প্রাইমারি টেট আন্দোলনে হাওড়ার বিজেপি কর্মী? ছবি ঘিরে ছড়াল বিভ্রান্তি
বুম দেখে উচ্চমাধ্যমিক পাশ সুদাম গিরি প্রাইমারি ২০১৪ টেট তালিকাভুক্ত আন্দোলনকারী নন। দশমীতে তিনি মিষ্টি দিতে যান মঞ্চে।
সোশাল মিডিয়ায় ভারতীয় জনতা দলের (BJP) কর্মী সুদাম গিরির (Sudam Giri) ছবি ঘিরে বিভ্রান্তিকর প্রচার হচ্ছে যে, তিনি টেট পাশ না করেই চাকুরিপ্রার্থী সেজে ২০১৪ প্রাইমারি (Primary TET) টেট (2014 TET) পাশ তালিকাভুক্ত আন্দোলনকারী সেজেছেন।
বুম ভাইরাল হওয়া ছবির ব্যক্তি সুদাম গিরির সঙ্গে কথা বলে জেনেছে, তিনি কোনওভাবে প্রাইমারি টেট ধর্না-আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নন। আন্দোলনকারীদের প্রতি সহমর্মীতা জানাতে দশমীর মিষ্টি দিতে সেদিনই প্রথম সুদাম ওখানে যান।
পশ্চিমবঙ্গে স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি জট ঘিরে চাকুরিপ্রার্থীদের আন্দোলন সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে ইডির হাতে গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ স্কুল সার্ভিস কমিশনের কর্মকর্তারা। নিয়োগ জট কাটিয়ে চাকুরিপ্রার্থীদের ধর্না-আন্দোলন অব্যাহত। ছবিগুলি এই প্রেক্ষিতেই ছড়ানো হচ্ছে।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ফেসবুক পোস্টে তিনটি ছবি শোয়ার করা হচ্ছে। প্রথম ছবিতে আন্দোলনকারীদের পাশে বসা হলুদ টিশার্ট পরা এক যুবকের হাতে পোস্টার দেখা যায়, "আমরা টেট পাশ প্রশিক্ষিত তবুও আমরা বঞ্চিত?" পাশে থাকা সাদা বোর্ডে লেখা রয়েছে, "২০১৪ প্রাইমারি টেট পাশ নট ইনক্লুডেড প্রাথীদের ধর্না মঞ্চের আজ ৫১ তম দিন।"
অন্য দুটি ছবিতে দেখা যায় সাদা ও হলুদ পোশাকে গেরুয়া পতাকা সহ বিজেপি কর্মীর প্রচার ও অন্যান্য কর্মসূচিতে তিনি অংশ নিয়েছেন।
ভাইরাল হওয়া ফেসবুক পোস্টটিতে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "শিবপুরে (৩৩নং ওয়ার্ড) একটা মাংসের দোকান আছে টেনেটুনে এইট পাশ করেছি। না মানে ওই আর কি। মিডিয়া আসছে খবর এলে ধর্না মঞ্চে গিয়ে বসি। জল মেশানো ব্যাপার তাহলে।"
বুম দেখে ফেসবুকে ছবিটি একই দাবি সহ ব্যাপকভাবে ভাইারল হয়েছে। এরকম দুটি ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে ও এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ব্যক্তি সুদাম গিরি ৫ অক্টোবর দশমীর দিন "২০১৪ প্রাইমারি টেট পাশ নট ইনক্লুডেড একতা মঞ্চ" আন্দোলনকারীদের ধর্না মঞ্চে মিষ্টি বিতরণ করতে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছবি তোলেন। সুদাম প্রাইমারি টেট পাশ নন।
৫ অক্টোবর দশমীর দিন আন্দোলনকারীদের ধর্না মঞ্চে মিষ্টি বিতরণ করতে যান হাওড়া শিবপুর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১২ জন ব্যক্তি। ওই দলে থাকা পিনাকী ব্যানার্জীর সঙ্গে কথা বলে বুম জানাতে পারে সেদিন কোনও দলীয় পতাকা ব্যবহার করা হয়নি। "আমরা অরাজনৈতিক ভাবেই সেদিন ওই আন্দোলন মঞ্চে যাই। দলের কোনও পতাকা আমাদের সঙ্গে ছিল না। সুদামও আমাদের সঙ্গে যায়। আন্দোলন মঞ্চের পাশে পুলিশ পাহারা রয়েছে। ওদের জিজ্ঞাসা করেও একই তথ্য পাবেন।"
দশমীর দিন মিষ্টি বিতরণের বিভিন্ন ছবি বুমকে দেন পিনাকী। সেই ছবিতে সুদামকে মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যাচ্ছে।
