না, জেএনইউ-তে রাম নবমীর সংঘর্ষে আহত আইসা সদস্যাদের আঘাত সাজানো নয়
ভাইরাল ছবিতে যে ছাত্রীদের দেখা যাচ্ছে বুম তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ছবিগুলি যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছে যে ভাইরাল দাবি মিথ্যে।
দু'টি ছবির একটি কোলাজে, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (JNU) ক্যাম্পাসে, রাম নবমীর (Ram Navami) দিন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ-এর (ABVP) সঙ্গে সংঘর্ষের পর, অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (AISA) বা আইসা সদস্যদের একে অপরকে সান্ত্বনা দিতে দেখা যাচ্ছে। সেই ছবি এই মিধ্যে দাবি সমেত ভাইরাল হয়েছে যে, আইসার ছাত্র-ছাত্রীরা যে আঘাত দেখাচ্ছেন, সেগুলি সাজানো (fake injury)।
রবিবার, রামনবমির দিন, হোস্টেলের মেসে মাংস পরিবেশনকে কেন্দ্র করে, সংঘর্ষ বাধে। তার ফলে, জেএনইউ-র বেশ কিছু পড়ুয়া আহত হন। বামপন্থী সংগঠনগুলির ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ, কাবেরী হোস্টেলে আমিষ খাবার দেওয়ায় বাধা দেয় এবিভিপি। এবং যাঁরা তাঁদের এই আচরণের বিরোধিতা করেন, তাঁদের মারধোর করা হয়। অন্য দিকে, এবিভিপি'র অভিযোগ, এআইএসএ'র সদস্যরা ১০ এপ্রিল, ২০২২-এ অনুষ্ঠিত যজ্ঞ ব্যহত করার চেষ্টা করে।
ওই কোলাজের বাম দিকের ছবিটিতে, সাদা স্লিভলেস টপ-পরা এক মহিলার কপাল থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে দেখা যাচ্ছে। এবং তাঁকে ধরে আছেন সাদা-কাজ করা নীল কুর্তি পরিহিত এক ছাত্রী। ডান দিকের ছবিতে ওই নীল কুর্তি-পরা মেয়েটিকে শুয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এবং স্লিভলেস টপ-পরা মহিলা, যাঁর শরীরে কোনও আঘাত দেখা যাচ্ছে না, তিনি ওই কুর্তি-পরা মহিলার দেখভাল করছেন।
এই ভাবে পরপর সাজানো ছবির কোলাজটি দক্ষিণপন্থী সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা এই বলে শেয়ার করছেন যে, ওই পড়ুয়ারা নিজেদের আঘাত সাজিয়ে দেখিয়েছেন।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভাইরাল দাবিটি মিথ্যে। এবং দক্ষিণপন্থী সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা যে ভাবে দু'টিকে আগে পরে বসিয়ে শেয়ার করছেন, বাস্তবে ছবিগুলি বিপরীত ক্রমান্বয়ে তোলা হয়েছিল।
সাদা স্লিভলেস টপ-পরা মেয়েটির নাম আখতারিস্তা আনসারি (Akhtarista Ansari)। আর নীল কুর্তি-পরা ছাত্রীটি হলেন মধুরিমা কুণ্ডু (Madhurima Kundu)। দু'জনই জেএনইউ-এর আইসা (AISA) সংগঠনের সদস্যা।
আখতারিয়া আনসারি বুমকে বলেন, রবিবার সন্ধ্যে ৮টা নাগাদ, কাবেরী হোস্টেলে গোলমাল বাঁধে। তিনি অভিযোগ করেন যে, এবিভিপি'র একটা বড় দল, পড়ুয়াদের 'আক্রমণ' ও ছাত্রীদের যৌন হেনস্থা করে। বুম নিজস্ব উপায়ে যৌন হেনস্থার অভিযোগটি যাচাই করে দেখতে পারেনি। আনসারি বলেন, সেই সময় মধুরিমা কুণ্ডু জ্ঞান হরান, এবং তাঁকে সুস্থ করে তোলার জন্য তিনি মধুরিমাকে খাওয়ার জল দেন।
তাঁর অভিযোগ, এরপর এবিভিপির সদস্যরা বাইরে বেরিয়ে গিয়ে পাথর আর মাটির টব ছুঁড়তে থাকেন। আনসারি দাবি করেন যে, হোস্টেলের গেটের মধ্যে থাকাকালীনই তিনি কপালে পাথরের আঘাত পান। আনসারি পরে টুইট করে জানান যে, অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এ তাঁর চিকিৎসা হয়।
ভাইরাল পোস্টের দাবিটি, মধুরিমা কুণ্ডু ফেসবুকে খণ্ডন করেন।
ভাইরাল ফটোগুলি যে ক্রমে সাজানো হয়েছে এক্সিফ তথ্য উল্টো ক্রম দেখায়
অন্য এক আইসা সদস্যের তোলা দু'টি ছবিই বুম যাচাই করার সুযোগ পায়। ওই ছাত্রটি ছবিগুলির স্ক্রিনশট পাঠান। তাতে সেগুলির বিস্তারিত তথ্য দেখা যায়। ছবিগুলি তোলার সময়টা দেখা যায় ওই স্ক্রিনশটে।
যে ছবিটিতে কুণ্ডুকে টেবিলে শোয়ানো অবস্থায় আনসারিকে শুশ্রুষা দিতে দেখা যাচ্ছে, সেটি রবিবার, রাত ৮ টা ১৫ মিনিটে, কাবেরী হোস্টেলে তোলা হয়। সবুজ রঙে 'কাবেরী' লেখা একটি বোর্ডও দেখা যায় ছবিটিতে।
অন্য দিকে, যে ছবিতে আনসারির মাথা থেকে রক্ত ঝরতে দেখা যাচ্ছে, সেটি তোলা হয় ৮ টা ২১ মিনিটে, অর্থাৎ ৬ মিনিট পরে।
ছবিগুলি তোলার সময়কাল সমেত সেগুলির একটি কোলাজ নীচে দেওয়া হল।