বিভ্রান্তি সহ বাংলাদেশের দুর্গা পুজো মণ্ডপ পশ্চিমবঙ্গের ঘটনা বলে ছড়াল
বুম দেখে ভাইরাল ছবিটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার এক দুর্গা পুজো মণ্ডপের।
বাংলাদেশের (Bangladesh) একটি দুর্গাপুজো মণ্ডপের ছবি (যেখানে মণ্ডপের ভিতরেই নামাজ বা ইসলামি প্রার্থনার সময়সূচি লেখা হোর্ডিং টাঙানো রয়েছে) দেখিয়ে সোশাল মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছে যে, এটি পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) সদ্য-সমাপ্ত দুর্গোৎসবের সময় তোলা ছবি।
বুম দেখে ছবিটি বাংলাদেশের ঢাকা নগরীর। আমরা উত্তরা সর্বজনীন পূজা কমিটির সম্পাদক ননীগোপাল ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও নিশ্চিত করেছেন যে, এই ছবিটি তাঁদেরই পুজো-মণ্ডপের ছবি।
নেটিজেনদের অনেকেই ছবিটিতে সাম্প্রদায়িক মোচড় দিয়ে অভিযোগ তুলেছেন যে এটি পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুদের তোষণ করারই একটি দৃষ্টান্ত। এমনই একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, "এটা পশ্চিমবঙ্গেরই একটি দুর্গামণ্ডপ, যার ভিতরে টাঙানো একটি বোর্ডে আপনি কখন মন্ত্র পড়বেন, কখন ভজন গাইবেন আর কখন আরতি করবেন...সেই সময় উল্লেখ করা হয়েছে,,,নামাজের সময়-সারণিও দেওয়া হয়েছে...কারণ এটাই ভ্রাতৃত্ব...এটাই ধর্মনিরপেক্ষতা...কেননা এখন ওরা কেবল ৩০ শতাংশ...যখন ওরা ৪০ শতাংশ হবে, তখন পুজো-টুজো সব উঠে যাবে...আর ওরা ৫০ শতাংশ হয়ে গেলে...হিন্দুরাও...শেষ হয়ে যাবে। বাঙালি হিন্দুরা...আপনারা নিশ্চয় ভাঙা পায়ের নাটক আর মঞ্চ থেকে দুর্গা-চালিশার উচ্চারণ খুব উপভোগ করছেন! যত্ত সব কাপুরুষ!"
(হিন্দিতে মূল ক্যাপশন: ये है बंगाल का एक दुर्गा पंडाल । इसमें एक बोर्ड लगा है, इस बोर्ड पर समय लिखा है..की इतने बजे आप न मंत्र पढ़ सकते है, न भजन गया सकते है, न पूजा कर सकते है...क्यो की उस समय नमाज का समय होता..... यही है भाई चारा यही सेक्युलरिज्म...अभी सिर्फ 30% है 40 होने पर पूजा खत्म ओर 50 होने पर हिन्दू खत्म.... बंगाली हिन्दुओ ....टूटी टांग देख ओर मंच से दुर्गा चालीसा सुन कर मजा आरहा है न...डरपोक फट्टूओ....)
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
বাংলা ভাষাতেও ছবিসহ পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে। ছবিটির ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "আগেই বলেছি, আবারো বলছি, হ্যাঁ এটাই আমার সম্প্রীতির বাংলা"।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
একই ধরনের ছবি সহ ফেসবুকেও এই পোস্টটি শেয়ার হয়েছে।
সেই পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: শুভেন্দু অধিকারী নিজেকে 'চোর' বলছেন ভাইরাল ভিডিওটি কাটছাঁট করা
তথ্য যাচাই
ভাইরাল হওয়া ছবিতে যে হোর্ডিং রয়েছে, তাতে বুম বাংলায় লেখা একটি লোগো দেখতে পেয়েছে— উত্তরা সর্বজনীন পূজা কমিটি। এর পরে আমরা উত্তরা সর্বজনীন পুজো কমিটির নামাজের সময়সূচি অনুসন্ধান করি এবং স্থানীয় বাংলাদেশি সংবাদপত্র ডেইলি ফ্রন্টিয়ার নিউজে ১৪ অক্টোবর, ২০২১ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও খুঁজে পাই।
প্রতিবেদনটিতে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিটাই ছাপা হয়েছে এবং তাতে লেখা রয়েছে, এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকারই একটি পুজো-মণ্ডপের ছবি।
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, উত্তরা সর্বজনীন পুজো কমিটির সদস্যরা নামাজের সময়সূচিও হোর্ডিং মারফত মণ্ডপে টাঙিয়ে দেন, যাতে দৈনন্দিন ইসলামি ধর্মাচরণ ও প্রার্থনায় কোনও ছেদ বা ব্যাঘাত না পড়েl ঢাকাতেই এই উত্তরা সর্বজনীন পুজোর মণ্ডপটি তৈরি হয়েছে।
এই সূত্র অনুসরণ করে বুম-এর বাংলাদেশ বিভাগ উত্তরা সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ননীগোপাল ঘোষের সঙ্গেও যোগাযোগ করেl তিনি নিশ্চিত করেন যে, নামাজের সময়-সারণি লেখা বোর্ডটি তাঁদের উত্তরা সর্বজনীন পুজো কমিটির মণ্ডপেই টাঙানো হয়েছে।
বুমকে তিনি জানান, "পুজোর উৎসবের সময় নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়। যেহেতু পুজো মণ্ডপের চারপাশে বেশ কয়েকটি মসজিদ রয়েছে, তাই আমরা ইসলামিপ্রার্থনা অর্থাৎ নামাজের সময় ২০-৩০ মিনিট কোনও বাধা যাতে সৃষ্টি না হয়, সে জন্য গীত-বাদ্য বাজানো বন্ধ রাখি। হোর্ডিং-এ নামাজের সময় উল্লেখ করার কারণ হল, ঠিক কোন সময় গান-বাজনা বন্ধ রাখতে হবে, সেটা মনে করিয়ে দেওয়া।"
(প্রতিবেদনটি লিখতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বুম বাংলাদেশ-এর আমির শাকির)
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে মূর্তি ভাঙায় গ্রেফতার ব্যক্তির ছবি ছড়াল কুমিল্লা হিংসা বলে