মিথ্যে দাবি সহ হামজা বেনদেলাজের ফাঁসি বলে ছড়াল মাজিদ কাভোওসিফার ছবি
বুম হ্যাকার হামজা বেনদেলাজের প্রাণদন্ড হয়নি, ভাইরাল ছবিটি ইরানে বিচারক খুনে ফাঁসি হওয়া মাজিদ কাভোওসিফার-এর।
ইরানে বিচারককে হত্যার দায়ে ২০০৭ সালে প্রাণদন্ড হওয়া মাজিদ কাভোওসিফার (Majid Kavousifar) এর ছবি বিভ্রান্তিকর দাবি সহ সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। মাজিদ কাভোওসিফারের ছবিটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে এটি হামজা বেনদেলাজের (Hamza Bendallaz) প্রাণদন্ডের ছবি। হামজা বেনদেলাজ হলেন আলজেরিয়ার কম্পিউটার হ্যাকার যিনি আমেরিকার ব্যাঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্যালেস্তাইনে দান করার ঘটনায় অভিযুক্ত। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
ভাইরাল ফেসবুক পোস্টের ছবিতে ফাঁসির দড়ি গলায় এক ব্যক্তিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
পোস্টটিতে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, ''ফাসিঁর দড়ি গলায় পড়ার পরেও এমন হাঁসিমুখে থাকা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল! এই সেই হামজা বেনদেলাজ, যিনি ২১৭টি ব্যাংক থেকে ৪০ কোটি ডলার হ্যাক করেন। এবং আফ্রিকা ও ফিলিস্তিনে, অনাহারে অর্ধাহারে মরে যাওয়ার উপক্রম মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দেন! আদালতে তার ফাসিঁর রায় হলে, অবশেষে হাসি-মুখে ফাসিঁতে ঝুলে পড়েন! আদালতে তার বক্তব্য পরিস্কার ছিল_"আমি কোনো পাপ করিনি" গরীবের পেট চাপা দিয়ে, সমাজের দুর্নীতিবাজরা যে পয়সা জমা রেখেছিল? আমি তো তা গরীবদের পেটেই পৌছালাম! এইটাই কি আমার অপরাধ?''
একই ক্যাপশন সহ ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করা হয়েছে ছবিটি। এরকম পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল ছবিটির রিভার্স সার্চ করে জানতে পারে এটি মাজিদ কাভোওসিফার (Majid Kavousifar) এর ছবি, হ্যাকার হামজা বেনদেলাজের (Hamza Bendelladj) ছবি নয়।
রয়টর্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ২ অগস্ট মাসে ইরানের তেহরানের আইনি কমপ্লেক্সর সামনে মাজিদ কাভোওসিফার ও হুসেইন কাভোওসিফার ও তার ভাইপোকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে গাড়ির ভেতর গুলি করা মারা হয় জাজ মোগহাদদাসকে। মোগহাদদাস ২০০০ সালে ৭ জন ব্যক্তিকে কারাদন্ড দেয়, যারা বার্লিনে ইরানের সংস্কার বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছে মাজিদের গুলি করার পিছনে কোনও রাজনৈতিক যোগ নেই। বিচারকরা দূর্নীতিপরায়ন এই ধারণাবশত।
এর একাধিক ছবি দেখা যাবে গেট্টি ইমেজেস-এ। এএফপি ফোটের ছবি দেখা যাবে এখানে।
অন্যদিকে ২৬ বছর বয়সী আলজেরীয় তরুন হামজা বেনদেলাজে আমেরিকার প্রায় ২০০ টি বেশি ব্যাঙ্ক থেকে টাকা হাতিয়ে প্যালেস্তাইনে দাতব্য কাজে ব্যায় করে। ২০১৫ সালে প্রকাশিত আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী হামজার মৃত্যুদন্ডের গুজব ছড়ায়।
আমেরিকার কর্তৃপক্ষ সেই গুজবের সত্যতা অস্বীকার করে। হামজা বেনদেলাজের দীর্ঘ মেয়াদী জেল হলেও প্রাণদন্ড দেওয়া হয়নি তাঁকে। আলজেরিয়ায় নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূত জোয়ান পোলাসচিক ফরাসি ভাষায় টুইট করেন যে, ''কম্পিউটার সংক্রান্ত অপরাধে প্রাণদন্ড শাস্তির নিদান নেই।''