অসমে হোর্ডিংয়ে কালি লেপায় অভিযুক্ত বলে ছড়াল বাংলার অপরাধীর ছবি
বুম দেখে ছবিটি ২০২০ সালে পশ্চিমবঙ্গে খুনের দায়ে অভিযুক্ত ও গ্রেফতার হওয়া দুই ব্যক্তির ছবি।

খুনের দায়ে ২০২০ সালে পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) অভিযুক্ত এবং গ্রেফতার হওয়া দুই ব্যক্তির ছবি শেয়ার করে ভুয়ো দাবি জানানো হচ্ছে যে, এরা আসামে (Assam) সম্প্রতি অহমীয়া ভাষায় লেখা সরকারি বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংয়ে কালো কালি লেপে দেওয়ার অপকর্মে লিপ্ত। এই মর্মে ভাইরাল হওয়া পোস্টে আরও একটি সাম্প্রদায়িক মোচড় দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে যে, অভিযুক্ত দুই জনেই মুসলিম।
কাছাড়ের পুলিশ সুপার রমনদীপ কৌর বুম-কে জানালেন—দাবিটি সম্পূর্ণ ভুয়ো। কেননা গ্রেফতার হওয়া দুই ব্যক্তির কেউই মুসলিম নন, এবং এর মধ্যে কোনও সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি খোঁজা ঠিক নয়।
আসামের কাছাড় জেলার শিলচরে অহমীয়া ভাষায় লেখা হোর্ডিংয়ে কালি লেপার ঘটনা অভিনব কিছু নয়। শিলচর হল কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি এই তিন এলাকা নিয়ে গঠিত কাছাড় জেলারই একটি অংশ, যেখানে বাংলাভাষী মানুষদেরই প্রাধান্য।
বাংলা ভাষার ওপর অসমিয়াকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে এখানে দীর্ঘকাল ধরে প্রতিবাদ আন্দোলন চলে আসছে। ১৯৬১ সালে অহমীয়াকে রাজ্যের একমাত্র সরকারি ভাষা হিসাবে মান্য করার নির্দেশের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলনে ১১ জনের মৃত্যুও হয়েছিল। এর পরেই বরাক উপত্যকায় যাবতীয় সরকারি ও প্রশাসনিক ক্রিয়াকর্মে বাংলা ভাষার ব্যবহার চালু করতে আসাম ভাষা আইন সংশোধিত হয়।
ভাইরাল হওয়া পোস্টটিতে অহমীয়া ভাষায় লেখা ক্যাপশনের বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায়, "এখানে দুই জন জেহাদি মিয়াঁকে দেখছেন, যারা শিলচরে অসমিয়া ভাষায় লেখা পোস্টারে কালো কালি লেপেছে। পুলিশ কিছুক্ষণ আগেই রহিম খান ও কাদের আলিকে গ্রেফতার করেছে"।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
এই পোস্টটি দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করতে পারেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের দুর্গা পুজো মণ্ডপে তাণ্ডবের ভিডিও পশ্চিমবঙ্গের বলে ছড়াচ্ছে
তথ্য যাচাই
ছবিটির খোঁজখবর নিয়ে আমরা দেখি, ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়ায় একটি খুনের মামলার সূত্রে এটি প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন অনুসারে খুনের দায়ে অভিযুক্ত হিসাবে সাদ্দাম হোসেন এবং শেখ মঞ্জিল আলম মল্লিকের নাম লেখা হয়েছে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এনডিটিভি-র একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়, "প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, নাবালিকার সঙ্গে অন্যতম অভিযুক্ত সাদ্দাম হোসেনের (২৬) সম্পর্ক ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, রিয়া তাকে বিয়ে করার জন্য সাদ্দামকে পীড়াপীড়ি করছিল। সাদ্দাম রিয়া ও তার মাকে নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে আনে এবং তাদের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। যখন তারা অচেতন হয়ে যায়, তার পরই সাদ্দাম তাদের আগুন জ্বেলে পুড়িয়ে দেয়।"
এর পরে আমরা অহমীয়া ভাষায় লেখা সরকারি বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংয়ে কালি লেপা বিষয়ক সংবাদ-প্রতিবেদনের খোঁজ করি এবং একটি প্রতিবেদনে জানতে পারি, অভিযুক্তরা বরাক ড়েমক্রেটিক ইয়ুথ ফ্রন্ট এবং অল বেঙ্গলি স্টুডেন্টস ইয়ুথ অর্গানাইজেশনের সদস্য।
২০২১ সালের ২০ অক্টোবর প্রতিদিন টাইম প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে ওই দুই সংগঠনের সদস্যরাই শিলচরে অহমীয়া ভাষায় লেখা সরকারি হোর্ডিংয়ে কালো কালি লেপার দুষ্কর্মটি করেছে।
বুম এ ছাড়াও কাছাড় জেলার পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট রমনদীপ কৌর-এর সঙ্গেও এবিষয়ে যোগাযোগ করে, যিনি ভাইরাল পোস্টের ভুয়ো দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেন— "দুই অভিযুক্তই হিন্দু এবং এর মধ্যে কোনও সম্প্রদায়িক ব্যাপারই নেই। অভিযুক্ত দুই ব্যক্তির নাম হল সমর দাস এবং রাজু দেব"।
ঘটনায় অভিযুক্ত দুই ব্যক্তির ছবি দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসও ২০ অক্টোবর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। নীচে ওই দুই অভিযুক্তের ছবিও দেওয়া হল।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
আরও পড়ুন: ২০২০-তে স্মৃতি ইরানির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রতিবাদ ছড়াল সাম্প্রতিক বলে