না, খালি নেবুলাইজার যন্ত্র অক্সিজেন সিলিন্ডারের কোনও বিকল্প নয়
বুমকে এক ফুসফুস বিশেষজ্ঞ বলেন অক্সিজেনের প্রয়োজন কখনও নেবুলাইজার ব্যবহার করে মোটানো যায় না।
ফরিদাবাদের (Faridabad) সর্বোদয় হাসপাতাল নিজেকে সেই ভিডিও থেকে আলাদা করে নিয়েছে যাতে ওই হাসপাতালেরই একজন ডাক্তার পরামর্শ দিচ্ছেন— অক্সিজেন সিলিন্ডার (Oxygen Cylinder) অমিল তো কী হয়েছে, নেবুলাইজার(Nebuliser) দিয়েই কাজ চালিয়ে নেওয়া যাবে l
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, ডাক্তার অলোক বলে নিজেকে পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি সর্বোদয় হাসপাতালের পোশাক পরেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের পরামর্শ দিচ্ছেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার না থাকলে নেবুলাইজার দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে।
তিনি এমনও বলছেন— "নেবুলাইজারের ভিতর কোনও ওষুধ ভরারও প্রয়োজন নেই, কেননা ওটাই রোগীর শরীরে অক্সিজেন সরবারহ অব্যাহত রাখার কৌশল। একবার যদি রোগীকে মাস্ক পরিয়ে দেওয়া যায় এবং নেবুলাইজারের সুইচ অন করে দেওয়া হয়, তখন রোগী বাতাস থেকেই অক্সিজেন নিতে শুরু করবে আর রোগী কিংবা তার আত্মীয়পরিজনদের অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য ছোটাছুটি করতে হবে না।"
বুম এ বিষয়ে এক ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বললে তিনি এই পরামর্শকে ভুয়ো বলে উড়িয়ে দেন এবং চিকিত্সাবিজ্ঞানে এর কোনও ভিত্তি নেই বলে জানান। কোভিড-১৯ অতিমা্রীর দ্বিতীয় ঢেউ ভারতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর আছড়ে পড়ে তার পরিকাঠামোকে তছনছ করে দিয়েছে। রোগীরা হাসপাতালে শয্যা পাচ্ছে না, অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য চারিদিকে হাহাকার।
রোগীদের আত্মীয়স্বজন অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য ছোটাছুটি করছেন এবং সামাজিক মাধ্যমে এই সিলিন্ডারের জন্য ব্যাকুল মিনতি নথিভুক্ত হয়ে চলেছে।
এই প্রেক্ষাপটেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে এবং সোশাল মিডিয়ায় অনেকেই এটি পোস্ট করেছেন:
পোস্টটির আর্কাইভ বয়ান দেখুন এখানে
এই পোস্টটির আর্কাইভও এখানে দেখতে পারেন।
পোস্টটির আর্কাইভ বয়ান দেখুন এখানে l
এই পোস্টটিরও আর্কাইভ বয়ান দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: ২০১৮ তোলা অক্সিজেন সিলিন্ডার সহ এক মহিলার ছবি সাম্প্রতিক বলে ছড়াল
বুম এর হোয়াট্স্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও দাবিটির সত্যতা যাচাই করার অনুরোধ সহ পোস্টটি পৌঁছেছে:
তথ্য যাচাই
সর্বোদয় হেল্থকেয়ার টুইটার মারফত এই ভিডিওর দাবির সঙ্গে নিজের অসহমত জ্ঞাপন করেছে। একটি বিবৃতি দিয়ে তারা জানিয়েছে, ডাক্তার অলোকের দাবি হাসপাতাল অনুমোদিত নয় এবং বৈজ্ঞানিক চিকিত্সা শাস্ত্রের সাক্ষ্যও সেই দাবি সমর্থন করে না। হাসপাতালের তরফে আরও সতর্ক করা হয়েছে—এ ধরনের কোনও ভুল তথ্যের শিকার হবেন না।
বুম এ বিষয়ে মুম্বইয়ের ওখার্ট হাসপাতালের ফুসফুস-বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জীনম শাহের সঙ্গে কথা বললে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই দাবিকে অসার, ভিত্তিহীন ও অবৈজ্ঞানিক বলে নস্যাত্ করে দেন:
"এটা সম্পূর্ণ বাজে কথা । নেবুলাইজার ব্যবহার করেন হাঁপানির রোগীরা এবং অন্য যাঁরা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন । নেবুলাইজার যন্ত্রের মুখোশে একটা চেম্বার থাকে যার মধ্যে ওষুধপত্র দিয়ে দেওয়া হয় । যন্ত্রটি ওই তরল ওষুধকে ভেঙে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণায় রূপান্তরিত করে, যেগুলো সহজে ফুসফুসের ভিতর চলে গিয়ে শ্বাসনালীকে উন্মুক্ত করে।
"যখন আমরা কোনও ওষুধ ছাড়াই নেবুলাইজার রোগীকে পরিয়ে দিচ্ছি, তখন তার ফুসফুস আসলে শুধু হাওয়াই টানছে, যে হাওয়ার মধ্যে মাত্র ২১ শতাংশ অক্সিজেন রয়েছে । নেবুলাইজারের পারিপার্শ্বিক বায়ুমণ্ডলে প্রাপ্য অক্সিজেনের চেয়ে বেশি অক্সিজেন তৈরি করার কোনও ক্ষমতাই নেই"।
বুম নিজেও অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর বা সিলিন্ডারের বিকল্প হিসাবে নেবুলাইজারের প্রয়োগের কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণার খোঁজ পায়নি।
আরও পড়ুন: ২০২০ সালে ভাইজ্যাক গ্যাস লিকের দৃশ্য ছড়াল দ্বিতীয় কোভিড ঢেউ বলে