বাংলাদেশের মাদ্রাসায় নাবালককে মারধর করার দৃশ্য ছড়াল ভারতের বলে
বুম দেখে ভিডিওটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার, সেখানে এক মাদ্রাসা শিক্ষক এক নাবালক পড়ুয়াকে বেধরক মারধর করে।
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় এক মাদ্রাসা (madrasa) শিক্ষকের হাতে এক নাবালক ছাত্রের নির্মম নিগ্রহের (brutally thrashed) একটি অস্বস্তিকর ভিডিওকে (video) উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) ঘটনার দৃশ্য বলে চালানো হচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে পানীয় জল চাইতে এক মুসলিম কিশোরের (muslim boy) একটি মন্দিরে ঢুকে পড়ে নিগৃহীত হওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই ভিডিও দৃশ্যটি অন্য মাত্রা পেয়েছে। ঘটনাটির ভিডিও ক্যামেরায় তুলে রাখা হয়েছিল এবং অভিযুক্ত নিগ্রহকারী সেই দৃশ্য সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়েও দেয়। ওই ভিডিওটিতে দেখা যায়, নিগ্রহকারী বার বার কিশোরের গোপনাঙ্গে আঘাত করছে, উপর্যুপরি ঘুষি ও লাথি মারছে। গাজিয়াবাদ পুলিশ ভিডিওটি মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর অভিযুক্ত দুজনকেই গ্রেফতার করেছে।
নতুন ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, এক মাদ্রাসা শিক্ষক এক ছাত্রকে টানতে-টানতে মাদ্রাসার ভিতর নিয়ে এসে প্রচণ্ড মারধর করছে এবং ছেলেটি যন্ত্রণায় চিৎকার করছে। বুম ওই অস্বস্তিকর দৃশ্যটি প্রতিবেদনের অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরও পড়ুন: না, এগুলি গাজিয়াবাদে নির্মমভাবে নিগৃহীত বালকের ছবি নয়
বেশ কয়েকজন টুইটার ব্যবহারকারী দৃশ্যটি ব্যবহার করেছে এবং চট্টগ্রামের মাদ্রাসার ঘটনাটিকে গাজিয়াবাদের মন্দিরে ঢুকে পড়া ১৪ বছরের তৃষ্ণার্ত কিশোরের ঘটনার সঙ্গে জুড়ে দিয়েছে। জনৈক নেটিজেন তো মন্তব্য করে বসেছে, "জল খেতে নয়, ভিতরে কোথায় কী আছে তার খোঁজখবর নিতেই মুসলিম কিশোরটি মন্দিরে ঢুকেছিল। যদি সত্যিই ওর জলতেষ্টা পেত, তাহলে তো মন্দিরের বাইরের পুকুর থেকেই তা খেতে পারত। যে জামাতিরা রিঙ্কু খান্নার খুন নিয়ে নীরব থেকেছে, তারা এখন এই কিশোরের নিগ্রহ নিয়ে মড়াকান্না কাঁদছে। আর সেটা করছে এমন সময়, যখন মাদ্রাসার ছাত্রদের ওপর তাদের শিক্ষকরা এর চেয়ে অনেক বেশি নির্যাতন চালায়।"
(মূল হিন্দিতে লেখা: आसिफ पानी पीने नही बल्कि मन्दिर में रेकी करने गया था। क्योंकि पानी ही पीना होता तो टंकी बाहर लगी है पी सकता था। आज तक रिंकू शर्मा की हत्या पर मुंह में फेविकोल जमाए बैठी जमात रेकी करने वाले को लेकर रो रही है। जबकि उससे ज्यादा ठुकाई तो (सभी प्रकार की) इनकी मदरसों में हो जाती है)
এই ভিডিওটি ক্রিয়াটলি মিডিয়া নামে এক সংস্থাও টুইট করেছে, যে সংস্থার অতীতের অনেক পোস্টেরই তথ্য যাচাই হয়েছে ভুয়ো তথ্য ছড়ানোর জন্য। টুইটটির ক্যাপশন লেখা হয়েছে: কেন উত্তরপ্রদেশ সরকার রাজ্যের সব মাদ্রাসায় সিসিটিভি বসাতে চায়।
ভিডিওটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: শিবলিঙ্গের উপর প্রস্রাব করছে এক কিশোর, ভুয়ো দাবিতে পুরানো ভিডিও ভাইরাল
চট্টগ্রামের হাটহাজারির ভিডিও
বুম এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে যে ভিড়িওটি ভারতের কোথাও তোলা হয়নি। ভিডিও-র শুরুতেই চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় শোনা যাচ্ছে — "এই ভিডিও গইরজুম মারেদ্দে", যার মানে হল— আমি এই পিটুনি দেওয়ার ভিডিওটা রেকর্ড করব। বাংলাদেশে বুম-এর তথ্য যাচাইকারী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা দেখেছি, তাঁরা এটিকে চট্টগ্রামে তোলা ভিডিও বলে সনাক্ত করেছেন।
২০২১ সালের ৯ মার্চ চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদ্রাসার এক শিক্ষক মহম্মদ ইয়াহিয়া যখন ৮ বছরের এক নাবালক পড়ুয়াকে প্রচণ্ড মারধর করছিল, তখনই ভিডিওটি তোলা হয়। বাংলাদেশের এক সংবাদ-প্রতিবেদন অনুসারে "সোশাল মিডিয়ায় ওই ভিডিও মারফত মাদ্রাসায় শিশু-নিগ্রহের ঘটনা জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর আল মাকরাজুল কোরানিক ইসলামিক অ্যাকাডেমির শিক্ষক মহম্মদ ইয়াহিয়াকে পুলিশ বুধবার গ্রেফতার করে।"
আরও পড়ুন এখানে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, "ইয়াহিয়া হাটহাজারির কোনাক কমিউনিটি সেন্টারে অবস্থিত ওই মাদ্রাসার আবাসিক শিশুটিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই মারধর শুরু করে। ভিডিওটি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে ওই আবাসিক মাদ্রাসা থেকে কোনওক্রমে উদ্ধার করে। মঙ্গলবার শিশুটির জন্মদিন ছিল এবং তার মা তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি চলে যাওয়ার সময় শিশুটি যখন মায়ের পিছন-পিছন দৌড়াচ্ছিল, তখন শিক্ষক ইয়াহিয়া প্রচণ্ড রেগে গিয়ে তাকে ধরে নিয়ে মাদ্রাসার একটি ঘরে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে চাবুক দিয়ে বেধড়ক মারতে থাকে। কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শী ঘটনাটা ক্যামেরায় তুলে রাখেন এবং প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন।"
অতিরিক্ত রিপোর্টিং বুম বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: ২০১৬ সালে বিজেপি কর্মীদের হাতাহাতির ছবি ছড়াল কফি হাউসে তাণ্ডব বলে