বিহারের পরীক্ষাকেন্দ্রে গণ-টুকলির পুরনো ছবি গুজরাতের ঘটনা বলে ছড়াল
বুম দেখে ভাইরাল ছবিটি বিহারের বৈশালী জেলার যা ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাড়া ফেলে।
বিহারে (Bihar) ছাত্রদের পরীক্ষায় টুকতে সাহায্য করতে বেশ কিছু লোক দেওয়াল বেয়ে উঠছে, পুরনো এমন একটি ছবি ভাইরাল করে দাবি করা হচ্ছে যে, এটি গুজরাতের (Gujarat) শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান চিত্র।
বুম দেখে ছবিটি ২০১৫ সালে বিহারের বৈশালী জেলার ছবি, যাতে দেখা যাচ্ছে, একটি সরকারি স্কুলে পরীক্ষার্থীদের টোকার চিরকুট সরবরাহ করতে লোকেরা স্কুলের প্লাস্টার-করা দেওয়াল বেয়ে ওঠা-নামা করছে।
ছবিতে একটি চারতলা স্কুলবাড়ি দেখা যাচ্ছে, যার প্রতিটি জানলার সঙ্গে সেঁটে রয়েছেন পরীক্ষার্থীদের পুরিয়া সরবরাহ করতে ব্যস্ত লোকজন।
ছবিটি টুইট করেছিলেন ডক্টর ভরত কানাবার, পরে যেটি তিনি মুছেও দেন। কিন্তু দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল টুইটটি উদ্ধৃত করে এমন ক্যাপশন দিয়েছেন যেন এটি গুজরাতের ঘটনার ছবি।
অথচ ডক্টর কানাবরের টুইটে কখনওই গুজরাতের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তাঁর টুইটটির অনুবাদ করলে এ রকম দাঁড়ায়, "২০০ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৪০ হাজার কলেজের এই দেশটিতে শিক্ষা এখন পণ্য বিশেষ. যার ক্রেতা ও বিক্রেতারা উভয়েই লজ্জাহীন!"
কেজরিওয়াল কানাবারের টুইটটি যে হিন্দি ক্যাপশন দিয়ে উদ্ধৃত করেছেন, সেটির অনুবাদ হল, "গুজরাতের ভেঙে পড়া শিক্ষা-ব্যবস্থা নিয়ে বিজেপির লোকেরাও প্রশ্ন তুলছে। দলীয় লাইনের ঊর্ধ্বে উঠে গুজরাটে সুশিক্ষার দাবি ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। দীর্ঘ ২৭ বছরের শাসনেও বিজেপি এই রাজ্যে সুশিক্ষার প্রবর্তন করতে পারেনি। আম আদমি পার্টির সরকার দিল্লির মতোই গুজরাতেও সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলে সুশিক্ষা প্রচলন করবে।"
ইতিমধ্যে কেজরিওয়ালের করা টুইটটির স্ক্রিনশট ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে, যাতে দৃশ্যটিকে বিহারের পরিবর্তে গুজরাতের বলে চালানো হয়েছে।
এই ধরনের আরও পোস্ট দেখতে এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: গণেশ উৎসবের পুরনো ভিডিও ছড়াল মুম্বইয়ে রাম নবমীর শোভাযাত্রা বলে
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ডক্টর ভরত কানাবার ভাইরাল হওয়া ছবি সহ তাঁর টুইটটি মুছে দিয়েছেন। অন্য একটি টুইটে ডক্টর কানাবার লিখেছেন, "আমার টুইটের ছবিটা বিহারের। মূল প্রশ্ন এখানে শিক্ষাক্ষেত্রে খারাপ লোকেদের অনুপ্রবেশ নিয়ে। কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির লোকেরা যেন এ নিয়ে বেশি হই-হল্লা না করে। আমি গত ৩৫ বছর ধরে বিজেপির সক্রিয় কর্মী, তাই বিজেপির জাতীয়তাবাদী মতাদর্শ আমার রক্তে-শিরায় মিশে রয়েছে। তাই আমি ঘুম ভেঙে উঠলেও যদি কেউ আমায় প্রশ্ন করে, তবুও আমার আনুগত্য সর্বদাই 'কমল'-এর ক-এর প্রতিই থাকবে।"
এই সূত্র অনুসরণ করে আমরা ভাইরাল হওয়া ছবিটির খোঁজ লাগাই এবং ২০১৫ সালের বেশ কয়েকটি সংবাদ-প্রতিবেদনে ছবিটি প্রকাশিত হতে দেখি। তার মধ্যে ২৩ মার্চ ২০১৫ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল, ছবিটি বিহারের বৈশালী জেলার 'মন্হার' শহরের একটি স্কুলে তোলা। ছবিতে ক্যাপশন ছিল—'এটি পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরের দেওয়াল বেয়ে লোকেদের টোকাটুকির উপকরণ সরবরাহের ছবি, যা ভাইরাল হলে বিহার সরকারকে টোকাটুকির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে বাধ্য করেl'ছবিটি তোলেন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর প্রশান্ত রবি।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল—ছবিটি তোলা হয় বৈশালী জেলার 'মন্হার' শহরের বিদ্যা নিকেতন স্কুলে ম্যাট্রিক পরীক্ষা চলার সময়। তবে প্রতিবেদনটিতে আগাগোড়াই জায়গাটির নাম ভুল বানানে লেখা হয়—যেখানকার স্কুল, সেই শহরের নাম মহনার (যেটি বিহারের বৈশালী জেলায় অবস্থিত), মন্হার নয়।
যখনকার ঘটনা এটি, সেই সময় এই ছবিটি নিয়ে সারা বিশ্বে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। ২০ মার্চ, ২০১৫ কানাডা ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল, "পূর্ব ভারতে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় টোকাটুকি করতে গিয়ে ধরা পড়া শত-শত ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে।"
আরও পড়ুন: না, জেএনইউ-তে রাম নবমীর সংঘর্ষে আহত আইসা সদস্যাদের আঘাত সাজানো নয়