বিশ্লেষণ
ফেসবুকে স্বাস্থ্য নিয়ে ভুয়ো খবরে কয়েকশো কোটি বার 'ভিউস': রিপোর্ট
'আভাজ'-এর তৈরি ওই রিপোর্ট বলছে, ফেসবুকের অ্যালগরিদম পাঠক ধরে রাখতে ওই ধরনের ভুল তথ্য প্রচারে উৎসাহ দেয়।
মে ২০১৯ থেকে মে ২০২০'র মধ্যে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ভুয়ো তথ্য ফেসবুকে সব মিলিয়ে ৩.৮ বিলিয়ন বা ৩৮০ কোটি বার দেখা হয়েছে। এপ্রিল ২০২০ তে, কোভিড-১৯ অতিমারির মধ্যে, এই প্রবণতা তুঙ্গে ওঠে। এ কথা জানিয়েছে জনমত সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী 'আভাজ'।
রিপোর্টটির শিরোনাম হল, 'ফেসবুকের অ্যালগরিদম: জনস্বাস্থ্যের প্রতি একটি বড় হুমকি'। তাতে আরও বলা হয়েছে, ওয়ার্লড হেল্থ অরগানাইজেশন (ডাব্লিউএইচও) বা হু ও সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর মতো ১০টি প্রথম সারির স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটগুলিতে যে বিষয়বস্তু রয়েছে, সেগুলি যত দেখা হয়েছে, তার ১০ গুণ বেশি দেখা হয়েছে এমন ১০টি প্রথম সারির ওয়েবসাইটের লেখা, যেগুলি ভুয়ো তথ্য বিতরণ করে থাকে। তাদের 'কনটেন্ট' বা বিষয়বস্তু যাচাই করে দেখা হলেও, কেবল মাত্র ১৬% যাচাই-করা মিথ্যে তথ্য সম্পর্কে সতর্কতা চিহ্ন দেওয়া হয়। বাকি ৮৪% ক্ষেত্রে, পাঠককে সাবধান করা হয় না, বলছে ওই রিপোর্ট।
আভাজ-এর কথা অনুযায়ী, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ভুয়ো তথ্যের প্রচার কমানর যে চেষ্টা ফেসবুক করে, ফেসবুকের নিজস্ব অ্যালগরিদমই (গণিতিক পরিভাষা) সেই প্রয়াসকে বানচাল করে মিথ্যে খবরের রমরমা অনেকটা বাড়িয়ে দেয়।
Facebook promised to keep people safe & informed during the pandemic - but Avaaz's new report shows Zuckerberg is failing his biggest test yet. People need reliable information, not toxic lies and conspiracies that are making us sick. #DetoxTheAlgorithm https://t.co/UOVhWnBXwx pic.twitter.com/QOQkJNpkE2
— Avaaz (@Avaaz) August 19, 2020
তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে, বুম ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাঁদের মতামত পাওয়া মাত্র আমরা এই প্রতিবেদন আপডেট করব।
সমস্যাসৃষ্টিকারী অ্যালগরিদম
এই বছরের শুরুর দিকে অভিযোগ ওঠে যে, বিশ্বব্যাপী এক স্বাস্থ্য সংকটের সময়, ফেসবুকের প্ল্যাটফর্ম স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিপজ্জনক ধরনের ভুয়ো তথ্য ছড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সময়, ভুল এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেঁটে ফেলার জন্য ফেসবুক বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করায় উদ্যোগী হয় এবং সাধারণ মানুষকে ওয়াকিবহাল ও নিরাপদ রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়।
কিন্তু আভাজ-এর ক্যাম্পেন ডিরেক্টর বা প্রচার অধিকর্তা ফাদি কোরান সংবাদ সংস্থা রয়টার্স কে বলেন যে, ফেসবুকের অ্যালগরিদমই তাদের প্রয়াস বানচাল করে দিচ্ছে এবং জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে একটা বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। "অতিমারির সময় নির্ভরযোগ্য তথ্য পরিবেশন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন মার্ক জুকেরবার্গ। কিন্তু ফেসবুকের ২.৭ বিলিয়ন (২৭০ কোটি) ব্যবহারকারীর অনেককেই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত মিথ্যে খবর প্রদানকারী নেটওয়ার্কে্র দিকে ঠেলে দিয়ে, তাঁর অ্যালগরিদমই স্যাবোটাজ করছে তাঁর প্রয়াসকে," কোরান ওই সংবাদ সংস্থাকে বলেন।
