বিভ্রান্তিকর দাবিতে ছড়াল রাকেশ টিকায়েতের "আল্লা হু আকবর" ধ্বনি ভিডিও
রাকেশ টিকায়েত স্মরণ করান কিভাবে তাঁর বাবার জামানায় 'আল্লা হু আকবর' ও 'হর হর মহাদেব' এক সঙ্গে উচ্চারিত হতো।
একটি ছাঁটাই করা ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে যে, ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মুজফফরনগরে (Muzaffarnagar) 'কিষাণ মহাপঞ্চায়েত'-এর (Kisan Maha Panchayat) মঞ্চ থেকে রাকেশ টিকায়েত (Rakesh Tikait) "আল্লা হু আকবর" ধ্বনি দিয়েছেন। ভিডিওটি বিভ্রান্তিকর দাবির সঙ্গে ভাইরাল হয়েছে।
ক্রপ করা এই ভিডিওটি দক্ষিণপন্থীরা সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছে এবং তাঁরা দাবি করেছেন যে, কৃষক প্রতিবাদের নামে টিকায়েত মুসলিম তোষণ করছেন।
৫ সেপ্টেম্বর উত্তরপ্রদেশের মুজফরনগরে কৃষক নেতারা কেন্দ্রীয় সরকারের তিন কৃষি বিলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে, যাকে কৃষকদের শক্তি প্রদর্শন করা হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। বেশ কয়েক মাস ধরে এই প্রতিবাদ চলছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুসারে, সংযুক্ত কিশান মোর্চা এই সভার আয়োজন করে। সংযুক্ত কিশান মোর্চা বিগত নয় মাস ধরে চলা কৃষক প্রতিবাদের একটি যৌথ মঞ্চ।
রবিবারের ওই মহাপঞ্চায়েতে রাকেশ টিকায়েত ছিলেন মূল বক্তাদের এক জন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে।
আদিত্য ত্রিবেদী নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী একটি ভিডিওর দৃশ্য শেয়ার করেন, যেখানে টিকায়েতকে মঞ্চ থেকে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। তিনি বলছেন, "দেশে যদি এই রকম সরকার থাকে, তবে এরা দাঙ্গা তৈরি করবে। যখন টিকাইত সাহেব ছিলেন তখনও তো স্লোগান দেওয়া হত... আল্লা হু আকবর... আল্লা হু আকবর... এই সব স্লোগান দেওয়া হত।"
(হিন্দিতে মূল টেক্সট इस तरह की अगर सरकारें देश में होंगी तो ये दंगे करवाने का काम करेगी ..पहले भी नारे लगते थे जब टिकैत साहब थे... अल्लाह हू अकबर..अल्लाह हू अकबर के नारे लगते थे)
ত্রিবেদী যে হিন্দি ক্যাপশনের সঙ্গে ক্লিপটি শেয়ার করেছেন তার অনুবাদ, "মুজফরনগরের মহাপঞ্চায়েতে টিকায়েত পৌঁছে আল্লা হো আকবর স্লোগান দিলেন। এটা কি কৃষকদের আন্দোলন? মোদী-যোগী সরকারের বিরোধিতা, না কি অন্য কিছুকে সমর্থন করা হচ্ছে?"
(হিন্দিতে লেখা মূল টেক্সট मुजफ्फरनगर महापंचायत में पहुंचे टिकैत, लगायें अल्लाह हू अकबर के नारे! ये किसान आंदोलन है? ये मोदी- योगी का विरोध है या किसी विशेष चीज़ को समर्थन?)
দক্ষিণ-পন্থী কলমচি শেফালি বৈদ্য ভিডিওটি টুইট করেছেন এবং সঙ্গে ক্যাপশন দিয়েছেন, "মিষ্টি। টিকায়েত এবং তালিবান একই ভাষায় কথা বলছে।"
ফেসবুকেও ভিডিওটি একই ক্যাপশনের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারতীয় সৈনিকরা কি বিজেপি-আরএসএস বিরোধী স্লোগান দিলেন? একটি তথ্যযাচাই
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে টিকায়েতের নিজশ্ব ফেসবুক পেজ থেকে এই বক্তৃতাটি শেয়ার করা হয়েছে। ওই ভিডিওতে তাঁকে মঞ্চ থেকে বক্তৃতা করতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটির ১১ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের মাথায় টিকায়েতকে বলতে শোনা যাচ্ছে, "এই রকম সরকার যদি দেশে থাকে তবে তারা দাঙ্গা তৈরি করবে। যখন টিকায়েত সাহেব ছিলেন তখনও তো স্লোগান দেওয়া হত... আল্লা হো আকবর... আল্লা হো আকবর... এই সব স্লোগান দেওয়া হত।"
টিকায়েত যখন 'আল্লা হো আকবর' স্লোগান দেন, তখন দর্শকরা 'হর হর মহাদেব' এবং 'আল্লা হু আকবর' বলে ওঠেন।
টিকায়েত তাঁর বক্তৃতায় তার পর বলতে থাকেন, "'হর হর মহাদেব' এবং 'আল্লা হো আকবর' ধ্বনি এক সঙ্গে এই দেশে উচ্চারণ করা হত। এই ধ্বনি সব সময় এখানে উঠতে থাকবে। এখানে আর দাঙ্গা হবে না। ওরা বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা করবে আমরা সকলকে এক সঙ্গে জুড়ে রাখার কাজ করব। কোনও ভুল ধারণা রাখবেন না। এই দেশ আমাদের, এই প্রদেশ আমাদের , এই জেলা আমাদের।"
(হিন্দি हर हर महादेव और अल्लाह हु अकबर के नारे इसी धरती से लगते थे. ये नारे हमेशा लगते रहेंगे. दंगा यहां पर नहीं होगा. ये तोड़ने का काम करेंगे हम जोड़ने का काम करेंगे. किसी ग़लतफ़हमी में मत रहना ये देश हमारा है, ये प्रदेश हमारा है, ये ज़िले हमारे हैं)
২০১৩ সালে হিন্দু-মুসলমানের যে দাঙ্গা হয়েছিল, তার কেন্দ্র ছিল মুজফরনগর। ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মুজফরনগরে দাঙ্গা শুরু হয়, এবং প্রায় ৫০ জন মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুন: না, 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' স্লোগানের জন্য মধ্যপ্রদেশ সরকার বস্তি ভাঙেনি