না, এই ছবিটি হিন্ডেনবার্গের নাথান অ্যান্ডারসনের সঙ্গে রাহুল গাঁধী নন
বুম দেখে রাহুল গাঁধীর সঙ্গে হিন্ডেনবার্গের প্রতিষ্ঠাতা নাথান অ্যান্ডারসন নেই, তিনি জার্মান রাজনীতিক নীলস্ অ্যানেন।
একটি পুরনো ছবিতে রাহুল গাঁধীর (Rahul Gandhi) পাশে দাঁড়ানো এক ব্যক্তিকে ভুল ভাবে হিন্ডেনবার্গ (Hindenburg Research) গবেষণার প্রতিষ্ঠাতা নাথান অ্যান্ডারসন (Nathan Anderson) হিসাবে শনাক্ত করে ভাইরাল করা হয়েছে।
বুম যাচাই করে দেখে ওই ব্যক্তিটি জার্মান সোশাল ডেমোক্রাটিক পার্টির রাজনীতিক নীলস্ অ্যানেন (Niles Annen)।
গত ২৪ জানুয়ারি নিউ ইয়র্কের সংস্থা ‘হিন্ডেনবার্গ গবেষণা’ এশিয়ার শীর্ষ ধনকুবের আদানির তরফে শেয়ার বাজারে কারিকুরি করা সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট পেশ করে, যার ফলে শেয়ার বাজারে আদানির শেয়ারগুলিতে ধস নামে এবং তাঁর ‘মার্কেট ক্যাপ’ থেকে ১০০০ কোটি ডলার ফাঁকা হয়ে যায় l আদানির কোম্পানি বাধ্য হয় তার ‘এফপিও’ (নতুন শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া) বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিতে এবং আদানির ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ১১৩০ কোটি ডলার থেকে কমে এক ধাক্কায় নেমে গিয়ে ৬১৯ কোটি ডলারে দাঁড়ায়।
এই সবের মধ্যেই জার্মান রাজনীতিবিদ অ্যানেন-এর সঙ্গে রাহুল গাঁধীর একটি পুরনো ছবি দেখিয়ে কিছু লোক তাঁকে হিন্ডেনবার্গ-এর অ্যান্ডারসনের সঙ্গে গুলিয়ে দিয়ে ইঙ্গিত দেবার চেষ্টা চালাচ্ছে যে, আদানির এই কেলেংকারি ফাঁস হওয়ার পিছনে রাহুলের হাত রয়েছে।
ছবিটা ভাইরাল করে তার যে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, সেটি এই রকম, “রাহুল বাবার সঙ্গে যিনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তিনি হিন্ডেনবার্গের প্রধান নাথান অ্যান্ডারসন। তাহলে এখন আপনারা বুঝতেই পারছেন কে দেশের শিল্পপতি আদানির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত! স্রেফ ক্ষমতা পাওয়ার জন্যে এ ভাবে দেশের ক্ষতি করা হচ্ছে। ধিক্ এই রাজনীতিকে!”
ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে।
(মূল হিন্দিতে ক্যাপশন: "ये जो राहुल बाबा के साथ खड़ा है न यह हिंडनबर्ग का चीफ नाथन एंडरसन है। अब आप समझ गए है कि देश के उद्योगपति अडानी के खिलाफ जो षडयंत्र रचा गया वह किसने कराया है। सत्ता की खातिर देश का नुकसान कराया। धिक्कार है ऐसी राजनीति को ।")
ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে।
টুইটারেও এই একই পোস্ট ছড়ানো হচ্ছে।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখলো, ছবিতে রাহুলের সঙ্গে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনি হিন্ডেনবার্গ গবেষণার প্রতিষ্ঠাতা নাথান অ্যান্ডারসন নন, তিনি হলেন জার্মানির হামবুর্গ-এর রাষ্ট্রমন্ত্রী, জার্মান সোশাল ডেমোক্রাটিক পার্টির রাজনীতিক নীলস্ অ্যানেন।
ছবিটির খোঁজ করতে গিয়ে ২০১৮ সালের ২৩ অগস্ট এনডিটিভি-র একটি প্রতিবেদনে এটির হদিশ মিললো। তাতে লেখা ছিল, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে রাহুল প্রবাসী ভারতীয়দের কাছে সফর করার সময় জার্মানির রাষ্ট্রমন্ত্রী নীলস্ অ্যানেন-এর সঙ্গে তাঁর বার দুয়েক সাক্ষাত হয় এবং তিনি ২০১৮ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত কেরলের বিধ্বংসী বন্যা নিয়েও তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেন।
এই অ্যানেন ২০২১ সাল থেকে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোল্জ-এর সরকারে আর্থিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন বিষয়ত যুক্তরাষ্ট্রীয় মন্ত্রিসভায় সংসদীয় রাষ্ট্রসচিব হিসাবে রয়েছেন।
এনডিটিভি-র ওই প্রতিবেদনের ছবিটি ২০১৮ সালের ২২ অগস্ট ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নিজস্ব টুইটার হ্যান্ডেল থেকে টুইট করা হয়েছিল।
এমনকি নীলস্ অ্যানেন নিজেও টুইটারে এসে এই ছবিটি পোস্ট করেছিলেন, যেখানে তিনি রাহুল গাঁধীকে ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং ঘনিষ্ঠ মিত্র’ হিসাবেও চিহ্নিত করেন।
নীচে নাথান অ্যান্ডারসন এবং নীল্স অ্যানেন-এর ছবি পাশাপাশি দেওয়া হলো।