বিরাট কোহালির কন্যাকে ধর্ষণের হুমকি ভারত থেকে, পাকিস্তানি ব্যক্তি নয়
টুইটটি ভাইরাল হওয়ার পর অনেকে দাবি করেন এক পাকিস্তানি অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করা হয়েছে। আমরা দেখি এই দাবি মিথ্যে।
ভারতের জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহালিকে (Virat Kohli) ট্রোল করার সময় সম্প্রতি @ক্রিকক্রেজিগার্ল অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্টে অত্যন্ত ঘৃণ্য মন্তব্য করা হয়েছে, যাতে কার্যত বিরাট কোহালির ১০ মাস বয়সী শিশুকন্যা ভামিকা (Vamika) কোহলিকে ধর্ষণ করার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়।
এই জঘন্য টুইটটি ভাইরাল হওয়ার কিছু পরেই অনেকে দাবি করতে থাকে যে, টুইটটি কোনও এক পাকিস্তানির করা, যেহেতু তার প্রোফাইল ছবিতে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের জার্সি পরা এক মহিলার ছবি দেওয়া রয়েছে।
কিন্তু বুম দেখে, এই ধরনের দাবি ভুয়ো। এই একই অ্যাকাউন্ট থেকে অতীতে যে সব টুইট করা হয়েছে, সেগুলির তদন্ত করে আমরা দেখেছি, এটি কোনও পাকিস্তানির নয়, বরং তেলুগুভাষী এক দক্ষিণপন্থী ভারতীয়র অ্যাকাউন্ট, যে @রমনহেস্ট নামের হ্যান্ডেলের আড়ালেই টুইট করতো।
টুইটারের কাছেও বুম জানতে চেয়েছে, এই অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে তারা কোনও ব্যবস্থা নেবে কিনা। তাদের জবাব পেলে এই প্রতিবেদন সেই অনুসারে আপডেট করা হবে।
দুবাইতে চলতে থাকা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলায় পাকিস্তানের কাছে ভারতীয় দলের শোচনীয় পরাজয়ের পর মহম্মদ শামির বিরুদ্ধে দক্ষিণপন্থীরা যে নোংরা ট্রোলিং শুরু করে, অধিনায়ক বিরাট কোহালি তার তীব্র নিন্দা করে সতীর্থ শামির সমর্থনে দাঁড়ালে তাঁকেও নোংরা ভাবে আক্রমণ করা শুরু হয়।
সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা #দেওয়ালি অ্যাজ পার বিরাট কোহালি হ্যাশট্যাগ সহ অন্যান্য অপমানজনক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে অনুরাগীদের প্রতি কোহালির অর্থপূর্ণ দেওয়ালি কাটানোর পরামর্শের প্রসঙ্গ টেনে আনে।
এই ট্রোলিং-এর মধ্যেই একটি স্ক্রিনশট ভাইরাল হতে শুরু করে, যাতে কোহালির শিশুকন্যাকে নিয়ে @ক্রিকক্রেজিগার্ল থেকে করা ওই ঘৃণ্য মন্তব্যটি ছড়াতে থাকে।
বুম যত ক্ষণে টুইটটি দেখতে সচেষ্ট হয়, তত ক্ষণে সেটি মুছে দেওয়া হয়েছে। তবে মুছে দেওয়া টুইটটির আর্কাইভ বয়ান বুম উদ্ধার করতে পেরেছে। তবে টুইটটি একটি শিশুর উদ্দেশে দেওয়া ধর্ষণের হুমকি, যা অনেক পাঠককে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে - তাই সতর্কভাবে দেখবেন।
টুইটের আর্কাইভ বয়ান দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আমরা যখন এই টুইটার-ব্যবহারকারীর প্রোফাইল দেখার চেষ্টা করি, তখন টুইটার কর্তৃপক্ষ আমাদের জানান, ওই অ্যাকাউন্টটি আর নেই...অর্থাৎ হয় সেটির নাম বদলে ফেলা হয়েছে, নয়তো সেটিকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বিতর্কিত টুইটটির স্ক্রিনশট যত বেশি ভাইরাল হতে শুরু করে, ততই কিছু লোক দাবি করতে শুরু করে যে, টুইটটির অ্যাকাউন্ট @ক্রিকক্রেজিগার্ল আসলে এক পাকিস্তানি ব্যক্তির।
