ইউপিএসসি সংরক্ষণ-বিরোধী মোচড় দিয়ে ভাইরাল হল বাংলাদেশি সমাজকর্মীর ছবি
বুম দেখে ছবির ব্যক্তি লখনউয়ের বাসিন্দা রাজেশ তিওয়ারি নন, তিনি বাংলাদেশের এক প্রভাবশালী সোশাল মিডিয়া প্রচারক সৈয়দ রিমন।
এক ব্যক্তির চোখে জল এমন একটি ছবি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে যে তিনি প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষা ইউপিএসসির (UPSC) পরীক্ষার্থী। সংরক্ষণ, এবং অসংরক্ষিত আসনে বেশি কাট-অফের কারণে তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফেসবুকের পোস্টে ভুয়ো দাবি সহ ওই ব্যক্তিকে লখনউ-এর বাসিন্দা রাজেশ তিওয়ারি (Rajesh Tiwari) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বুম এই ব্যক্তিকে সৈয়দ রিমন (Sayeed Rimon) হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছে। তিনি বাংলাদেশের এক সোশাল মিডিয়ার প্রভাবশালী প্রচারক। নিজের ছবি ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে জনচেতনামূলক প্রচার চালান।
এই ছবিটি যে ক্যাপশনের সঙ্গে ভাইরাল হয়েছে, তাতে লেখা হয়েছে: "নিচের ছবিটি লখনউ-এর বাসিন্দা ২৯ বছর বয়সী রাজেশ তিওয়ারির। সাত জনের পরিবারে তিনি একাই উপার্জন করেন। তিনি কাঁদছেন, কারণ তিনি আইএএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ বছরের ইউপিএসসি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় তিনি ৬৪৩ নম্বর পেয়েছেন। কিন্তু তাতেও তিনি ফেল করেছেন, কারণ এই বছর অসংরক্ষিত আসনে নূন্যতম পাশ নম্বর নেমেছিল ৬৮৯। তফশিলি জাতি ও জনজাতিভুক্ত প্রার্থীদের জন্য এই নূন্যতম পাশ নম্বর ছিল ৬০১। অর্থাৎ, এই নিয়ম অনুসারে, এই বছর যাঁরা ৬০১ পেয়েছেন, তাঁরাই ভবিষ্যতে আমাদের আমলা হবেন। রাজেশ এবং তাঁর মতো আরও অনেক প্রার্থীর একমাত্র অপরাধ হল, তাঁরা #সাধারণ ক্যাটেগরিতে জন্মেছেন। অতএব, আর্থিক সংকট থাকলেও তাঁদের উচ্চবর্ণের প্রার্থী হিসেবেই চিহ্নিত করা হবে...।"
টুইটারেও অনেকে একই ছবি একই রকম বয়ানের সঙ্গে শেয়ার করেছেন।
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গ সরকার করোনা মোকাবিলায় রাষ্ট্রসংঘের শান্তি পুরস্কার পেল? একটি তথ্য-যাচাই
তথ্য যাচাই
বুম এই ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, এবং দেখে যে, ছবিটি ২০১৯ সালের। বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল একুশে টিভি-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছিল। এই প্রতিবেদনে ছবির ব্যক্তিকে সৈয়দ রিমন হিসেবে উল্লেখ করা হয়, এবং জানানো হয় যে, বিভিন্ন পরিস্থিতি সম্পর্কে নিজের ছবি ব্যবহার করে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার কাজ করেন তিনি।
এই প্রতিবেদন অনুসারে, সৈয়দ রিমন পেশায় বস্ত্রবয়ন ইঞ্জিনিয়র। তিনি বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় সচেতনতা সংক্রান্ত প্রচার চালান। পথদুর্ঘটনা, পকেটমারি, বেকারত্ব ইত্যাদি বিষয়ে নিজের ছবি ব্যবহার করেই প্রচার করেন রিমন। সোশাল মিডিয়ায় জনস্বার্থে এই প্রচার চালান তিনি।
ঢাকা ট্রিবিউন-ও ২০১৭ সালে রিমনের এই ব্যতিক্রমী প্রচার সম্বন্ধে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এর পর কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা রিমনের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাই। তাতে দেখা যায় যে, তিনি ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর এই ভাইরাল হওয়া ছবিটি আপলোড করেছিলেন। দেশে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব সংক্রান্ত একটি পোস্টে এই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছিল।
২ জুন একটি ফেসবুক পোস্টে রিমন তাঁর ছবিসমেত ভাইরাল হওয়া পোস্টটিকে ভুয়ো বলে জানিয়ে দেন। সেখানে তিনি লেখেন, "#ইন্ডিয়ায় একটি আলোচিত স্থিরচিত্র...! #কিন্তু আমি তো বাংলাদেশী"
বুম সৈয়দ রিমনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান যে ছবিটি ২০১৬ সালে ঢাকার উত্তরায় তোলা হয়েছিল। দেশে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব সম্বন্ধে জনচেতনা তৈরি করার জন্য ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছিল।
তিনি বলেন, "প্রায় ১২ বছর আগে আমার এলাকার এক প্রতিবেশি দাদা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান আমার হাতের উপরই। সেই থেকেই আমি সচেতনতামূলক এই প্রচারগুলো শুরু করি। আমি এখনও এগুলো করি।"
আরও পড়ুন: করোনা টিকা নেওয়া পাত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন? না, ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়