বাজি ফেটে বিস্ফোরণ ভুয়ো দাবিতে জুড়ল বৈদ্যুতিক স্কুটারের সঙ্গে
বুম দেখে ঘটনাটি তামিলনাড়ুর। স্কুটারে বাজি নিয়ে যাওয়ার সময় বিস্ফোরণের দুর্ঘটনা ঘটে।
সিসিটিভি (CCTV) ফুটেজে দেখা গেল এক ভয়ানক দৃশ্য। তামিলনাড়ুতে বাজি বোঝাই করে নিয়ে যাওয়ার সময়, একটি স্কুটারে (Scooter) আগুন ধরে যায়। কিন্তু সেই ফুটেজ সোশাল মিডিয়ায় এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, ব্যাটারি-চালিত বৈদ্যুতিক স্কুটারে বিস্ফোরণ ঘটে।
বুম ভিল্লুপুরামের পুলিশ সুপার ডঃ শ্রীনাথ'র সঙ্গে যোগাযোগ করে। স্কুটারটি বৈদ্যুতিক স্কুটার ছিল, ডঃ শ্রীনাথ সেই দাবি উড়িয়ে দেন।
পুলিশের বসানো ব্যারিকেড পেরিয়ে যাওয়ার পরই, একটি দু'চাকার যানে আগুন ধরে যেতে দেখা যায় ওই ফুটেজটিতে। ফুটেজটি হোয়াটসঅ্যাপে ছড়াচ্ছে ও পাঞ্জাবিতে লেখা ক্যাপশনে বলা হয়েছে যে, একটি ব্যাটারি-চালিত বৈদ্যূতিক স্কুটারে বিস্ফোরণ ঘটে। অনুবাদ করলে ক্যাপশনটি দাঁড়ায় এই রকম: "ব্যাটারি চার্জ করা স্কুটারে বিস্ফোরণ"।
(পাঞ্জাবিতে লেখা ক্যাপশন: ਬੈਟਰੀ ਚਾਰਜ ਵਾਲੀ ਸਕੂਟਰੀ ਚ ਧਮਾਕਾ)
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
একই দাবি সমেত ওই ভিডিও যাচাইয়ের জন্য বুমের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে (+৯১৭৭০০৯০৬৫৮৮) আসে।
আরও পড়ুন: সাঁতারু সায়নী দাসের সদ্য রেকর্ড ভুয়ো দাবিতে ছড়াল বুলা চৌধুরির ছবি
তথ্য যাচাই
আমরা লক্ষ করি যে, ভিডিও ফুটেজটিতে 'পিটিসি নিউজ'র লোগো রয়েছে। পাঞ্জাবি ভাষায় কি-ওয়ার্ড সার্চ করার ফলে দেখা যায় ওই একই ভিডিও ২০২১ সালের ৬ নভেম্বর ওই সংবাদ সংস্থার ফেসবুক পেজে আপলোড করা হয়। ভিডিওটির সঙ্গে পাঞ্জাবিতে লেখা ক্যাপশনে বলা হয়, "বাবা-ছেলের ভয়ানক মৃত্যু ঘটাল বাজি। এক ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ।" সেখানে ওই বিস্ফোরণের জন্য ব্যাটারি-চালিত স্কুটারকে কোনও ভাবেই যুক্ত করা হয়নি।
(পাঞ্জাবিতে লেখা ক্যাপশন: ਪਟਾਕਿਆਂ ਨੇ ਲਿਆਂਦੀ ਪਿਓ-ਪੁੱਤ ਦੀ ਖੌਫਨਾਕ ਮੌਤ, ਹੋਇਆ ਜ਼ਬਰਦਸਤ ਧਮਾਕਾ)
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বুম দেখে ২০২১ সালের ৫ নভেম্বর এনডিটিভি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেটিতে ওই ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট ব্যবহার করা হয়। ওই রিপোর্টে বলা হয়, ৪ নভেম্বর ২০২১, স্কুটারে করে স্থানীয় কারখানায় তৈরি বাজি নিয়ে যাওয়ার সময় বিস্ফোরণ ঘটলে, বাবা ও ছেলের মৃত্যু হয়। দিওয়ালির সময় তামিলনাড়ুর ভিল্লুপুরাম জেলায় ঘটনাটি ঘটে। ওই মর্মান্তিক ঘটনায় যাঁরা মারা যান, তাঁদের কলাইনেসান (৩৫) ও তাঁর ছেলে প্রদেশ (৭) হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
এক তদন্তকারী আধিকারিকের কথা উদ্ধৃত করে এনডিটিভির রিপোর্টে বলা হয়, "ওই দু'চাকা যানের সামনের দিকে বাজির দু'টি বাণ্ডিল বাঁধা ছিল ও তার ওপরেই বসে ছিল বাচ্চাটি। আমাদের মনে হচ্ছে ঘষা ও চাপ লাগার কারণেই ওই বিস্ফোরণ ঘটে। উল্টো দিক থেকে অন্য একটি দু'চাকার যান হঠাৎ চলে আসার ফলে ঝাঁকুনি হওয়ায়, ঘষা লেগে গিয়ে থাকতে পারে।"
এছাড়া হিন্দুস্থান টাইমস'এ প্রকাশিত একটি রিপোর্টে কোট্টাকুপ্পাম থানার ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট বি অরুণ'র বক্তব্য উদ্ধৃত করে লেখা হয়, "পুদুচেরিতে তৈরি হয় ওই বাজি। কারখানাটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত কিন্তু বাজিগুলির বেশিরভাগই ছিল নিষিদ্ধ। সেগুলি আদৌ অনুমোদিত সবুজ বাজি ছিল না।"
বুম ভিল্লুপুরামের পুলিশ সুপার ডঃ এন শ্রীনাথ'এর সঙ্গে যোগাযোগ করলে, স্কুটারটি ব্যাটারি-চালিত ছিল, সেই দাবি উনি নস্যাৎ করেন। তিনি বলেন, "তাঁদের স্কুটারে তাঁরা বাজি নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেগুলি ফেটে যায়। বাজির বিস্ফোরণের কারণেই ওই ঘটনা ঘটে। ওটা বৈদ্যুতিক স্কুটার ছিল না। তাঁরা একটি ইয়াহামা ফ্যাসিনো'তে করে যাচ্ছিলেন।"
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী মোদীর সরকারকে কটাক্ষ করে ট্রাকের সম্পাদিত ছবি ভাইরাল