তালিবানের সাথে জুড়ল ২২৯ খ্রিস্টানকে কোতল করার পুরনো ভুয়ো হুমকি
২২৯ জন খ্রিস্টান মিশনারিকে হত্যা করার এই ভুয়ো হুমকি বার্তা বেশ পুরনো, অন্ততঃ ২০১৭ সালের, যা বারবার ফিরে আসে।
আফগানিস্তানে (Afghanistan) ২২৯ জন খ্রিস্টান মিশনারিকে (Christian Missionary) ইসলামপন্থীদের কোতল করার বার্তাটি ভুয়ো এবং তালিবান (Taliban) সে দেশের দখল নেওয়ার পর থেকেই তা জিইয়ে তোলা হয়েছে।
বুম দেখলো, ভাইরাল হওয়া এই বার্তাটি ২০১৭ সালেও ছড়ানো হয়েছিল। বার্তাটিতে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। যেমন তাতে বলা হয়েছে, কারাকোশ তালিবানরা দখল করে নিয়েছে, অথচ কারাকোশ ইরাকে অবস্থিত, আফগানিস্তানে নয় এবং ওই জায়গাটা নিয়ন্ত্রণ করতো ইসলামি রাষ্ট্র বা আইসিস, যা ২০১৬ সালের অক্টোবরেই তাদের হাতছাড়া হয়।
এই বার্তাটি প্রচার হচ্ছে ১৫ অগস্ট আফগানিস্তানের সরকারের পতন এবং তালিবানের দ্বারা রাজধানী কাবুলের দখল নেওয়ার পর থেকে।
ভাইরাল হওয়া বার্তাটি এই রকম, "প্রার্থনা করুন! আমাদের গ্লোবাল মিডিয়া আউটরিচ-এর সদর-দফতর থেকে এই মাত্র বিজ্ঞাপিত হয়েছে—আগামী কাল (বুধবার) বিকেলে আফগান ইসলামপন্থীরা ২২৯ জন খ্রিস্টান মিশনারির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে চলেছে... এই ইসলামপন্থীরা সদ্য ইরাকের খ্রিস্টান-অধ্যুষিত নগরী কারাকোশ দখল করে নিয়েছে..."
বার্তাটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
বুম তার হোয়াটস্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও (৭৭০০৯০৬১১১) সত্যতা যাচাইয়ের অনুরোধ সহ বার্তাটি পেয়েছে।
ফেসবুকেও ভাইরাল
একই ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকেও বার্তাটি আমরা ভাইরাল হতে দেখেছি।
আরও পড়ুন: পাক বিয়েতে বন্দুক সহ নাচের ভিডিও ছড়াল আফগানিস্তানে তালিবানদের নাচ বলে
তথ্য যাচাই
বুম দেখলো, বার্তাটি সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং ২০১৭ সাল থেকেই এটি সোশাল মিডিয়ায় ঘুরছে। এই বার্তার একটা অসঙ্গতি হল, এতে ইরাকি নগরী কারাকোশ সদ্য দখল করার কথা রয়েছে, সেটি আসলে ২০১৪ সালে ইসলামি রাষ্ট্র দখল করলেও ২০১৬-র অক্টোবরে তারা বিতাড়িতও হয়।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরেও আমরা অবিকল এই একই বার্তা ফেসবুকে ভাইরাল হতে দেখেছি।
তুলনা
দুটি পোস্টের তুলনা করলে আমরা দেখতে পাই, দুটিতেই "২২৯ জন খ্রিস্টানকে কোতল করার এবং আগামীকাল তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা লেখা রয়েছে...বার্তাটির প্রেরক জনৈকা জুডিথ কারমোনা, যিনি চিহুয়াহুয়া-র এক মিশনারি এবং বর্তমানে আফ্রিকায় রয়েছেন", ইত্যাদি...
ভাইরাল বার্তায় উত্তর ইরাকের যে কারাকোশ নগরীর দখল নেওয়ার কথা আছে, সেটি ইরাক ও সিরিয়ার ইসলামি স্টেট-এর জঙ্গিরা ২০১৪ সালেই সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছিল। ৪ বছর পর ২০১৬ সালের অক্টোবরে মসুল দখলের লড়াইয়ের সময় সেটি পুনরুদ্ধার হয়।
ইসলামি স্টেট-এর জঙ্গিরা খ্রিস্টানদের উপাসনাস্থলগুলি অপবিত্র করেছিল, অসংখ্য মূর্তির মুণ্ডু কেটেছিল, হাজার হাজার খ্রিস্টানকে বিতাড়িত করেছিল, যারা থেকে গিয়েছিল, তাদের বাড়ি-ঘর, বিষয়-সম্পত্তি লুঠ করেছিল, এমনকী হত্যাও করেছিল।
আমরা এও দেখি যে, আফগানিস্তানে ২২৯ জন খ্রিস্টান মিশনারিকে কোতল করা সম্পর্কিত এ ধরনের বার্তা পেরুর একটি তথ্য-যাচাইকারী ওয়েবসাইট ভেরিফিকেটর দে লা রিপাবলিকা সেই ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে, যখন স্প্যানিশ ভাষায় বার্তাটি ভাইরাল হয়।
২০০৯ সালের নভেম্বরেও মিশনারিদের কোতল করার অনুরূপ একটি বার্তা ভাইরাল হয়েছিল, যেটিকে স্নোপস পর্দাফাঁস করে। সর্বোপরি, আমরা এমন কোনও নির্ভরযোগ্য সংবাদ-প্রতিবেদনও খুঁজে পাইনি, যাতে মিশনারিদের তালিবানের হাতে কোতল হওয়ার কথা রয়েছে।
২০২১ সালের ১৮ অগস্ট ওয়াশিংটন পোস্ট এক নির্বাসিত আফগানকে উদ্ধৃত করে রিপোর্ট করে, এক খ্রিস্টান পরিবার নাকি ওই ব্যক্তিকে বলেছে যে, তালিবান জঙ্গিরা বাড়ি-বাড়ি গিয়ে জানতে চাইছে, সেখানে কোনও খ্রিস্টান বসবাস করে কিনা।
তালিবান আফগানিস্তান দখল করে নেওয়ার পর থেকেই তাদের সম্পর্কে যে রকমারি ভুয়ো খবর ও গুজব ছড়াচ্ছে, বুম ধারাবাহিকভাবে সেগুলির পর্দাফাঁস করে চলেছে। নীচের থ্রেড-এ সেই প্রতিবেদনগুলি দেখতে পারেন।
আরও পড়ুন: আমির খানের সঙ্গে তালিবান যোগ ভুয়ো দাবিতে ছড়াল দুই পাক ধর্মগুরুর ছবি