তেলঙ্গনা পুলিশ ও এআইএমআইএম বিধায়কের বচসার ভিডিও ছড়াল কর্নাটকের বলে
বুম দেখে ভিডিওটি তেলঙ্গনার জগতিয়ালের। এআইএমআইএম নেতারা এক এএসআইর বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবিতে থানায় যান।
একটি ভিডিওতে অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)-এর নামপল্লীর বিধায়ক জফ্ফার হুসেন মেরাজ সহ এক দল নেতাকে জগতিয়াল-এর পুলিশ সুপারের অফিসে দেখা যাচ্ছে। সেখানে একজন অ্যাসিস্টেন্ট সাব ইনস্পেক্টরের (এএসআই) বিরুদ্ধে পদক্ষেপ দাবি করে তাঁরা পুলিশের সঙ্গে তর্ক করছেন। তাঁদের অভিযোগ, ওই এএসআই, একটি বাসে এক ছাত্রী ও তাঁর মাকে আক্রমণ করেন। সেই ভিডিও এখন এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, কর্নাটকের (Karnataka) বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের (Congress) জয়ের পর ওই ভিডিওটি তোলা হয়।
১৩ মে, ২০২৩-এ, কর্নাটক বিধানসভায় কংগ্রেস ১৩৫টি আসন জিতে নেয়। তার ফলে, তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় ১১৩ আসন সংখ্যা পেরিয়ে গিয়ে, ভারতীয় জনতা পার্টি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। বিজেপি পায় ৬৬ আসন ও জনতা দল (সেকুলার) ১৯টি। এই ফলাফলের পর, মিথ্যে দাবি সমেত বেশ কিছু ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
এই ভাইরাল ভিডিওতে, থানায় এক দল লোককে দেখা যাচ্ছে। এবং পদক্ষেপ দাবি করে তাঁরা পুলিশের সঙ্গে তর্ক করছেন।
ভিডিওটি শ্লেষাত্মক ও ইসলাম বিরোধী ক্যাপশন সমেত শেয়ার করা হচ্ছে। তাতে বলা হয়েছে, “আমরা যেমন বলব, তেমনই করতে হবে। কর্নাটকের একজন নির্বাচিত এমএলএ, একজন পুলিশ অফিসারকে বাড়িতে ডেকে শান্ত ভাবে বোঝাচ্ছেন।”
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: जैसा हम कहेंगे वैसा करना पड़ेगा।कर्नाटक में निर्वाचित विधायक एक पुलिस अधिकारी को अपने घर बुलाकर शांति प्रिय ढंग से समझाते हुए।*)
দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
কিছু ফেসবুক পোস্টে এও দাবি করা হয়েছে যে, ভিডিওর ওই ব্যক্তি হলেন কর্নাটকের একজন কংগ্রেস বিধায়ক।
ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি বুম-এর হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরে (৭৭০০৯ ০৬৫৮৮) পাঠানো হয়।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে, ভিডিওটি আসলে তেলঙ্গনায় তোলা, কর্নাটকে নয়। ভাইরাল ভিডিওটি তেলঙ্গনার জগতিয়ালে তোলা হয়। যখন নামপল্লীর বিধায়ক জাফ্ফার হুসেন মেরাজ সহ এআইএমআইএম নেতারা, একজন অ্যাসিস্টেন্ট সাব ইনস্পেক্টরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ দাবি করতে থানায় যান, তখনই ভিডিওটি তোলা হয়।
তাঁরা অভিযোগ করেন যে, আরটিসি বাসে সিট নিয়ে ঝগড়ার সময়, ওই পুলিশ আধিকারিক একজন ছাত্রী ও তার মাকে আক্রমণ করেন।
ভাইরাল ভিডিওটিতে এআইএমআইএম-এর লোগো দেখা যাচ্ছে। এবং সাবটাইটেলে নামপল্লীর এমএলএ জাফ্ফার হুসেন মেরাজ-এর নাম লেখা রয়েছে। এই সূত্র ধরে, আমরা ওই নামগুলিকে কি-ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করে সার্চ করি। তার ফলে, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে আমরা কিছু খবর দেখতে পাই।
১১ মে, ২০২৩-এ, ডেকান ক্রনিকল-এ প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, এআইএমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসির নির্দেশে নামপল্লীর বিধায়ক জাফ্ফার হুসেন মেরাজ ও পার্টির জেলা প্রেসিডেন্ট ইউনুস নাদীম, ওই ঘটনায় জড়িত স্নাতকোত্তর ছাত্রীটির বাড়িতে যান।
ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, এআইএমআইএম-এর নেতারা এবং মা ও মেয়ে এসপি’র অফিসে যান। কিন্তু তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারেননি।
ভাইরাল ভিডিওর দৃশ্য ওই রিপোর্টেও দেখা যায়।
অভিযোগ এই যে, ৯ মে, ২০১৩-এ, একটি আরটিসি বাসে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সিট নিয়ে ঝগড়া হলে, এএসআই অনিল কুমার একজন মুসলমান মা ও তাঁর মেয়েকে মারধোর করেন। ঘটনাটি ঘটে জগতিয়াল-এ। এবং সেই ঘটনার ভিডিও এখন সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
ডেকান ক্রনিকল-এর রিপোর্টে বলা হয়, ওই ঘটনার পর, ১১ মে, ২০২৩-এ, আরটিসি বাসে দু’জন মহিলা যাত্রীকে আক্রমণ করার অভিযোগের ভিত্তিতে, পুলিশের ইনস্পেক্টর জেনারেল (মাল্টিজোন-১) জগতিয়াল রুরালের সাব ইনস্পেক্টর এ অনিলকে সাসপেন্ড করেন।
যে সব সাংবাদিক ওই ঘটনাটি ও এআইএমআইএম-এর বিধায়কের সঙ্গে থানার তর্ক বিতর্কের ওপর রিপোর্ট করেন, তাঁরা সহ বেশ কিছু হ্যান্ডেল ওই একই ভাইরাল ভিডিওটি টুইট করেন।