বুম ভাইরাল ছবির ব্যক্তি সুদাম গিরির সঙ্গে কথা বলে। সুদাম বুমকে বলেন, "আমি টেট পাশ নই। আমি কোনওভাবে আন্দোলনে যুক্ত নই। আন্দোলনকারীদের প্রতি সহমর্মীতা জানাতে সেদিনই আমি প্রথম ওখানে যায়। আমাদের সঙ্গে কোনও দলীয় পতাকা ছিল না। এটি কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিও ছিল না।"
সুদামের শিবপুর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাশীনাথ চ্যাটার্জি লেনে মাংসের দোকান রয়েছে। তিনি শিবপুর দিনবন্ধু ইনস্টিটিশান ব্রাঞ্চ স্কুল থেকে ২০০৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন।
"আন্দোলনকারীদের প্রতি সহমর্মীতা জনাতেই ছবি তুলি। পোস্টার হাতে ধরা ছবিটি আমার হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাসে শেয়ার করেছিলাম। তৃণমূলের কেউ সেখান থেকে তুলে নিয়ে এই প্রচার চালাচ্ছে," বুমকে বলেন সুদাম।
"রাজ সুদাম গিরি" নামে থাকা সুদামের ফেসবুক পেজে বিজেপির দলীয় কাজে অংশ নেওয়ার বিভিন্ন ছবি দেখা যাবে এখানে ও এখানে।
বুমকে পিনাকী ও সুদাম নিশ্চিত করেছেন তাঁরা বিজেপি কর্মী।
বুম মাতঙ্গিনী হাজরা মূর্তির পাদদেশে চলা আন্দোলনে যুক্ত ২০১৪ প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ মেধা তালিকায় ঠাঁই পাওয়া চাকুরিপ্রার্থী, অচিন্ত্য সামন্তের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ২০১৪ প্রাইমারি টেট পাশ নট ইনক্লুডেড একতা মঞ্চের আন্দোলন সোমবার ৫৫ দিনে পড়ল।
অচিন্ত্য বুমকে বলেন, "এমন অনেক ব্যক্তি আমাদের আন্দোলনকে সমর্থন করতে আসেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিও এসেছিলেন, বিজয়া দশমী উপলক্ষ্যে আন্দোলনকারীদের হাতে মিষ্টির প্যাকেট তুলে দেন। কিছুক্ষন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সময় কাটান। এর সাথে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।"
"সমর্থন জানাতে বিভিন্ন সময়ে আমাদের ধর্নামঞ্চে বিভিন্ন দলের নেতা, কর্মীরা এসেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই পোস্টার হাতে আন্দোলকারীদের পাশে বসেছেন। তাদের সাবাই কি টেট পাশ চাকুরিপার্থী? সোশাল মিডিয়ায় আমাদের অন্দোলন ঘিরে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। রাজনৈতিক রঙ লাগানোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে, যেটা শিক্ষিত সভ্য সমাজে কাম্য নয়," অচিন্ত্য সামান্ত।
বর্তমানে রাজ্য সরকার পোষিত বিদ্যালয়ে চাকুরি নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগ ও জট ঘিরে টেট উত্তীর্ণ চাকুরিপ্রার্থীরা দু'জায়গায় আন্দোলন চালাচ্ছেন। ধর্মতলার মেয়ো রোডে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে একটি মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক ও অন্যটি মাতঙ্গিনী হাজরা মূর্তির পাদদেশে চলা প্রাথমিক স্কুল সংক্রান্ত।
বুম ধর্মতলার মেয়ো রোডের আন্দোলনকারী ইলিয়াস বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বুমকে বলেন, "আমরা নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর এসএলএসটি উত্তীর্ণ মেধাতালিকাভুক্ত চাকুরিপ্রার্থী। ছবির ব্যক্তি আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নয়। সংশ্লিষ্ট ছবিতে ২০১৪ প্রাইমারি টেটের পোস্টার রয়েছে। ওনাদের আন্দোলন চলছে মাতঙ্গিনী হাজরা মূর্তির পাদদেশে।" এই আন্দোলন ৫৭৫ দিনে পড়ল সোমবার।