টুইটের আর্কাইভ বয়ান দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: বেঙ্গালুরুতে এক অপরাধীকে হত্যার দৃশ্য ছড়াল ত্রিপুরায় হিংসার ঘটনা বলে
তথ্য যাচাই
আমরা অ্যাকাউন্টটি সক্রিয় অবস্থায় দেখতে পাইনি, তবে গুগল-এ ওই প্রোফাইলের সন্ধান চালিয়ে আমরা কিছু জিনিস দেখেছি।
১) অক্টোবর মাসে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে তেলেঙ্গানা ও হায়দরাবাদ নিয়ে বেশ কয়েকটি রিটুইট করা হয়েছে
২) সবচেয়ে বেশি রিটুইট হয়েছে তেলুগু ভাষায়, যে ভাষায় হায়দরাবাদের অধিকাংশ মানুষ কথা বলে
৩) দক্ষিণপন্থী বিভিন্ন অবস্থান ও মন্তব্য এই অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করা হয়ে থাকে-- যেমন বিজেপি, নরেন্দ্র মোদী, অপ-ইন্ডিয়া নামক দক্ষিণপন্থী ওয়েবসাইটের সম্পাদক নুপূর জে শর্মা-র মন্তব্য, ইত্যাদি
৪) এই একই অ্যাকাউন্ট থেকে "ধর্মান্তর নয়" নামে একটি দক্ষিণপন্থী অ্যাকাউন্ট-এর পোস্টও শেয়ার করা হয়, যাতে হিন্দুদের খ্রিস্টধর্মে গণ-ধর্মান্তরের বিষয়ে নানা চক্রান্তের তত্ত্বের কথা রয়েছে।
এই সব কিছুই ইঙ্গিত দেয় যে, এই অ্যাকাউন্টটি পাকিস্তানের কোনও লোকের নয়, বরং ভারতেরই এবং হায়দরাবাদের মতো কোনও তেলুগুভাষী স্থান থেকেই এটি প্রচার করা হচ্ছে। পোস্টগুলির চরিত্রও দেখিয়ে দেয় যে ব্যক্তিটি মতাদর্শগতভাবে দক্ষিণপন্থী।
তথাপি বুম এ ব্যাপারে আরও অনুসন্ধান চালায়।
আমরা পেজটি আর্কাইভ করে তার পেজের সোর্স কোড থেকে ইউনিক টুইটার আই-ডি খোঁজ করে দেখি নাম্বারটি হল- ১৩৮৬৬৮৫৪৭৪১৮২৩৬৯২৯০। যখন আমরা টুইটার আইডি ওয়েবসাইট ব্যবহার করে এই অ্যাকাউন্টের ব্যবহার করে কোনো বর্তমান হ্যান্ডেল তা যাচাই করার চেষ্টা করি, তখন দেখি অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয়।
এরপর আমরা এই অ্যাকাউন্ট থেকে ব্যবহার করা পুরনো হ্যান্ডেল-এর খোঁজ করি এবং @ক্রিকক্রেজিগার্ল সন্ধান করে দেখি, আরও অনেকেই এই অ্যাকাউন্টের রহস্যভেদ করতে চেষ্টা করেছে। এরকমই একজন জানায় যে @ক্রিকক্রেজিগার্ল-এর আগে এই অ্যাকাউন্ট @রমনহেইস্ট নামে একটি হ্যান্ডেল ব্যবহার করতো।
এ বিষয়ে আর একটু খোঁজ করতেই স্পষ্ট হয়ে গেল যে, এই দুটি অ্যাকাউন্টই আসলে এক এবং অভিন্ন ব্যক্তির।
এর পর আমরা ওয়েব্যাক মেশিন ব্যবহার করে রমনহেইস্ট –এর ৯ সেপ্টেম্বরের একটি পোস্ট দেখতে পাই।
তারপর @রমনহেইস্ট পেজটির সোর্স-কোড বের করে আমরা বুঝতে পারি @ক্রিকক্রেজিগার্ল-এর সোর্স-কোডও একই, যাতে স্পষ্ট হয়, দুটি অ্যাকাউন্টই একই ব্যক্তির।
অর্থাৎ, @রমনহেইস্ট-ই ভোল বদলে সম্প্রতি @ক্রিকক্রেজিগার্ল হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই অ্যাকাউন্টটির মালিক পাকিস্তানের কেউ নয়, বরং অতিমাত্রায় ভারতেরই, বিশেষত ভারতের কোনও তেলুগুভাষী অঞ্চল যেমন হায়দরাবাদের। এ বিষয়েও কোনও সন্দেহ নেই যে ভাইরাল হওয়া ওই নোংরা টুইট যে করেছে সে বিজেপির সমর্থক এবং হিন্দুত্বের মতাদর্শে বিশ্বাসী।
(অতিরিক্ত তথ্য: সুজিত এ)
আরও পড়ুন: বিমানবন্দরে পাকিস্তানের ব্যক্তির নগ্ন তল্লাশি? ২০১২ সালের ছবিটি মার্কিন নাগরিকের