সিরিয়ায় এক মহিলাকে প্রকাশ্যে খুন করার ভিডিও আফগানিস্তানের বলে ছড়াচ্ছে
বুম দেখে ভিডিওটি ২০১৫ সালের। আল-কায়দার সিরীয় শাখা আল-নুসরা এক মহিলাকে ব্যভিচারের অভিযোগে হত্যা করেছিল।
২০১৫ সালের একটি অস্বস্তিকর ভিডিও, যাতে আল-কায়দার সিরীয় (Syria) শাখা আল-নুসরত এক মহিলাকে প্রকাশ্যে কোতল করছে, সেটিকে ভুয়ো দাবি সহ আফগানিস্তানের (Afghanistan) ঘটনা বলে চালানো হচ্ছে, যেখানে নাকি তালিবানরা (Taliban) বাড়ির বাইরে পা দেবার অপরাধে এক মহিলাকে গুলি করে হত্যা করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত এপ্রিল মাসে আফগানিস্তান আক্রমণ করার ২০ বছর পরে ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সে দেশ থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেনl এর পর গত সপ্তাহেই তালিবান বাহিনী হেরাট ও কাবুল সহ আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকা দ্রুত কব্জা করে ফেলে।
তালিবান আফগানিস্তান পুনর্দখল করে নেওয়ার পরেই সে দেশের মহিলাদের প্রতি তাদের নিষেধমূলক নির্দেশাবলীর উপর, যথা আপাদমস্তক বোরখায় আবৃত থাকা, শিক্ষার প্রক্রিয়া থেকে নির্বাসিত করা এবং পুরুষ সঙ্গী ছাড়া বাড়ির বাইরে পা না দেওয়ার উপর বিশ্বের দৃষ্টি পড়েl অতীতে এই সব বিধি-নিষেধ না মানার দায়ে পত্রপাঠ মহিলাদের প্রকাশ্যে চাবুক মারার, এমনকী পাথর ছুঁড়ে হত্যা করার ঘটনাও সেখানে ঘটেছে।
বর্তমানে একটি হিন্দি ক্যাপশন দিয়ে ওই পুরনো ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে, যার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়ঃ "কোনও বুদ্ধিজীবী কি আমাদের জানাবেন, এটাই ইসলামের প্রকৃত স্বরূপ কিনা! অর্থাত্, যদি কোনও নারী তোমার কথামতো পোশাক না পরে, তাহলে তুমি তাকে হত্যা করবে! তালিবানি জমানার সন্ত্রাস শুরু হয়েছিল বাড়ির বাইরে বের হওয়া মহিলাদের হত্যা করার মধ্য দিয়ে l তালিবানি ভাবনায় মহিলা ও শিশুরা কখনওই নিরাপদ নয় l এই ধরনের ভাবনা এ দেশেও অনেকেরই আছে এবং আমাদের দাবি, সরকার এই সব লোকেদের অবিলম্বে দেশছাড়া করুক l"
আরও পড়ুন: ট্রামপলিনে লম্ফঝম্প করছে এখন তালিবান, পুরনো দৃশ্য দেখাল ক্যালকাটা নিউজ
তথ্য যাচাই
গুলিতে নিহত মহিলা—এই শব্দগুলি বসিয়ে খোঁজ করে আমরা দেখেছি একটি প্রতিবেদন—'রাকা নিঃশব্দে নিহত হচ্ছে', যা নাগরিক অধিকার-কর্মী ও সাংবাদিকদের একটি গোষ্ঠী সিরিয়ায় আল-কায়দার নির্যাতন বিষয়ে প্রকাশ করেছিল:
২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, সিরিয়ার ইদলিব এলাকার কাছে আল-মারা অঞ্চলে আল-নুসরা নামে আল-কায়দার এক সিরীয় গোষ্ঠী এক মহিলাকে ব্যভিচারের অভিযোগে প্রকাশ্যে খতম করেছিল, এটি তারই ভিডিওl এর পর আমরা আল-নুসরা প্রকাশ্যে মহিলাকে খতম করছে—এই শিরোনামে খোঁজ চালিয়ে ১৬ জানুয়ারি ভাইস প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাই, যাতে ওই ভিডিওটির স্ক্রিনশট দেওয়া ছিল এবং সিরীয় মানবাধিকার কমিশনকে উদ্ধৃত করে ঘটনাটির সত্যতাও প্রতিপন্ন করা হয়েছিলl ভাইস-এর রিপোর্ট অনুযায়ী "ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে সিরীয় আল-কায়দার শাখা আল-নুসরা-র মুখোশ-পরিহিত সদস্যরা এক মহিলাকে রাস্তায় ঘিরে ধরেছে l একটি লাল জ্যাকেট ছাড়া আপাদমস্তক কালো কাপড়ে আচ্ছাদিত ওই মহিলাকে হাঁটু মুড়ে বসে পড়তে দেখা যায় এবং মহিলাটি তাঁর ছেলেমেয়েদের একবার দেখতে চান, যে-অনুরোধ তারা প্রত্যাখ্যান করে" l সিরীয় এই মানবাধিকার সংগঠনটি ব্রিটেন-স্থিত একটি সংগঠন, যারা সিরিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলি নথিভুক্ত করে থাকেl
মানবাধিকার সংগঠনটির ওয়েবসাইটেও ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সংগঠনের অধিকর্তা রামি আবদুলরহমানকে উদ্ধৃত করে ঘটনাটির সত্যতা সমর্থন করা হয়।
২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি রয়টার্স প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়ঃ "আল-কায়দা থেকে ভেঙে বেরিয়ে এসে ইসলামি স্টেট ইরাক ও সিরিয়ায় অনেক জায়গা দখল করে নিয়েছে এবং সেখানে সিরীয় ও অন্য বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে যারাই তাদের নির্ধারিত কঠোর ইসলামের সংজ্ঞা থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তাদের মুণ্ডু কেটে দিচ্ছে, পাথর ছুঁড়ে হত্যাও করছে l তবে শুধু তারাই নয়, আল-নুসরা ফ্রন্ট, যারা কখনও পাশ্চাত্য রাষ্ট্র সমর্থিত বিদ্রোহীদের পাশে দাঁড়িয়ে সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, আবার কখনও বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধেও লড়াই করছে, তারাও 'আল্লাকে অপমান করা' কিংবা চুরি-বাটপারি করার অপরাধে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনমূলক শারীরিক শাস্তি বুঝিয়ে দিচ্ছে" l
আফগানিস্তানে তালিবান অভ্যুত্থান ও তার আনুষঙ্গিক সংঘর্ষ ও বিশৃঙ্খলার আবহেও সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে নানা রকম ভুয়ো তথ্য ও খবরের বান ডেকেছেl অনেকে এমন ভুয়ো ব্যঙ্গাত্মক প্রতিবেদনও শেয়ার করছে, যেখানে পুনর্দখলের প্রাক্কালে তালিবানরা নাকি মুখোশ পরে রণাঙ্গনে অবতীর্ণ এবং সেই সব খবরের সঙ্গে রকমারি পুরনো ছবিও জুড়ে দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিমানের ডানায় আফগান? কৃত্রিম দৃশ্য দেখাল নিউজ ১৮ বাংলা, পরে ভাঙল ভুল