প্রধান বিচারপতির আইনজীবীকে ভর্ৎসনার ভিডিওটি হিজাব মামলার নয়
বুম দেখে ভিডিওটি ৩ মার্চ ২০২২ আদালতে ওঠা অন্য একটি মামলা। হিজাব বিতর্ক সংক্রান্ত মামলা নয়।
কর্নাটকের প্রধান বিচারপতি (Judge) একজন আইনজীবীকে তীব্র তিরস্কার করছেন এবং আইনজীবী হিসাবে তাঁর অধিকার কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন-- এই মর্মে একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় বিশেষত হোয়াট্স্যাপে ভাইরাল করে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে যে, সাম্প্রতিক হিজাব (Hijab) মামলার সূত্রেই এই ঘটনা।
ভিডিওটি শেয়ার করে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে যে, প্রধান বিচারপতি হিজাব বিতর্কের মতো একটি অকিঞ্চিত্কর বিষয়কে আদালতে তোলার জন্যই নাকি আইনজীবীকে তিরস্কার করছেন।
গত ১৫ মার্চ কর্নাটক হাইকোর্ট এই বলে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ করার নির্দেশকে বৈধ ঘোষণা করেন যে হিজাব পরা ইসলাম ধর্মের অবশ্যপালনীয় অনুশীলনগুলোর অন্তর্ভুক্ত নয়।
ভিডিওটিতে প্রধান বিচারপতিকে ক্রুদ্ধ স্বরে এক অ্যাডভোকেটকে তিরস্কার করতে দেখা যাচ্ছে, যাঁর বিরুদ্ধে তিনি বার কাউন্সিলে অভিযোগ জানানোর হুমকিও দিচ্ছেন-- তাঁকে আইনজীবী হিসাবে আর কাজ করতে না দেওয়ার হুমকি। কিন্তু ভিডিও থেকে বোঝার উপায় নেই ঠিক কী কারণে প্রধান বিচারপতি এতখানি রুষ্ট হয়েছেন।
২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি শেয়ার করে লেখা হচ্ছে— "আইনজীবী হিজাবের পক্ষাবলম্বনকারীদের সমর্থন করাতেই তাঁকে আইনজীবীর অধিকার থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। লোকেদের জানা উচিত যে বিষয়টি কতটা গুরুতর এবং আইনজীবীর তরফে এমন একটি মামলা প্রধান বিচারপতির এজলাসে আনা কতখানি মূঢতা!"
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ভুয়ো দাবি সহ-ই সোশাল মিডিয়ায় ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কর্নাটকের রাস্তায় প্রকান্ড অজগরের ভিডিও ছড়াল আসানসোলের ঘটনা বলে
তথ্য যাচাই
বুম দেখলো, ভিডিওটি ২০২২ সালের ৩ মার্চ-এর, যাতে কর্নাটক হাইকোর্টে ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত একটি মামলার জীবন্ত শুনানি চলছিল, হিজাব মামলার শুনানি নয়।
মামলাটি ছিল ব্যাঙ্গালোরের বাসিন্দা এম ভেঙ্কটেশের একটি আবেদনের শুনানি, যিনি বৃহত্ ব্যাঙ্গালোর মহানগর পালিকার কমিশনারের বিরুদ্ধে আবেদন করেছিলেন। শুনানিটি চলছিল কর্নাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্থি এবং বিচারপতি এস আর কৃষ্ণকুমারের এজলাসে। মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।
আমরা দেখেছি, মামলার সওয়াল-জবাব চলেছে প্রধান বিচারপতি ঋতুরাজ অবস্থি বনাম অ্যাডভোকেট জি সঞ্জয় এবং সিনিয়র অ্যাডভোকেট ডি আর রবিশংকরের মধ্যে।
ভিডিওটি দেখলে মনে হয়, প্রধান বিচারপতি একই ধরনের একটি মামলায় আদালতের নিষ্পত্তিমূলক রায়ের উল্লেখ না করে হাইকোর্টে মামলা ঠুকে দেওয়ার কারণেই অ্যাডভোকেটদের উপর রুষ্ট হয়েছেন, যেহেতু সেই রায় স্পষ্টতই তাঁদের মক্কেলের বিরুদ্ধেই যায়।
ভাইরাল ভিডিওটি ইউ-টিউবে ৩ মার্চ, ২০২২ সকাল সাড়ে ১০টায় আপলোড করা হাইকোর্টের শুনানির জীবন্ত টেলিকাস্ট কেটে-ছেঁটে তৈরি করা হয়েছে।
৩৭ মিনিট পর থেকে এই টেলিকাস্ট-এর সওয়াল-জবাব ভাইরাল হওয়া ভিডিওর সওয়াল-জবাবের সঙ্গে মিলে যায়।
আদালত অবশ্য শেষ পর্যন্ত কেবল মামলাটি খারিজ করে দিয়েই ক্ষান্ত হয় এবং অ্যাডভোকেট জি সঞ্জয়ের তরুণ বয়সের কথা মাথায় রেখে এবং সিনিয়র অ্যাডভোকেট ডি আর রবিশংকরের দেওয়া প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে আইনজীবীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনও ব্যবস্থাগ্রহণ থেকে নিরস্ত হয়।
"আমরা এফিডেভিট-টি পড়েছিl আবেদনকারীর উকিল জি সঞ্জয় তাঁর ভুল স্বীকার করেছেন এবং এটাই তাঁর করা প্রথম ভুল, যার পুনরাবৃত্তি না-হওয়ার আশ্বাসও আদালতকে দিয়েছেন। এমন ভুলের জন্য তিনি তাঁর গভীর অনুতাপের কথাও বারংবার কবুল করেছেন।"
৪ মার্চ ২০২২ প্রকাশিত বিচারপতির রায়টি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: না, এটি ভোলোদিমির জেলেনস্কি ও তাঁর স্ত্রীর 'এন্ডলেস লাভ' গান গাওয়া নয়