শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সম্পাদিত ছবি ছড়াল ভুয়ো দাবিসহ
বুম দেখে ছবিটি ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা যখন লুন্ড ইউনিভার্সিটি যান সেখানে তোলা। মূল ছবিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে দেখা যায় না।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi) একটি সম্পাদিত ছবি ভুয়ো দাবি সমেত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে সম্প্রতি। ব্যবহারকারীদের একাংশ ভারত-চীন সীমান্ত নিয়ে উত্তেজনার সঙ্গে যুক্ত করে ভুয়ো দাবি করেছেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী লাদাখে গিয়ে ছবিটি তুলেছেন। এছাড়াও, ছবির উৎস হিসাবে হিন্দুস্তান টাইমসকে উল্লেখ করা হয়েছে।
বুম দেখে ভাইরাল ছবি ২০০৯ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন শেখ হাসিনার সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটির সফরের সময় তোলা। মূল ছবিতে হাসিনার পাশে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মোদীকে দেখা যায় না।
২০২৪ সালের অগাস্ট মাসে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জেরে শেখ হাসিনা পরিচালিত আওয়ামী সরকারের পতনের পর, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভারতে আসেন। বাংলাদেশে হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ভারতকে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য বার্তাও পাঠিয়েছে। ১৭ জানুয়ারি,২০২৫-এ আওয়ামী লীগের পোস্ট করা একটি অডিওয় হাসিনা তার হত্যার চক্রান্তের কথা উল্লেখ করেন।
ভাইরাল ছবিতে বরফে ঢাকা কোনও জায়গায় শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদীকে শীত পোশাকে দেখা যায়। একটি ফেসবুক পেজ ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে দাবি করে, "ভারত চিন সিমান্ত উত্তেজনায় শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী। - হিন্দুস্তান টাইমস"।
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
একই ছবি শেয়ার করে আরও এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ক্যাপশনে লেখেন, "ভারত চিন সিমান্ত উত্তেজনার মধ্যে লাখাদে গিয়েছে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী - হিন্দুস্তান টাইমস কুচ তো গরবর হ্যা বাবাহ।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই: ভাইরাল ছবি সম্পাদিত
বুম ছবিটির সত্যতা যাচাই করতে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। সার্চের ফলে আমরা সুইডিশ সাউথ এশিয়ান স্টাডিস নেটওয়ার্কের প্রাক্তন সহপরিচালক লার্স একলুন্ডের ওয়েবসাইটে আমরা শেখ হাসিনার ভাইরাল ছবিটি দেখতে পাই। তবে, ওই ছবিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দেখা যায় না।
ছবির সঙ্গে প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে জানা যায় ১৯ ডিসেম্বর, ২০০৯-এ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটি সফরে যান যেখানে তিনি বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে বক্তৃতা রাখেন।
সেসময় হাসিনা ডেনমার্কের কোপেনহাগেনে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের সম্মেলনেও যোগ দেন। সেখান থেকেই পড়শি দেশ সুইডেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বোন রেহানা সিদ্দিক, বোনঝি আজমিনা সিদ্দিক, রাষ্ট্রদূত মহম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং ২০ জন বাংলাদেশী সাংসদ উপস্থিত ছিলেন।
রিপোর্টটি দেখুন এখানে।
আমরা গুগলে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে ১৯ ডিসেম্বর, ২০০৯ প্রকাশিত বিডি নিউজ ২৪-এর একটি প্রতিবেদন পাই যেখানে হাসিনার কোপেনহাগেনের জলবায়ু কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে হাসিনার লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সফরের বিষয়েও উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
নীচে ভাইরাল ছবি ও হাসিনার মূল ছবির একটি তুলনা দেওয়া হল ।
দুটি ছবির তুলনা থেকে স্পষ্ট হয়, ভাইরাল ছবিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ছবি সম্পাদনা করা হয়েছে।
এছাড়াও, আমরা হিন্দুস্তান টাইমস বা অন্য কোনও বিশ্বাসযোগ্য সংবাদমাধ্যমে শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কেন্দ্র করে এই ধরণের কোন ছবিসহ প্রতিবেদন দেখতে পাই না।