উত্তরপ্রদেশে বেআইনি বাড়ি ভাঙার ভিডিও মসজিদ ভাঙা হচ্ছে বলে ভাইরাল
বুম স্থানীয় আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা নিশ্চিত করেন যে, দৃশ্যটি মোটেই মসজিদের নয়, একটি সাধারণ বাড়ির সামনের অংশ।
মসজিদের মতো দেখতে একটি ইমারত এক্সক্যাভেটর দিয়ে ভেঙে (demolition) ফেলা হচ্ছে, এমন একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিতে যে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে তাতে বিভ্রান্তিমূলক দাবি করা হয়েছে যে, উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) উন্নাওয়ে (Unnao) জবরদখল করে গড়ে ওঠা কাঠামো ভেঙে ফেলা হচ্ছে।
বুম অনুসন্ধান করে দেখতে পায় যে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে সত্যিই উন্নাওয়ের শোরামৌ অঞ্চলে একটি কাঠামো ভেঙ্গে ফেলতে দেখা যাচ্ছে, কিন্তু মসজিদ ভেঙে ফেলার দাবিটি মিথ্যে। বুম উন্নাওয়ের জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলে এবং তিনি ভাইরাল হওয়া ভিডিওর দাবিটি মিথ্যে বলে জানিয়ে দেন।
ভাইরাল হওয়া ক্লিপে এক্সক্যাভাটর দিয়ে একাধিক কাঠামো ভেঙ্গে ফেলতে দেখা যাচ্ছে। এগুলির মধ্যে একটি বাড়ির উপর গম্বুজ রয়েছে এবং সেটিকে অনেকটা মসজিদের মত দেখতে।
যে টুইটে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে, তাতে হিন্দিতে লেখা একটি ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "উন্নাওয়ের যে ছাগল বদ্রিনাথকে বদিরুদ্দিন শাহ'র জায়গা বলেছিল সেটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে সঙ্গে আশেপাশের বাড়িও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এফআইআর করা হলে তাকে বৈধ কাগজ দেখাতে বলা হয়। ওই মসজিদ এবং বাড়িগুলি অবৈধ জমির উপর তৈরি করা হয়েছিল।"
(হিন্দিতে লেখা মূল টুইট: उन्नाव वाला बकरा जो बद्रीनाथ को बदरुदीन शाह की जगह बता रहा था उसके मस्जिद और आसपास के घर उड़ा दिए , fir दर्ज की और कागज दिखाने को बोला गया अवैध बनी थी मस्जिद और घर। योगी जी वाह योगी जी)
এই একই ভিডিও ফেসবুকেও একই দাবির সঙ্গে ভাইরাল হয়েছে।
এ রকম একটি ফেসবুক পোস্টে যে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে তার অনুবাদ, "তাদের কাগজ দেখাতে বলা হয়... তার পর জেসিবি আনা হয়। মসজিদ এবং আশেপাশের বাড়িগুলি ভেঙে ফেলা হয়। এফআইআর করা হয়। ওই মসজিদ এবং বাড়িগুলি অবৈধ জমির উপর তৈরি করা হয়েছিল"।
(হিন্দিতে মূল লেখা: #कागज दिखाने को बोला था.......... और बस #JCB आ गई। उसके मस्जिद और आसपास के घर उड़ा दिए , fir दर्ज की और कागज नहीं दिखा पाए। अवैध बनी थी मस्जिद और घर)
তথ্য যাচাই
বুম 'उन्नाव अतिक्रमण वीडियो' এই হিন্দি শব্দগুলি দিয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে এবং এই ঘটনার উপর এবিপি গঙ্গার একটি প্রতিবেদন দেখতে পায়। ২৬ জুলাই প্রকাশিত এবিপি প্রতিবেদনে এই ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখানো হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয় উন্নাওয়ের যে, ভিডিওটি উত্তরপ্রদেশের উন্নাও জেলার শোরামৌ অঞ্চলের। সেখানে উত্তরপ্রদেশ সরকারের জলশক্তি বিভাগ জমি মাফিয়াদের হাত থেকে ২.৫ একর জমি মাফিয়াদের হাত থেকে উদ্ধার করে।
ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে আমরা আরো কিওয়ার্ড সার্চ করি এবং এই বিষয়ে অনেকগুলি প্রতিবেদন দেখতে পাই। প্রতিবেদনগুলি পড়তে পারেন এখানে এবং এখানে।
এই ঘটনার উপর নিউজ-১৮-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয় যে, জমি মাফিয়ারা লখনউ-কানপুর হাইওয়ের উপর সেচ দফতরের জমি বেআইনি ভাবে বিক্রি করে দেয়। পরে ওই জায়গার উপর বাড়ি এবং দোকান তৈরি করা হয়। গত বছর জেলা পঞ্চায়েত সদস্য অরুণ সিংহ এই জবরদখলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
ইতিমধ্যে ২৬ জুলাই সিএমও থেকে নির্দেশ আসে এবং ওই জমি খালি করার কাজ শুরু হয়। তার পর বাড়িগুলি ভেঙে ফেলা হয়।
২৬ জুলাই উত্তর প্রদেশ সরকারের সেচ দফতরের সরকারি টুইটার হ্যান্ডেল থেকেও টুইট করা হয়। সঙ্গে হিন্দিতে লেখা একটি ক্যাপশন দেওয়া হয়। ওই ক্যাপশনের অনুবাদ, "মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী @myogiadityanath জীর নির্দেশে এবং মাননীয় জলশক্তি মন্ত্রী ড. @bjpdrmahendra'র নেতৃত্বে সেচ দফতর উন্নাওয়ে জমি মাফিয়াদের হাত থেকে ২.৫ একর জমি উদ্ধার করে।"
(হিন্দিতে মূল লেখা: माननीय मुख्यमंत्री श्री @myogiadityanath जी के निर्देशन एवं माननीय जलशक्ति मंत्री डॉ. @bjpdrmahendra के नेतृत्व में जनपद उन्नाव में सिंचाई विभाग द्वारा अतिक्रमण हटाओ अभियान के तहत भूमाफियाओं से मुक्त कराई गई 2.5 एकड़ जमीन!)
এই সব প্রতিবেদনে কোথাও মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার কথা বলা হয়নি।
বুম এর পর উন্নাওয়ের জেলাশাসক রবীন্দ্র কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। কুমার জানান যে, ওই জমিটি সেচ দফতরের, এবং কয়েক বছর ধরে ওই জমি জবরদখল করে রাখা হয়েছিল। কুমার বুমকে জানান, "ভিডিওতে এই সব বেআইনি ইমারত ভেঙে ফেলার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।"
জেলাশাসক আরও জানান যে, ওই জায়গায় মসজিদ বা অন্য কোনও ধর্মীয় ইমারত ছিল না। কুমার জানান যে, ভিডিওতে যে কাঠামোটি দেখে মসজিদ বলে মনে হচ্ছে, সেটি আসলে একটি সোসাইটির সামনের অংশ। ওই অংশে একটি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদ ভাঙার বিষয়টি কুমার সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেন।
শোরামৌ-এর এক স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে বুম কথা বলে। আজাদ কুশোয়া নামে ওই স্থানীয় বাসিন্দা জানান যে, ভাইরাল হওয়া দাবিটি মিথ্যে। তিনি আরও জানান, "এই অঞ্চলে কোনও মসজিদ নেই।"