দিল্লিতে এক ব্যক্তির স্ত্রীকে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় লাগল সাম্প্রদায়িক রঙ
বুম রোহিণীর ডিসিপির সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে সাম্প্রদায়িক দাবিটি সম্পূর্ণ ভুয়ো, কারণ স্বামী-স্ত্রী উভয়েই একই ধর্মের।
একটি নৃশংস খুনের মর্মান্তিক দৃশ্যের সিসিটিভি ফুটেজ যেখানে এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্য রাস্তায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে এক মহিলাকে খুন করতে দেখা যায় তা ভুল সাম্প্রদায়িক ব্যাখ্যা করে প্রচার হচ্ছে যে, এটি এক হিন্দু মহিলা প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এক মুসলিমের ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার দৃশ্য।
কিন্তু বুম দেখেছে, এখানে কোনও হিন্দু-মুসলমানের গল্প নেই, কেননা ঘাতক পুরুষ ও নিহত মহিলা উভয়েই হিন্দু। রোহিণীর দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার প্রণব তয়াল-এর সঙ্গে কথা বলেও বুম জেনেছে, ঘটনাটিতে সাম্প্রদায়িক রঙ চড়ানো সত্যের একটি ভুয়ো ব্যাখ্যা।
যে ক্যাপশন দিয়ে এই ভুয়ো ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে, তার অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, "কাশ্মীর তো অনেক দূরের ব্যাপার, এখন দিল্লিও ক্রমশ কাশ্মীরের মতো হয়ে উঠছে, যেখানে প্রেম জেহাদের বিরোধিতা করায় এক মহিলাকে প্রকাশ্যে ছুরি মেরে খুন করা হচ্ছে। অথচ কেউ মহিলাটিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসছে না। হিন্দুদের মনে এই ভয়ভীতি সমূহ অপচয় সৃষ্টি করবে।"
বুম এই অস্বস্তিকর দৃশ্যের ভিডিও তার প্রতিবেদনের অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
(হিন্দিতে মূল ক্যাপশন: कश्मीर तो दूर की बात है अब दिल्ली का हाल भी कश्मीर जैसा होता जा रहा है लव जिहाद का विरोध करने वाली महिला की चाकुओं से गोदकर खुलेआम हत्या कर दी जाती है और वहां के लोग देखकर निकल जाते हैं कोई उसे बचाता नहीं यही डर हिंदुओं की बर्बादी का कारण बनेगा ।)
আরও পড়ুন: জওয়ানদের সঙ্গে বিজেপি প্রার্থী অসীম বিশ্বাস খাচ্ছেন? একটি তথ্য-যাচাই
ফেসবুকেও ভাইরাল
একই ক্যাপশন দিয়ে খোঁজ লাগিয়ে দেখা গেছে, সাম্প্রদায়িক রঙ চড়িয়ে ভিডিও ক্লিপটি ফেসবুকেও শেয়ার হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখেছে, ভিডিও ক্লিপের ঘটনাটি দিল্লির রোহিণী অঞ্চলের বিজয় বিহার এলাকার, যেখানে হরিশ মেহতা নামে এক ব্যক্তি তার স্ত্রী নীলু মেহতাকে ১০ এপ্রিল ২০২১ নির্মমভাবে প্রকাশ্য রাস্তায় কুপিয়ে খুন করে।
বুম রোহিণী জেলার পুলিশের ডিসি প্রণব তয়ালের সঙ্গে কথা বলে জেনেছে, স্বামী-স্ত্রী উভয়েই হিন্দু ধর্মাবলম্বীl "এর মধ্যে হিন্দু-মুসলমান বিরোধের কোনও গল্পই নেই, কেননা উভয়েই হিন্দু, একই ধর্মের এবং তারা নিজেদের বাড়ির সামনেই ঘটনাটি ঘটিয়েছে।"
রোহিনির ডেপুটি কমিশনারের সরকারি টুইটার হ্যান্ডেলেও মন্তব্য করা হয়েছে, "তোমরা সব তথ্যকে বিকৃত করে যথেচ্ছ গুজব ছড়াচ্ছোl প্রকৃত ঘটনা হল, হরিশ নামে ৪৫ বছর বয়স্ক এক হিন্দু স্বামী তার ৪০ বছর বয়স্কা স্ত্রী নীলাকে ছুরি মেরেছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করা হয়েছে l সে ও তার স্ত্রী একই সম্প্রদায়ভুক্ত। এবং প্রেম কোনও জেহাদের বিষয় নয়।"
দ্বিতীয় টুইটটি এই রকম, "প্রকৃত তথ্য না জেনে দয়া করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করবেন না। ঘটনাটি ওদের সংসারের। এই সব ক্ষেত্রে আপনাদের আরও সংবেদনশীল হওয়া উচিত।"
ভাইরাল হওয়া সিসিটিভি ফুটেজে যে ফ্রেমগুলি দেখা গেছে, সেই একই ফ্রেম সহ কিছু সংবাদ-প্রতিবেদনও আমাদের নজরে এসেছে।
প্রকাশ্য রাস্তার ধারে খুন হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা নীলুকে পরে অ্যাম্বুল্যান্সে করে সঞ্জয় গান্ধী হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া হয়, যেখানে চিকিত্সকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন, জানাচ্ছে সংবাদসংস্থা এএনআইl
প্রতিবেদনটিতে আরও জানানো হয় যে, মেহতার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে তদন্তও চলছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় মেহতা জানিয়েছে যে, সে সম্প্রতি নীলুকে বিয়ে করেছে, যে সফদরজঙ হাসপাতালে চাকরি করতো। কিন্তু মেহতা স্ত্রীর হাসপাতালে চাকরি করা নিয়ে খুশি ছিল না। সে নীলুকে হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দিয়ে সংসারের কাজকর্মে জুতে থাকতে বলে, যা নীলু মেনে নিতে রাজি হয়নি। এতেই মেহতা ক্রুদ্ধ হয় এবং সন্দেহ করতে থাকে যে নীলুর হয়তো কোনও বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে, রিপোর্ট এএন আই-এর।
আরও পড়ুন: স্ত্রীকে কুপিয়ে খুন করার ভিডিও ক্লিপ সাংবাদিক খুনের খবর বলে চালানো হয়