শিবলিঙ্গের উপর প্রস্রাব করছে এক কিশোর, ভুয়ো দাবিতে পুরানো ভিডিও ভাইরাল
বুম আনাকাপাল্লের পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানেছে ২০১৮ সালের ঘটনাটির অভিযুক্ত দুই নাবালক মুসলমান নয় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী।
মন্দিরের (temple) ভিতরে এক কিশোরের প্রস্রাব (urinating) করার তিন বছরের পুরানো আপত্তিকর ভিডিও নতুন করে শেয়ার করা হল। সঙ্গে মিথ্যে ক্যাপশনে দাবি করা হয়েছে যে, ভিডিওতে যাদের দেখা যাচ্ছে তারা মুসলিম (muslims)।
বুম অনুসন্ধান করে দেখে যে ঘটনাটি অন্ধ্রপ্রদেশের আনাকাপাল্লেতে ২০১৮ সালে ঘটে এবং যে দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তারা মুসলিম ধর্মাবলম্বী নয়। আনাকাপাল্লে পুলিশ জানিয়েছে অভিযুক্ত দুজনই নাবালক এবং তারা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের।
অভিযুক্ত দু'জন নাবালক বলে বুম তাদের নাম গোপন রাখল।
উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে মন্দিরে জল খেতে ঢোকার জন্য ১৪ বছরের এক মুসলমান কিশোরকে মারধর করা হয়। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই দক্ষিণপন্থী টুইটার ব্যবহারকারীরা এই ভিডিওটি শেয়ার করেছে। গাজিয়াবাদ পুলিশ শৃঙ্গি নন্দন যাদব ও শিবানন্দ নামে দুই ব্যক্তিকে ওই ঘটনায় জড়িত থাকায় গ্রেফতার করেছে।
ওই কিশোরকে নৃশংস ভাবে মারার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত ও নিগৃহীতের সমর্থনে টুইটারে বিভিন্ন রকম হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডিং হতে আরম্ভ করে। এ রকমই একটি হ্যাশট্যাগ হল আমি 'শৃঙ্গি যাদবকে সমর্থন করি।'
ইতিমধ্যে এক কিশোরের মন্দিরের মধ্যে ঢুকে মূর্তির গায়ে প্রস্রাব করার ঘটনার তিন বছরের পুরনো ভিডিও নতুন করে শেয়ার করা হয় এবং সেটি ২০২১ সালে ১৬ মার্চ গাজিয়াবাদের ঘটনার অভিযুক্তকে সমর্থন করে হ্যাশট্যাগ শেয়ার করা হয়।
প্রবীণ চৌহান নামে এক ব্যক্তি টুইটারে ভিডিওটি শেয়ার করেছেন এবং সঙ্গে ক্যাপশনে লিখেছেন, "দেখুন এরা আসলে কেন মন্দিরে যায়। ওরা মন্দিরে জল খেতে যায় না বরং আমাদের পবিত্র শিবলিঙ্গের উপর প্রস্রাব করতে যায়।"
রবি রাজগুরু নামে অন্য এক ব্যক্তি টুইটারে ভিডিওটি হিন্দি ক্যাপশনের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। ওই ক্যাপশনের অনুবাদ, "আসলে ওদের দোষ নয়, দোষ আমাদের। আমরাই ভীতু, আমাদের ধর্ম রক্ষা করার জন্য এই সব জিহাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে সামিল হওয়াটা বেঠিক ভেবে আমাদের উপর হওয়া এই সব ধর্মীয় অত্যাচার আমরা চুপচাপ সহ্য করি। অন্যখায় আমরা 'সংঘী' ও 'দেসি' সাব্যস্ত হব।"
(হিন্দিতে লেখা মূল লেখা: गुन्हेगार यह लोग नही हम है हम जो कायरो की भांति धार्मिक अत्याचार इसलिए सहन करते है क्योंकि हमें लगता है धर्म की रक्षा करना या इन जिहादियो के खिलाफ खड़ा होना "UNCOOL" है, इस से हम देसी और संघी हो जाएंगे वो लोग युही हमारे धर्म का अपमान करके डरी हुई कौम बनके मजे करेंगे।)
শেফালি বৈদ্য এই বিষয়ে টুইট করেছেন এবং লিখেছেন, "এক মুসলিম কিশোর মন্দিরে ঢুকে শিবলিঙ্গের উপর প্রস্রাব করছে — এই বিরক্তিকর ভিডিওটি দেখেছি। এই অবমাননায় যদি কোনও হিন্দু খুব রেগে গিয়ে ছেলেটিকে থাপ্পড় দেয় তবে…। মিডিয়া ওই ছেলেগুলিকে নায়ক বানিয়ে দেবে এবং তাদের অপরাধের স্বপক্ষে যুক্তি দেবে। শুধু হিন্দুরা নীরবে কষ্ট সহ্য করবে।"
ভিডিওটি ফেসবুকেও শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: মহুয়ার মিথ্যে দাবি আদিত্যনাথ বলেছেন—'টিএমসি গুন্ডাদের' মেরে ফেলবেন
তথ্য যাচাই
ভিডিওটিতে যে সব কথা শোনা গেছে, তা তেলুগু ভাষায় বলা। ভাইরাল হওয়া ভিডিওর উপর আমরা 'টপ মোস্ট মিডিয়া' লেখা জলছাপ দেখতে পাই। এই সূত্র ধরে আমরা কি-ওয়ার্ড সার্চ করি এবং টপ মোস্ট মিডিয়া নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল দেখতে পাই। এদের ৩৩৭ জন সাবস্ক্রাইবার রয়েছে এবং ওই চ্যানেলে প্রচুর তেলুগু ভিডিও দেখা যায়।
ওই চ্যানেলে সার্চ করে আমরা এই ভিডিওটির একটি বড় সংস্করণ দেখতে পাই। ওই ভিডিওটি ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল আপলোড করা হয়। ভিডিওটির শিরোনামে বলা হয়, "জঘন্য!!! মন্দিরে ভগবান শিবের উপর কিশোর প্রস্রাব করছে। টপ মোস্ট মিডিয়া।"
ভিডিওটি থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, সেটি তিন বছরের পুরনো।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আমরা ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল এমআইসিটিভিতে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাই। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ঘটনাটি অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের আনাকাপাল্লে তে ঘটে।
ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ঘটনাটি সম্পর্কে আরও বিশদে জানার জন্য বুম আনাকাপাল্লের গ্রামীণ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওখানকার এক পুলিশ অফিসার বুমকে জানান যে, ঘটনাটি ২০১৮ সালের। তিনি আরও জানান যে, ভিডিওতে যে নাবালকদের দেখা যাচ্ছে, তারা মুসলিম নয়।
বুমকে ওই অফিসার বলেন, "ওরা মোটেই মুসলিম নয়। অভিযুক্তরা খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের। তারা নাবালক। ২০১৮ সালে ঘটনাটি রিপোর্ট করা হয় এবং দুজনকেই জুভেনাইল জেলে পাঠানো হয়। তাদের জরিমানাও করা হয়। পরে তাদের সুব্যবহার করতে বলা হয়। তার পর থেকে আর কোনও সমস্যা হয়নি।"
আরও পড়ুন: না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আঘাত মেকি নয়; ভাইরাল ছবিটি ওল্টানো