পঞ্জশিরে তালিবান রুখতে নাবালিকা বলে জি হিন্দুস্তান দেখাল পুরনো ভিডিও
বুম দেখে মিশিনগান থেকে গুলি চালানো নাবালিকার ভিডিওটি অন্ততঃ এক বছর আগের এবং ২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে অনলাইনে আছে।
হিন্দি সংবাদ চ্যানেল জি হিন্দুস্তান (ZEE Hindustan) একটি পুরনো ভিডিও সম্প্রচার করছে, যাতে একটি বাচ্চা মেয়ে (minor girl) মেশিনগান থেকে গুলি ছুঁড়ছে এবং ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসছে। চ্যানেলটি দাবি করছে, এটি সম্প্রতি আফগানিস্তানের পঞ্জশিরে তালিবান বাহিনীর বিরুদ্ধে ঘটতে থাকা প্রতিরোধের লড়াইয়ের দৃশ্য।
সরাসরি সম্প্রচারিত ওই ভিডিও দেখিয়ে দাবি করা হচ্ছে, আফগানিস্তানের একমাত্র প্রদেশ যেখানে তালিবান এখনও দখল নিতে পারেনি, সেখানে সেই দখল ঠেকানোর লড়াইয়ে এমনকী বাচ্চারাও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে।
১৫ অগস্ট তালিবান কাবুলও দখল করে নেওয়ার পর বেশ কিছু তালিবান-বিরোধী যোদ্ধা এবং আফগান সেনাবাহিনীর অবশিষ্টাংশ পঞ্জশির উপত্যকায় আহমেদ মাসুদ-এর নেতৃত্বে জড়ো হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
জি-হিন্দুস্তান এই ভিডিওটি একমাত্র তারাই জোগাড় করতে পেরেছে দাবি করে জানিয়েছে, "পঞ্জশিরে নিরীহ শিশুরা পর্যন্ত তালিবানের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে এবং তালিবানকে মুখের মতো জবাব দিতে সচেষ্ট হয়েছে।" ক্যাপশনে বাচ্চা মেয়েটিকে "পঞ্জশিরের মাসুম" আখ্যা দিয়ে তারা ভিডিওটি টুইটে সম্প্রচার করছে।
নিচে আপনারা সম্প্রচারিত পুরো ভিডিওটি দেখতে পাবেন।
এই একই ভিডিও ফারহান জেফ্রি তাঁর টুইটার হ্যান্ডেল @nstsecjeff থেকেও প্রচার করেছেন। জেফ্রি ব্রিটেনের লোক, নিজেকে তিনি সন্ত্রাসবাদী ঘটনার প্রতিবেদক ও বিশ্লেষক বলে পরিচয় দেন। ভিডিওটি টুইট করে তিনি লিখেছেন, "আফগানিস্তান এবং, অতএব তালিবানকেও যে সব সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে, তার অন্যতম হল আফগান সমাজের সশস্ত্রীকরণ। সাধারণ মানুষকে অস্ত্রসজ্জিত করে তোলার অনিবার্য পরিণতিই হল গৃহযুদ্ধ এবং পরিস্থিতি বিচারে আফগানিস্তানে সেই সম্ভাবনা সমূহ।"
জেফ্রি এটা খোলসা করেননি যে ভিডিওটি পুরনো, তবে পরে তিনি জানিয়েছেন— "লোকেরা যাতে ভুল ক্যাপশন দিয়ে এটি সম্প্রচার করতে না পারে, তাই আমার আগেভাগেই এটির ক্যাপশন দেওয়া উচিত: আফ-পাক এলাকার কোনও স্থানে একটি ছোট্ট মেয়ের মেশিনগান হাতে নিয়ে খেলা করার পুরনো একটি ভিডিও। এর সঙ্গে কোনও গোষ্ঠী বা জমানার কোনও সম্পর্ক নেই, কেবলমাত্র আফ-পাক অঞ্চলের কোনও একটি জায়গার ছবি, যা আফগান টিজি চ্যানেলের কাছ থেকে পাওয়া।"
এই অগস্ট মাসে ভিডিওটি ফেসবুকেও ভাইরাল হয়, যাতে দাবি করা হয়—"মেশিনগান হাতে তালিবানি বাচ্চা মেয়ের ভাইরাল হওয়া ছবি"—
আরও পড়ুন: সিদ্ধার্থ শুক্লার প্রয়াণ: নীরোগ তরুণদেরও হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকি এখন
তথ্য যাচাই
বুম দেখলো, জি-হিন্দুস্তান চ্যানেল যেমনটা দাবি করেছে, ভিডিওটি তেমন সাম্প্রতিক ঘটমান কিছু নয়, অন্তত এক বছরের পুরনো এবং ২০২০ সালের জানুয়ারিতেই এটি অনলাইনে আপলোড হয়ে গিয়েছিলl ভিডিওর একটি মূল ফ্রেম বের করে নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে আমরা দেখেছি, ফেসবুকে ২০২০ সালের জানুয়ারিতেই এটি আপলোড করা হয়েছিল, এই বর্ণনা দিয়ে—'মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দেবদূতের মতো শিশুরা; আত্মরক্ষাই যখন প্রথম দাবি...'
ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে।
২৮ জানিয়ারি ২০২০ তারিখেও আপলোড হওয়া ওই একই ভিডিও আমাদের নজরে আসে।
আমরা টুইটারে দেওয়া উত্তরগুলিতে খেয়াল করি বালুচ ভাষায় একটা গান ভিডিওতে বাজানো হচ্ছে, এবং 'এক বালুচি বালিকা ও মেশিনগান', এই সূত্র দিয়ে ইউ-টিউবেও ওই ভিডিওটির দেখা পাই।
আমরা দেখি, ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি 'বালুচের কন্যা' নামে একটি চ্যানেল থেকে ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে।
ভিডিওটি ঠিক কোথায় তোলা হয়েছে, বুম স্বাধীনভাবে সেটি যাচাই করে উঠতে পারেনি, তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছে যে, এটি মোটেই আফগানিস্তানের পঞ্জশির উপত্যকায় ঘটমান বর্তমানের চিত্র নয় বরং যথেষ্ট পুরনো।
আফগানিস্তান তালিবানের দ্বারা পুনর্দখল হওয়ার পর থেকেই তা নিয়ে রকমারি ভুল তথ্য ও ভুয়ো খবর এবং ছবির পর্দাফাঁস করে চলেছে বুম। আমাদের এই সব তথ্য-যাচাই নিচের টুইটার থ্রেড-এ আপনারা দেখে নিতে পারেন।