সুরাতের এক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সাম্প্রদায়িক দাবিতে ভাইরাল
বুম এবিষয়ে স্থানীয় পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা জানান ঘটনার মধ্যে কোনও সাম্প্রদায়িক রঙ নেই।
অস্বস্তিকর এক গুচ্ছ ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়েছে, যাতে এক ব্যক্তিকে একটি মেয়ের গলার নলি কেটে দেওয়ার আগে গলায় ছুরি ধরে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ভুয়ো ক্যাপশন দিয়ে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক মোড়কে (Communal Spin) পেশ করার চেষ্টা হয়েছে।
বুম বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জেনেছে, ঘটনাটি সুরাতে ঘটেছে, তবে এর মধ্যে কোনও সাম্প্রদায়িক রঙ নেই, কেননা আক্রান্ত ও আক্রমণকারী উভয়েই একই সম্প্রদায়ের সদস্য।
একটি ভাইরাল ভিডিওয় দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি একটি মেয়ের গলায় ছুরি ধরে রয়েছে এবং আশপাশের লোকদের সরে যেতে হুঁশিয়ার করছে। অন্য একটি ভিডিওতে মেয়েটিকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে, যার পায়ের কাছে চাপ-চাপ রক্ত।
ভিডিওর ওপর লেখা রয়েছে, "গুজরাটের সুরাতে বর্বরোচিত প্রেম-জেহাদ উদযাপন, ভ্যালেন্টাইন্স ডে!"
হিন্দিতে একটি দীর্ঘ ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, "গুজরাটের সুরাতে একটি হিন্দু মেয়ের গলা প্রকাশ্য দিবালোকে এক মুসলিম যুবক ছুরি দিয়ে কেটে দেয়, কারণ মেয়েটি ইসলাম ধর্মে অন্তরিত হতে রাজি হয়নি। হিন্দুরা জেগে ওঠো, তোমাদের ছেলেমেয়েদের এ ভাবে পঙ্গু হতে দিও না। আগামী দিনে তোমাদেরও পালা আসবে আর তখন তোমাদের প্রতিবেশীরাও না দূরে দাঁড়িয়ে দেখে!"
অস্বস্তিকর হওয়ায় বুম এই ভিডিওটি তার প্রতিবেদনের অন্তর্ভুক্ত করেনি।
পোস্টটি দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন, তবে সতর্ক হয়ে দেখবেন।
ফেসবুক-এর অনেক পেজেই একই ক্যাপশন দিয়ে ভিডিওটি শেয়ার হয়েছে।
টুইটারেও ভিডিও সহ পোস্টটি ভাইরাল করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের আকাশে রুশ প্যারাট্রুপার দাবিতে ছড়াল ২০১৬ সালের ভিডিও
ঘটনাটি ঠিক কী ঘটেছিল?
বুম খোঁজখবর চালিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২-এর 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এ ঘটনাটির একটি প্রতিবেদন পায়, যেটি গুজরাটের সুরাতে পাসোদারা এলাকায় ঘটেছিল ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখে। প্রতিবেদনে লেখা হয়, কামরেজ পুলিশ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২১ বছরের এক তরুণীকে গলা কেটে খুন করার দায়ে ২০ বছরের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে ওই তরুণী গ্রীষ্মা ভেকারিয়া ওই যুবক ফেনিল গোয়ানির প্রেম বা বিয়ের প্রস্তাব খারিজ করে দেয়, যা ওই যুবককে ক্রুদ্ধ করে তোলে।
খবরে লেখা হয়, যুবকটি তরুণীকে গলা কেটে খুন করার পর নিজের কব্জির শিরা কেটে আত্মহত্যা করারও চেষ্টা করে।
সবচেয়ে বড় কথা, কোনও প্রতিবেদনেই এ কথা উল্লেখ করা হয়নি যে যুবকটি মুসলিম সম্প্রদায়ের।
বুম-এর তরফে কামরেজ থানার সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়। সেখানে মোতায়েন পুলিশ অফিসার বুমকে জানান—খুনি যুবক এবং খুন হওয়া তরুণী, দুজনেই একই সম্প্রদায়ের। তাই এখানে কোনও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের গল্প নেই।
আরও পড়ুন: 'মাথ্রুভূমি' রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বলে দেখাল ভিডিও গেম আর্মা-৩-এর দৃশ্য