২০১৮ সালে অক্সফোর্ডের একটি গবেষণায়, ফেসবুকের অ্যালগরিদমে কিছু সমস্যা লক্ষ করা যায়। দেখা যায়, ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে বেশি সময় ফেসবুকে ধরে রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছে সেটি। মে ২০২০তে 'দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল'এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেসবুকের কর্মীদের একাংশ তাঁদের উর্ধতন কর্তাব্যক্তিদের জানান যে, লোকজনকে ধরে রাখার জন্য ফেসবুকের অ্যালগরিদম মানুষের মধ্যে দূরত্ব ও বিভেদ সৃষ্টি করছে।
আভাজ মনে করে যে, "আবেগ ও বিভাজন সৃষ্টি করা হল স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ভুল তথ্যের বৈশিষ্ট্য।"
জনগনের পেজ – ভুয়ো খবরের বিপদ
২৮ মে ২০১৯ থেকে ২৭ মে ২০২০-র মধ্যে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ভুয়ো খবর ছড়ায় এমন ৮২টি ওয়েবসাইট বিশ্লেষণ করে আভাজ। এই সাইটগুলি নির্ভরযোগ্য নয় বলে চিহ্নিত করেছিল নিউজগার্ড। সেই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালির মতো পাঁচ দেশে ছড়িয়ে থাকা 'সুপারস্প্রেডার' বলে পরিচিত ৪২টি ফেসবুক পেজও খতিয়ে দেখে ওই গোষ্ঠী। সামগ্রিকভাবে, ওই সময়ের মধ্যে তারা এমন বিষয়বস্তু প্রচার করে যা ১৩০ মিলিয়ন বা ১৩ কোটি আদানপ্রদান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয় (যা ৩.৮ বিলিয়ন বা ৩৮০ কোটি 'ভিউ' বা দেখার সমতুল্য)। রিপোর্টটিতে আরও বলা হয়েছে যে, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সব ভুয়ো তথ্য, বিশ্লেষণ-করা এই স্যাম্পল বা নমুনাটির মধ্যে আসেনি।
বুম দেখে যে, ১০টি প্রথম সারির ভুয়ো খবর প্রদানকারী ওয়েবসাইট বলে আভাজ যাদের চিহ্নিত করে, সেগুলির ৪৩% ভিউ আসে ফেসবুকের পাবলিক পেজ বা সকলে দেখতে পারে এমন পাতা থেকে। এবং ওপরের দিকে থাকা সেই রকম ৪২টি ফেসবুক পেজ আনুমানিক ৮০০ মিলিয়ন বা ৮০ কোটি ভিউ সৃষ্টি করে।
নিউজগার্ডের রেটিংয়ের ভিত্তিতে, ওই পেজগুলির মতাদর্শগত আনুগত্য বোঝার চেষ্টা করে আভাজ। তারা দেখে, ৬১% পেজ সরাসরি কোনও আদর্শগত শিবিরের অনুগামী নয়। কিন্তু দেখা যায়, বিশ্লেষণ-করা ওয়েবসাইটগুলির ২৫.৬% হল চরম দক্ষিণপন্থী, শতাংশের হিসেবে যা একক বৃহত্তম গোষ্ঠী হিসেবে বেরিয়ে আসে।
সমাধান
রিপোর্টটিতে দু'স্তরের একটি সমাধান সূত্রের কখা বলা হয়েছে। এক, যাঁরা ভুয়ো তথ্য পাবেন, তাঁদের যাচাই-করা সঠিক তথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা; দুই, যেসব পোস্ট ও ব্যবহারকারী বারবার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত মিথ্যে খবর দেবে, তাদের শনাক্ত করে ডাউনগ্রেড করা বা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন চিহ্ন রাখা।
রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, এই পদক্ষেপগুলি ভুয়ো খবরের ওপর আস্থা ৫০% কমিয়ে আনবে আর মিথ্যে খবর দেয় যে সব পেজ মানুষের কাছে সেগুলির পৌঁছনর ক্ষমতা ৮০% কমাবে।
পুরো রিপোর্ট এখানে পড়ুন। বুম এর ইংরেজি প্রতিবেদনটি পড়া যাবে এখানে।
Next Story