বাংলাদেশের মধু সংগ্রাহকের ভিডিও ভারতে মিথ্যে দাবি সহ ভাইরাল হল
বুম দেখে ভিডিওর ব্যক্তি বাংলাদেশের এক মুসলিম মধু সংগ্রাহক, কিন্তু পোস্টে মিথ্যে দাবি করা হয়েছে তিনি ধর্ম পরিচয়ে হিন্দু।
বাংলাদেশের (Bangladesh) এক মধু (Honey) সংগ্রাহকের ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায় তিনি বাঁশি (flute player) বাজিয়ে মৌমাছিদের আকৃষ্ট করছেন। ভাইরাল ভিডিওতে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে যে, ভিডিওটির ব্যক্তি ধর্ম পরিচয়ে (Hindu) হিন্দু এবং হিন্দু দেবতা শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত।
বুম যাচাই করে দেখে যে, ভাইরাল দাবি মিথ্যে। ভিডিওতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তাঁর নাম মাহতাব মোড়ল। তিনি ধর্মে মুসলমান। বাঁশি বাজিয়ে মৌমাছিদের আকৃষ্ট করতে পারার দক্ষতার জন্য তিনি বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়েছেন।
শেয়ার করা ভিডিওটির সঙ্গে হিন্দি ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "এমনও এক জন ভক্ত আছে, যাঁর বাঁশির সুরে মৌমাছিরাও আনন্দে বিভোর হয়। কেবলমাত্র সনাতন ধর্মেই এমন মহাত্মার দেখা পাওয়া সম্ভব। জয় শ্রীকৃষ্ণ।"
(হিন্দিতে মূল ক্যাপশন: एक भक्त ऐसा भी है जिसकी बांसुरी के धुन पर मधुमक्खियों का झुंड आनंद विभोर होता है ऐसी महानता सिर्फ सनातन धर्म में ही देखने को मिलती है जय श्री कृष्णा)
পোস্টগুলি দেখুন এখানে এবং এখানে।
আরও পড়ুন: না, এই ভিডিওটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথম পুরস্কার জয়ী ইরানের সিনেমা নয়
তথ্য যাচাই
বুম রিভার্স ইমেজ সার্চের সঙ্গে সঙ্গে একটি কিওয়ার্ড সার্চও করে এবং দেখতে পায় যে, বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম আরটিভি নিউজ-এর ২০২১ সালের ২৩ জুন তারিখের একটি প্রতিবেদনে ঠিক সেই দৃশ্যগুলিই রয়েছে, যা ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা য়াচ্ছে।
এই ভিডিও প্রতিবেদনটিতে বাঁশিবাদককে মাহতাব মোড়ল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বাঁশি বাজিয়ে মধু সংগ্রহ করেন, এবং সেই মধু বিক্রি করে সংসার চালান। তিনি বাংলাদেশের মানুষ।
২০২১ সালের ৯ জুন ডেইলি বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, "ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে মধু আহরণের পর এর উচ্ছিষ্ট কাপড়ে লাগিয়ে বাড়ির চারপাশে ঝুলিয়ে রাখেন মাহতাব। ওই কাপড়ে মৌমাছি বসে খাবার গ্রহণ করে, বাড়ির আশপাশে উড়ে বেড়ায়। এক পর্যায়ে টিনের থালা বাদ দিয়ে বাঁশিতে সুর তুলে মৌমাছিকে কাছে আনতে থাকেন মাহতাব। ওই সুর শুনে এখন হাজারো মৌমাছি তার শরীরে জড়ো হয়।"
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে, মাত্র ১২ বছর বয়স থেকেই মাহতাব মধু সংগ্রহের কাজ করেন।
এর পর আমরা মাহতাব মোড়লের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ভাইরাল হওয়া দাবিটি উড়িয়ে দেন এবং বলেন যে, তিনি এক জন মুসলমান। মাহতাব বুম বাংলাদেশ-কে জনান, "আমার বাবা ধর্মে মুসলমান, এবং আমিও জন্মসূত্রে মুসলমান।" নিজের কাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে মোড়ল বলেন, "প্রায় ২২ বছর হয়ে গেল আমি মধু সংগ্রহের কাজ করছি। আমি এই পেশায় এসেছি, তার কারণ ছোটবেলায় আমি এক বার এক জনের কাছে একটু মধু খেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি আমায় প্রত্যাখ্যান করেন। আমি তখনই স্থির করি যে, বড় হয়ে আমি মধু সংগ্রহের কাজ করব, এবং কোনও শিশু যদি আমার কাছে মধু চায়, তাকে বিনামূল্যে মধু দেব।"
অতিরিক্ত রিপোর্টিং: আমির শাকির, বুম বাংলাদেশ
আরও পড়ুন: নোটে গাঁধীর বদলে রবীন্দ্রনাথ, কালামের ছবি অস্বীকার করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক