কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী কি আগে রেজিস্ট্রার ছিলেন?
সোনালি চক্রবর্তী উপাচার্য হওয়ার আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন, রেজিস্ট্রার হিসেবে বহাল ছিলেন না।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া পোস্টে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (Vice-Chancelor) সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Sonali Chakravarti Banerjee) নিয়োগ নিয়ে বিভ্রান্তিকর দাবি করা হচ্ছে। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে, সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়কে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Calcutta University) উপাচার্য করা হয় 'নন-টিচিং' রেজিস্ট্রারের (Registrar) পদ থেকে।
সোনালী চক্রবর্তী (Sonali Chakravarti) রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Alapan Bandyopadhyay) সহধর্মিনী। সারা দেশের গণমাধ্যমের অলোচনায় উঠে আসে মুখ্য সচিবের (Chief-Secretary) দায়িত্বে থাকা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে তলব করার প্রেক্ষিতে। মুখ্য-সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণের আগে কার্যকালের মেয়াদ ৩ মাস বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু সাইক্লোন ইয়াস বৈঠক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদীর তরজার মাঝে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে কাজে যোগ দেওয়ার নোটিস ধরায় কেন্দ্র। এই টালবাহানার মধ্যেই মুখ্য-সচিবের পদ থেকে অবসর নেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ পান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে কেন্দ্রের পাঠানো শোকজ নোটিসের জবাব দেন তিনি।
ফেসবুকে সোনালি চক্রবর্তী ও আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "সংশ্লিষ্টদের জ্ঞাতার্থে, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পত্নী মিসেস সোনালী বন্দ্যোপাধ্যায়, আলাপন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অশিক্ষক-পদ (non-teaching) রেজিস্ট্রার ছিলেন। ২০১৭ সালে মমতা উপাচার্য হিসেবে উন্নীত করেন। পৃথিবীর কোথায় অ-শিক্ষক পদ থেকে শিক্ষক পদে প্রমোশন দেওয়া হয়। এই ধরণের ম্যাজিক পশ্চিমবঙ্গেই হয়। আর প্রতিদান স্বরূপ মমতাকে ডি.লিট দেওয়া হয়। দারুন এই রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের হালচাল। "
(মূল ইংরেজিতে পোস্ট: For the uninitiated, Mrs. Sonali Bandopadhyay, wife of Alapan Bandopadhyay, was the Registrar (a non-teaching post) in Calcutta University, she was promoted as Vice Chancellor (a teaching post) in 2017 by Mamata. Where on earth, there is promotion from a non-teaching post to teaching post?? This magic happens in WB only.In turn, Mrs. Sonali Bandopadhyay conferred D. Litt. to Mamata. Such is the wonderful state of affairs in WB.)
আরও পড়ুন: জঞ্জাল ফেলার গাড়িতে কোভিড মৃতদেহ বহনের ছবিটি উত্তরপ্রদেশের নয়
তথ্য যাচাই
সোনালী চক্রবর্তী রেজিস্ট্রার ছিলেন না
বুম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্র মারফত জেনেছে সোনালি চক্রবর্তী কখনওই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার পদের দায়িত্বে ছিলেন না।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালের প্রশাসনিক আইনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে দু'টি প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরের পদ আছে। একটি পদ 'অ্যাকাডেমিক' প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরের। এবং অন্যটি 'বাণিজ্যিক ও আর্থিক' বিষয় দেখভালের জন্য আরেকটি প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরের পদ। সোনালি চক্রবর্তী 'বাণিজ্যিক ও আর্থিক' বিষয়ক প্রোভাইস চ্যান্সেলর পদের দায়িত্বে ছিলেন ২০১৪ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত।
উপাচার্যের যোগ্যতামান ও নিয়োগ প্রক্রিয়া
বুম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবাসাইটে প্রদত্ত বায়োডাটা থেকে (লিঙ্ক) জানতে পেরেছে সোনালি চক্রবর্তী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছরের বেশি অধ্যাপনার কাজ করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। ২০০৪ সালে ওই বিভাগে অধ্যাপনার দায়িত্বে যোগ দেন তিনি। ২০০৭ সালে তিনি প্রফেসর পদে উন্নীত হন। ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বভার পান সোনালি চক্রবর্তী।
মঞ্জুরি (ইউজিসি) কমিশনের তথ্য-অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের জন্য ২০১৪ সালের মান্য যোগ্যতা হল নূন্যতম ১০ বছর বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে 'প্রফেসর' পদে কাজের অভিজ্ঞতা। সংশ্লিষ্ট একই ধরণের গবেষণামূলক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক দায়িত্বে ১০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা উপাচার্যের যোগ্যতামান হিসেবে গণ্য হবে।
উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে মঞ্জুরি (ইউজিসি) কমিশনের ৭.৩.০ ক্লজে (১) এব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। নীতিমালাটি দেখা যাবে এখানে।
রাজ্য সরকার পরিচালিত উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া জানতে বুম রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহ উপাচার্য শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বুমকে বলেন, "বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৈরি সার্চ কমিটি উপযুক্ত ব্যক্তিদের প্যানেল তৈরি করে। রাজ্য শিক্ষা দপ্তর রাজ্যপালের কাছে সেই প্যানেল থেকে তিনটি নাম সুপারিশ করে। তার মধ্যে থেকে রাজ্যপাল বেছে নেন একটি নাম।"
তিনি আরও বলেন, "পুরো প্রক্রিয়াটিই হয় বিশেষজ্ঞদের সার্চ কমিটি, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা দপ্তর, ও রাজ্যপালের সমন্বয়ের মাধ্যমে।"
পবিত্র সরকারের বক্তব্যটিই রয়েছে মঞ্জুরি কমিশনের ৭.৩.০ ক্লজে (২)।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডি.লিট উপাধি প্রসঙ্গ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়কে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারি নজরুল মঞ্চে ডি.লিট প্রদান করা হয়। বিষয়টি নিয়ে বেশ জলঘোলা হয় কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হলেন প্রথম ব্যক্তিত্ব যিনি বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে এই সন্মাননা পেয়েছেন। কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। বিরোধী দলগুলির তরফে মমতাকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি.লিট প্রদানের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা হয়।
আরেক রাজনীতিক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ডি.লিট সন্মাননা দেয় ২০০৭ সালে কিন্তু সে সময় জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রীর পদে ছিলেন না।
আরও পড়ুন: আমার বা অঞ্জনের ছবি নয়: প্রাক্তন আইএএস আধিকারিক আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়