বিবেক অগ্নিহোত্রী কি দ্য কাশ্মীর ফাইলসের লাভের ২০০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে দান করেছেন?
বুম ভাইরাল হওয়া বার্তাটির ব্যাপারে বিবেক অগ্নিহোত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান বিষয়টি নিয়ে তাঁর কোনও ধারণা নেই।
একটি বার্তায় দাবি করা হয়েছে যে, চলচ্চিত্র পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী (Vivek Agnihotri) তাঁর ছবি 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস'-এর (The Kashmir Files) লভ্যাংশ থেকে ২০০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে (PM Relief Fund) দান করেছেন। সোশাল মিডিয়ায় বার্তাটি বিপুল ভাবে শেয়ার করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন যখন প্রকাশ করা হচ্ছে, তখন পর্যন্ত বুম এমন কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পায়নি যাতে বোঝা যায় যে, অগ্নিহোত্রী বা দ্যা কাশ্মীর ফাইলস-এর প্রযোজক এই ছবিটির আয় থেকে প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে কোনও টাকা দান করেছেন। অগ্নিহোত্রী বা তাঁর টিমের কোনও সদস্যও এ ধরনের কোনও মন্তব্য করেননি। একটি সাক্ষাৎকারে অগ্নিহোত্রী উল্লেখ করেছিলেন যে, তাঁরা, 'কোভিড-১৯'-এর সময় বিপন্ন মানুষের জন্য টাকা তুলেছিলেন।' কিন্তু এই দাবি বুম যাচাই করে দেখেনি।
বুম যখন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে অগ্নিহোত্রীর কাছে এই বার্তাটি সত্যতা সম্পর্কে জানতে চায়, তিনি বলেন, "এ বিষয়ে আমার কোনও ধারণাই নেই।"
'কাশ্মীর ফাইলস' ছবিটি নিয়ে ক্রমাগত রাজনৈতিক চাপানউতোর চলার ফলে ছবিটি বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে সংবাদ শিরোনামে রয়েছে। দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী আম আদমি পার্টির নেতা মনীশ সিসোদিয়া বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন যে, বিজেপি যেখানে শুধুমাত্র সিনেমাটি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে, সেখানে আপ কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিয়ে সত্যি চিন্তিত। তিনি আরও দাবি করেন যে, ছবিটির আয় থেকে ২০০ কোটি টাকা কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কল্যাণার্থে, এবং নতুন করে তাঁদের বাড়ি তৈরির কাজে ব্যবহার করা উচিত। বার্তাটি এই পরিপ্রেক্ষিতেই ভাইরাল হয়েছে।
হিন্দিতে লেখা বার্তাটির অনুবাদ, "কাশ্মীর ফাইলসের আয় থেকে মোট ২০০ কোটি টাকা প্রাইম মিনিস্টার্স রিলিফ ফান্ডে দেওয়া হয়েছে। বিবেক অগ্নিহোত্রীকে অভিনন্দন।"
(হিন্দিতে মূল লেখা: प्रधानमंत्री राहत कोष में कश्मीर फाइलों का पूरा संग्रह 200 करोड़ दान करने पर विवेक अग्निहोत्री को नमन)
পোস্টটি দেখার জন্য ক্লিক করুন এখানে।
ফেসবুকেও ছবিটি শেয়ার করা হয়েছে।
পোস্টটি দেখার জন্য ক্লিক করুন এখানে।
আরও পড়ুন: বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের ছবির সঙ্গে বিভ্রান্তিকর দাবিতে জুড়ল পেট্রোলের দাম
তথ্য যাচাই
বুম লক্ষ করে যে, হোয়াটসঅ্যাপ সহ আন্যান্য সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভাইরাল হওয়া মেসেজটি বিপুল ভাবে শেয়ার করা হয়েছে। 'দ্য কাশ্মীর ফাইলস'-এর আয় থেকে ২০০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে দান করার এই দাবি বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করা হয়, কিন্তু এই বিষয়ে কোনও নির্ভরযোগ্য সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অগ্নিহোত্রী, তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী পল্লবী যোশী এবং প্রযোজক অভিষেক আগরওয়ালের এই ছবিটি তোলা হয়।
কাশ্মীর ফাইলসের টিম-এর মোদির সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে ২০২২ সালের ১২ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই একই ছবি আমরা দেখতে পাই। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, প্রধানমন্ত্রী সিনেমাটির জন্য তাঁদের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু সেই প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে টাকা দেওয়ার ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
একই কথা উল্লেখ করে ২০২২ সালের ১২ মার্চ প্রযোজক অভিষেক অগ্রবাল এই একই ছবি টুইট করেছেন।
টুইটটি দেখার জন্য ক্লিক করুন এখানে।
এ ছাড়া ২০২২ সালের ২৬ মার্চ কোইমোইতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। একটি সাক্ষাৎকারের সময় রেডিও এবং টেলিভিশন উপস্থাপক সিদ্ধার্থ কান্নানের করা একটি প্রশ্নের বিবেক অগ্নিহোত্রী এবং তাঁর স্ত্রী পল্লবী যোশী যে উত্তর দেন এই প্রতিবেদনটি ছিল তা নিয়ে।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, অগ্নিহোত্রী সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সাহায্য করে চলেছি। যখন সেবার কাজ করছি, আমি তখন সেই কথা বলা পছন্দ করি না। আমরা অনেক দিন ধরে এই কাজ করছি এবং ভবিষ্যতেও করব। এটা শুধুমাত্র আমাদের এবং ওঁদের মধ্যেকার ব্যাপার এবং এই বিষয়ে তৃতীয় কোনও ব্যক্তির কাছে আমার কোনও দায়বদ্ধতা নেই।"
তাঁর স্ত্রী পল্লবী যোশী এই কথার সূত্র ধরে বলেন, "আমার মনে হয় এটা খুব কদর্য যে, লোকে আমাদের সত্যি সত্যি জিজ্ঞাসা করছে, "তোমরা যে ৪০০ কোটি টাকা রোজগার করেছ, তা থেকে ওঁদের জন্য কত দান করবে।' এটা খুব কদর্য একটা প্রশ্ন, বিশেষত যখন ছবিটির ৪ জন প্রযোজক রয়েছেন। লাভ্যাংশের কতখানি কে পাবেন, এটা একটা জটিল হিসাবের প্রশ্ন। তা ছাড়া যখনই কোনও প্রযোজক কোনও একটি ছবি থেকে লাভ করেন, তখন তিনি সেই টাকা পরের প্রজেক্টের জন্য কাজে লাগান।"
দু'জনের কেউই উল্লেখ করেননি যে, ছবিটি থেকে উপার্জিত টাকা তাঁরা কোনও তহবিল বা সংগঠনকে দান করেছেন।
নীচে এই সাক্ষাৎকারটি দেখতে পাবেন।
বার্তাটির দাবির সত্যতা জানার জন্য হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমরা পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করি, এবং তাঁকে ভাইরাল হওয়া গ্রাফিকটি পাঠায়।
বিবেক বুমকে উত্তরে জানান, "এই বিষয়ে আমার কোনও ধারণা নেই।"
আরও পড়ুন: বিহারের পরীক্ষাকেন্দ্রে গণ-টুকলির পুরনো ছবি গুজরাতের ঘটনা বলে ছড়াল