুষ্প্রাপ্য ছবি। বারমের-এ্র একটি শিবিরে নরেন্দ্র মোদী পাকিস্তান থেকে বাস্তুচ্যুত হিন্দুদের সঙ্গে দেখা করেন। সেই সময় তিনি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী বা ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। প্রয়োজনের সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো মোদীর অভ্যাস।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: ये 31 वर्ष पुरानी दुर्लभ तस्वीर है, जब नरेंद्र मोदी बाड़मेर में पाकिस्तान से विस्थापित हिंदुओं से मिलने उनके कैम्प में पहुँचे थे. तब वो ना गुजरात के मुख्यमंत्री थे और ना ही देश के प्रधानमंत्री थे. दुख, मुशीबत मे लोगों के साथ खड़ा होना मोदी जी की फितरत में शामिल है।)
একই দাবি সমেত ছবিটি একাধিক ফেসবুক প্রোফাইল থেকে শেয়ার করা হয়েছে।
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
![](https://bangla.boomlive.in/h-upload/2021/03/21/944729-944630-modi.webp)
তথ্য যাচাই
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে আমরা প্রধানমন্ত্রীর ওয়েবসাইট 'নরেন্দ্রমোদী.ইন'-এ একটি ছবির গ্যালারি দেখতে পাই। সেখানে এই ছবিটিও ছিল। সেটির শিরোনামে বলা হয়, 'খুব ছোট বয়স থেকেই দেশ গঠনের কাজে নিমজ্জিত ছিলেন।'
![](https://bangla.boomlive.in/h-upload/2021/03/21/944730-944631-namo.webp)
ছবিটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে লেখা হয়, "গুজরাতের একটি গ্রামে নরেন্দ্র মোদী।' 'বিঅন্ড এমারজেন্সি' (জরুরি অবস্থার পরে), এই উপশিরোনামে নীচে ছবিটি শেয়ার করা হয়।
ওয়েবসাইটটিতে বলা হয়, "নবনির্মাণ আন্দোলনের মতো, মানুষের জয়ের মধ্যে দিয়ে জরুরি অবস্থার অবসান হয়। ১৯৭৭-এর নির্বাচনে ইন্দিরা গাঁধী পরাভুত হন। জনগণ পরিবর্তনের জন্য ভোট দিয়েছিলেন। নতুন জনতা পার্টি সরকারে অটলজি আর আদবানিজির মত জনসঙ্ঘের নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ক্যাবিনেট মন্ত্রী হন। একই সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীকে। 'সমভাগ প্রচারক' বা আঞ্চলিক প্রচারক করা হয়। আগের বছরগুলিতে তাঁর কাজ আর সাংগঠনিক দক্ষতার পুরস্কার হিসেবে তাঁকে ওই পদ দেওয়া হয়। দক্ষিণ ও মধ্য গুজরাতের দায়িত্ব পান তিনি।'
ওই ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়, "১৯৮০-র শুরুর দিকে, সারা গুজরাতে জুড়ে তাঁর ঘোরা অনেক বেড়ে যায়। এর ফলে প্রতিটি তালুক ও প্রায় প্রতিটি গ্রাম ঘুরে দেখার সুযোগ পান তিনি। একজন সংগঠক ও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ওই অভিজ্ঞতা তাঁর কাজে লাগে।'
এই বিবরণ নিশ্চিত করে যে, ছবিটি ১৯৮০-র দশকে কোনও এক সময় তোলা হয়।
ওয়েবসাইটটিতে নরেন্দ্র মোদীর আরও বেশ কিছু ছবি আছে। কিন্তু কোথাও বলা হয়নি যে উনি রাজস্থানের বারমের সফরে গিয়েছিলেন।
মোদী বারমের-এ হিন্দু শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছিলেন, এমন কোনও সংবাদ প্রতিবেদন আমরা ইন্টারনেটে দেখতে পাইনি। ওই রকম কোনও রিপোর্ট না পেলেও, ২০১৪-য় 'দ্য হিন্দু'তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, 'পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু শরণার্থীদের সমান অধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মোদী।'
সেই সময় মোদী ছিলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। এবং বারমের-এ আয়োজিত এক জনসভায় উনি বলেছিলেন যে, পাকিস্তান থেকে চলে আসা হিন্দু শরণার্থীদের প্রতি অন্য যে কোনও ভারতীয়র মতই আচরণ করা হবে।
আরও পড়ুন: শিবলিঙ্গের উপর প্রস্রাব করছে এক কিশোর, ভুয়ো দাবিতে পুরানো ভিডিও ভাইরাল