ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ আসছে? একটি তথ্য যাচাই
বুম দেখে এই মুহূর্তে কোনও সাইক্লোনের পূর্বাভাস নেই, মৌসম ভবন ২৮ এপিল ২০২০ ঝড়ের নামের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে মাত্র।
আমপান তাণ্ডবের ভয়াবহতার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার নাকি আসছে আরেক ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ এরকমই দাবি সহ সোশাল মিডিয়া, ইউটিউব ও অনলাইন গণমাধ্যমে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর দাবি সহ ভুয়ো খবর ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যেমে বিভ্রান্তিকর শিরোনাম লেখার ফলে সাধারণ পাঠক বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছেন।
বুম যাচাই করে দেখেছে এই মুহূর্তে কোনও সাইক্লোনের সতর্কতাবার্তা প্রকাশ করেনি ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর। রিজিওনাল স্পেশালাইজড মেট্রোলজিক্যাল সেন্টার(আরএসএমসি)-এর সদস্য হিসেবে মৌসম ভবন ২৮ এপিল ২০২০ একটি ঝড়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। পরবর্তীকালে আরএসএমসি সদস্যভুক্ত ১৩ টি দেশ এই তালিকা থেকে ক্রান্তীয় সাইক্লোনের নামকরণ করবে।
ইউটিউব ভিডিও
ঘূর্ণিঝড় আমপান তাণ্ডবের ধ্বংসলীলা কাটতে না কাটতেই ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও তৈরি করা হয়েছে নিসর্গর ব্যাপারে। আর সেগুলির শিরোনাম ও বক্তব্যেও রয়েছে ভুয়ো তথ্য।
ফেসবুকে ভাইরাল
ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এই 'নিসর্গ' ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বিভ্রান্তিকর ফেসবুক স্ট্যাটাস ও দিয়েছেন এর ফলে নেটিজেনরা আতঙ্কিত হচ্ছেন।
ভুয়ো শিরোনামে
অনালাইন গণমাধ্যমের একাংশে বিভ্রান্তিকর শিরোনাম লেখা হয়েছে যেমন জি নিউজ-এর প্রতিবেদনে লেখা হয়ছে, ''তছনছ করে গেল আমফান, এবার আসছে মহাপ্রলয় 'নিসর্গ'''
নিউজ ১৮ বাংলার প্রতিবেদনেও ব্যবহার করা হয়েছে এই ধরণের শিরোনাম। পরে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশ নাকি নামকরণ করেছে আসন্ন এই ঘূর্ণিঝড়ের।
তথ্য যাচাই
বুম ভারতের মেট্রোলজিক্যাল বিভাগের দিল্লির কেন্দ্রীয় দপ্তরের কার্যালয় মৌসম ভবনের তরফে ২৮ এপ্রিল ২০২০ প্রকাশিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির হদিস পায়। ওই বিজ্ঞপ্তির বিষয় ছিল, 'উত্তর ভরত মহাসাগরে উদ্ভূত ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের নাম। প্রেস ইনফর্মেশন ব্যুরোও প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তিটি।
পরবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট ভূসামুদ্রিক এলাকায় যে যে ক্রান্তীয় সাইক্লোনের উৎপত্তি হবে তার নামকরণ করা হবে এই প্রকাশিত তালিকা থেকে। এই তালিকায় চারটি কলামে দেওয়া রয়েছে আসন্ন ঝড়ের খসড়া নাম। প্রথম কলামটি শেষ হলে পর্যাক্রমে আসা হবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ কলামের নামে।
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করা হবে প্রথম কলামের নাম অনুযায়ী। সেই তালিকায় প্রথমে দেওয়া হবে বাংলাদেশের দেওয়া নাম 'নিসর্গ', তার পরে আসবে ভারতের দেওয়া নাম 'গতি', তারপর হবে ইরানের দেওয়া নাম 'নিভার'।
তালিকাটিতে প্রকাশ করা হয়েছে ১৩৯ টি ঝড়ের নাম যার মধ্যে ১৩ টি নাম দিয়েছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডাব্লুএমও) ও দ্য ইকোনমিক এ্যান্ড সোশাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক(ইএসসিএপি)-এর সদস্যভুক্ত দেশগুলি।
বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, মায়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ইউনাইটেড আরব আমিরশাহি ও ইয়েমেন এই ১৩ টি দেশ গঠিত হয়েছে রিজিওনাল স্পেশালাইজড মেট্রোলজিক্যাল সেন্টার(আরএসএমসি)। এই সংস্থার মূল কাজ সাইক্লোনের নামকরণ এবং সাইক্লোনের গতিপথ বিশ্লেষণ করে আবহাওয়ার আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া। আরএসএসসি সদস্যের অধীন ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের দিল্লি কার্যালয়ের কর্মীরা উত্তর ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে উদ্ভুত ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ ও সতর্কবার্তা দিয়ে থাকেন।
কবে আসবে নিসর্গ ঘূর্ণিঝড়?
এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় আনন্দবাজারকে বলেছেন, "আগামী ১০ দিনে বঙ্গোপসাগের ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা নেই। ভবিষ্যতে যদি কোনও দিন ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় তার নামকরণ হবে নিসর্গ। ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলেই যে বাংলাতেই আসবে তারও ঠিক নেই। আগের যে ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা ছিল, সেই তালিকায় শেষ নাম ছিল আমপান।"
আবহাওয়া সম্পর্কিত যাচাই করা খবর পেতে ইন্ডিয়ান মেট্রোলজি দপ্তরের (আইঅমডি) ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ফলো করুন ফেসবুক ও টুইটার পেজ। কলকাতায় আলিপুরস্থিত আইএমডির আঞ্চলিক কার্যালয়ের ফেসবুক পেজ ও টুইটার পেজও ফলো করতে পারেন।
আরও পড়ুন: আমপানে রাস্তার অ্যাসফল্ট আস্তরণ উঠে গেছে? ছড়ালো মালয়োশিয়ার পুরনো ছবি