সিংহ শাবক শুঁড়ে চাপিয়ে নিয়ে যাচ্ছে হাতি হাঁসজারু ছবিটি ফোটোশপ করা
বুম দেখে ১ এপ্রিল ২০১৮ এপ্রিল ফুলস্ ডে' উপলক্ষ্যে হাতি,সিংহী ও শাবকের মনগড়া ছবিটি ক্রুগার সাইটিংস থেকে টুইট করা হয়।
ঠিক যেন সুকুমার রায়ের আবল তাবোল! "হাঁস ছিল সজারু (ব্যাকরণ মানি না) হয়ে গেল 'হাঁসজারু' কেমন তা জানিনা।" এখানে অবশ্য সম্পাদনা ও প্রচারের ব্যাকরণ মেনেই নাদাভ অ্যাসেনড্রাইভার পরস্পর সম্পর্কহীন তিনটি ছবি সম্পাদনা করে তৈরি করলেন অতি খাসা বকচ্ছপ ছবি! আর সেই নকল ছবির সঙ্গে মনোহর গল্প বিকোচ্ছে সেই ২০১৮ সাল থেকে।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে এক সিংহীর (lioness) পাশে, এক হাতিকে (Elephant) যেন একটি সিংহ শাবককে (lion cub) শুঁড়ে চাপিয়ে জঙ্গলের রাস্তা পেরতে দেখা যায়। ফোটোশপ করা এরকম একটি 'হাঁসজারু' থুড়ি ভুয়ো (Fake) ছবি ফেসবুকে মনগড়া কাহিনী সমেত সহ শেয়ার করা হচ্ছে।
ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "এটি শতাব্দীর সেরা ৩ টি ছবির মধ্যে একটি। একটি সিংহী ও তার বাচ্চা জঙ্গলের বিচরণস্থল (Savanna) অতিক্রম করছিল, তবে অতিরিক্ত তাপমাত্রার ফলে বাচ্চাটির হাঁটাতে খুব অসুবিধা হচ্ছিল। বাচ্চাটি মারা যেতে পারে বুঝতে পেরে একটি হাতি তাকে শুঁড়ে তুলে নিয়ে সিংহীর পাশে পাশে হেঁটে জলাশয়ের কাছে নিয়ে যায়। আর আমরা তাদের বন্যপ্রাণী বলে থাকি।"
বুম দেখে ফেসবুকে একই দাবিতে ছবিটি ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখা যাবে এখানে, এখানে ও এখানে।
(ইংরেজিতে মূল ক্যাপশন, "This consider the best photo of 3 this century. A lioness and her cub where crossing the savannah, but the heat was excessive and the puppy was in great difficulty walking. An elephant realized that the cub would die and carried him in his trunk to a pool of water, walking beside his mother. And we call them wild animals.")
আরও পড়ুন: কানাডায় তাপপ্রবাহে দাবানল বলে গণমাধ্যম দেখাল ২০০৭ সালের গ্রিসের ছবি
তথ্য যাচাই
বুম গুগলে রিভার্স সার্চ করে দেখে ১ এপ্রিল ২০১৮ ক্রুগার সাইটিংস টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে মনগড়া কাহিনীর সহ ছবিটি টুইট করা হলে ব্যাপকভাবে সোশাল মিডিয়ায় ছবিটি ভাইরাল হয়।
পরের দিন ২ এপ্রিল ২০১৮ ক্রুগার সাইটিংস টুইটার অ্যকাউন্ট পরিচালনাকারী নাদাভ অ্যাসেনড্রাইভার (Nadav Ossendryver) টুইট করে জানান এই ছবি আসলে "এপ্রিল ফুল ডে"-এর কৌতুক।
"হাতিমির দশা দেখ"
রিভার্স সার্চ করলেই উইকিমিডিয়া কমন্সে একক হাতির ছবিটি খুঁজে পাওয়া যাবে। ওই সাইটের তথ্য অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রুগার জাতীয় পার্কে হাতির ছবিটি ২০০৫ সালের ২০ অগস্ট ওই সাইটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
উইকিমিডিয়া কমন্সে থাকা হাতির ছবি এবং ভাইরাল ছবির হাতির চারপাশের পরিবেশ ও আঙ্গিক একই।
সিংহীর ছবির হদিস মিলবে লন্ডলজি নামের একটি ওয়াইল্ডলাইফ ব্লগিং ওয়েবসাইটে। ২০১২ সালের একটি ফটো জার্নালে সিংহীর ছবিটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ভাইরাল ছবি ও সিংহীর ছবি দুটি পরস্পর হুবহু মিলে যায়।
আন্তর্জাতিক তথ্য-যাচাইকারী সংস্থা স্নপস ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ প্রকাশিত তথ্য-যাচাইয়ের প্রতিবেদনে জানায় অস্ট্রেলিয়ার ভেরিবি ওপেন রেঞ্জ চিড়িয়াখানাতে তোলা হয় সিংহ শাবকের ছবিটি।
এ যেন "চাপিল বিছার ঘাড়ে, ধরে মুড়ো সন্ধি।"
আরও পড়ুন: শিকল বাঁধা ভাইরাল ছবির বৃদ্ধ ব্যক্তি স্ট্যান স্বামী নন