যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সেনার বিদায়ের দৃশ্য দাবি করে ভাইরাল চলচ্চিত্রের অংশ
বুম যাচাই করে দেখে সৈনিকের পরিবারকে বিদায় জানানোর দৃশ্যটি ইরাকি শর্ট ফিল্ম ডায়ালিং-এর থেকে নেওয়া হয়েছে।
এক সৈনিক যুদ্ধক্ষেত্রে বসে মা ও পরিবারের উদ্দেশে নিজের বিদায়বার্তা রেকর্ড করছেন, আর তাঁর পিছনে তুমুল গোলাগুলি চলতে দেখা যাচ্ছে, এক ইরাকি শর্ট ফিল্মের এমনই একটি নাটকীয় দৃশ্য সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। এটি একটি সত্য ঘটনা বলে শেয়ার করা হলেও দাবিটি ভুয়ো।
ভাইরাল হওয়া ক্লিপে এই ইউনিফর্ম পরিহিত ব্যক্তিকে আরবি ভাষায় কিছু কথা রেকর্ড করতে দেখা যাচ্ছে। তিনি বলছেন যে, তাঁর আশঙ্কা তিনি এই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আর বাড়ি ফিরতে পারবেন না। তিনি ভাইদের বলছেন মাকে দেখে রাখতে।
"যুদ্ধের সময় সৈনিক পরিবারকে বিদায় জানাচ্ছেন", এই ক্যাপশনের সঙ্গে ক্লিপটি ভাইরাল হয়েছে।
দেখার জন্য এখানে, এবং আর্কাইভের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
ফেসবুকে ভাইরাল
ফেসবুকে এই ক্যাপশনটি সার্চ করে আমরা দেখতে পাই যে, সেখানেও এই ক্লিপটি একই বিভ্রান্তিকর ক্যাপশন সমেত ভাইরাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিভ্রান্তিকর দাবিতে লেখিকা সুধা মূর্তির ছবি ফেসবুকে আবার জিইয়ে উঠল
তথ্য যাচাই
বুম অনুসন্ধান করে দেখল যে, দৃশ্যটি কোনও সত্য ঘটনার নয়; ডায়ালিং নামে একটি ইরাকি ছবি থেকে দৃশ্যটি নেওয়া হয়েছে।
ভাইরাল ভিডিওটির কমেন্ট সেকশনে অনেকেই লিখেছেন যে, দৃশ্যটি কোনও সিনেমা থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই সূত্র ধরেই আমরা একটি শর্ট ফিল্মের সন্ধান পাই। ২০১৭ সালে ফিল্মটি ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছিল। সতেরো মিনিট দৈর্ঘের ক্লিপটির শুরুতেই আমরা ভাইরাল ভিডিওতে দেখা দৃশ্যটিকে চিহ্নিত করতে পারে, যেখানে এক সৈনিক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নিজের বিদায়বার্তা রেকর্ড করছেন।
ইউটিউবে যিনি ছবিটি আপলোড করেছেন, তিনি জানান যে, সিনেমাটির নাম ডায়ালিং; পরিচালকের নাম বাহা আল-কাজেমি। ছবিটির গল্প এক মহিলাকে কেন্দ্র করে রচিত— ইরাকি সেনাবাহিনীর হয়ে আইসিস-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাঁর ছেলে প্রাণ দেয়।
আরবি ভাষায় ভিডিওটির বর্ণনায় লেখা হয়েছে: "ডায়ালিং নামের ছবিটি এক ইরাকি মহিলার গল্প বলে। ইরাকি সেনাবাহিনী ও পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্স-এর হয়ে সন্ত্রাসবাসী সংগঠন আইসিসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁর ছেলের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ এই মহিলা। যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ছেলের মৃত্যু মানতে নারাজ মহিলা!! তিনি একটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান, কিন্তু কী ভাবে ফোনটি ব্যবহার করতে হয়, তা জানেন না! ছবিটির প্রযোজক ইমাম আল-কাদিম সেন্টার ফর কালচার অ্যান্ড আর্টস। কার্যনির্বাহী প্রযোজক আইন আল বাসারা সেন্টার ফর সিনেমা ও বাসারা ইউনিভার্সিটি।"
আমরা এটাও জানতে পারি যে, ২০১৫ সালে দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এই ছবিটির প্রিমিয়ার হয়েছিল।
জানা যায়, ছবিটির প্রধান অভিনেতা মেনহেল আব্বাস, যিনি ছবিতে সৈনিকের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, তিনি ২০১৬ সালে এই ছবিটির বেশ কয়েকটি স্থিরচিত্র ইনস্টাগ্রামে আপলোড করেন। এখন যে দৃশ্যটি ভাইরাল হয়েছে, ২০১৯ সালের জুন মাসে তিনি সেই দৃশ্যটিও আপলোড করেন, এবং সবাইকে ছবিটি দেখতে অনুরোধ করেন।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
আরও পড়ুন: না, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত করেনি তৃণমূল