তেজস্বী যাদব বিহারে ভোট পুনর্গণনার দাবি তুলেছেন, কিন্তু আইন কী বলে?
নির্বাচন কমিশন কেবল বিশেষ পরিস্থিতিতেই ভোট পুনর্গণনা করে। অন্যান্য ক্ষেত্রে পার্থী আদালতে যেতে পারেন।
বিহার নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলেও অনেক আসনে খুব কম সংখ্যক ব্যাবধানে হেরে যাওয়ায়, রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) ও আরও কিছু পার্টি ভোটের পুনর্গণনা দাবি তুলেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আরজেডি-র নেতৃত্বাধীন মহাজোট নির্বাচনে হেরে গেলেও, আরজেডি একক ভাবে সবচেয়ে বেশি আসনে জিতে, বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছে। #बिहार_मांगें_रिकॉउंटिंग (#বিহার পুনর্গণনা চায়) এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে, বহু টুইটার ব্যবহারকারী হেরে-যাওয়া দলগুলির প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে।
এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে, নির্বাচন কমিশন হিলসা কেন্দ্রে আবার ভোট গণনা করায়। সেখানে হার-জিতের ব্যবধান ছিল মাত্র ১২ ভোট। অথচ, আরও যে সব কেন্দ্রে হার-জিতের ব্যবধান কম ছিল, সেগুলিতে কিন্তু পুনর্গণনার দাবি খারিজ করে দেয় কমিশন। ফলে প্রশ্ন ওঠে যে, কোন কোন পরিস্থিতিতে পুনর্গণনার নির্দেশ দেওয়া হয়?
"ব্যবধান হতে হবে বাতিল পোস্টাল ব্যালটের থেকে কম"
বুম প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশির সঙ্গে কথা বলেছে। তিনি জানান, "বাতিল পোস্টাল ব্যালটের সংখ্যা যদি ভোটের ব্যাবধানের থেকে বেশি হয়, তাহলে পুনর্গণনা আবশ্যিক হয়ে পড়ে।"
হিলসা কেন্দ্রে, আরজেডি প্রার্থী অত্রি মুনি, জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর প্রেম মুখিয়ার কাছে ১২ ভোটে হেরে যান। ওই কেন্দ্রে, বাতিল হওয়া পোস্টাল ব্যালটের সংখ্যা ছিল ১৮২। মুনি ইভিএম ও পোস্টাল ব্যালট, উভয়েরই পুনর্গণনা দাবি করেন। কিন্তু কেবল পোস্টাল ব্যালট আবার গণনার দাবি মঞ্জুর হয়।
আরও পড়ুন: এগুলি আরজেডি'র পাটনা কার্যালয়ে মিষ্টি ফেলে দেওয়ার ছবি নয়
"প্রথম দাবিটি খারিজ হয়ে যায় কারণ, ইভিএম ভোট গণনার সময়, তাঁর (মুনির) এজেন্টরা গণনা কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। এবং প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে তাঁরা কোনও আপত্তি করেননি। প্রার্থীকে সন্তুষ্ট করতে, রিটার্নিং অফিসার বাতিল ব্যালট সহ ৫৫১ টি পোস্টাল ব্যালট আবার গণনা করান। কিন্তু ফলের কোনও পরিবর্তন হয়নি," বিহারের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার এইচ আর শ্রীবাস্তব 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'কে একথা বলেন।
কারচুপি, নাকি দুর্ভাগ্য?
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ২৪৩ টি আসনের মধ্যে ১১ টিতে ব্যবধান ছিল ১,০০০ ভোটেরও কম। এই সিটগুলি হল: হিলসা, বরবিঘা, মতিহানি, ডেহরি, বাছওয়ারা, চকাই, রামগড়, বখরি, পারবট্টা, ভোরে ও কুরহানি। এগুলির মধ্যে চারটিতে জেতে জেডিইউ, তিনটিতে আরজেডি, এবং বিজেপি, সিপিআই, এলজেপি ও নির্দল প্রার্থী জেতেন একটি করে সিটে।
মুনি ছাড়া আরও পাঁচ প্রার্থী মতিহানি, পারবট্টা, বখরি, ভোরে, ডেহেরি ও রামগড়ে পুনর্গণনা দাবি করেন। কিন্তু ওই কেন্দ্রগুলিতে ভোটের মার্জিন, বাতিল পোস্টাল ব্যালটের সংখ্যার চেয়ে বেশি হওয়ায়, রিটার্নিং অফিসার ওই দাবি খারিজ করে দেন।
তাই, যাদব ও তাঁর পার্টির কিছু নেতা কারচুপির অভিযোগ তুলছেন। কিন্তু কুরেশির মতে, এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। "সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে রিটার্নিং অফিসারের। দু'তরফের দলীয় পর্যবেক্ষক ও এজেন্টদের উপস্থিতিতেই গণনা চলে। এবং তার ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়। রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একমাত্র কোর্টেই আবেদন করা যায়," বলেন কুরেশি।
এ বিষয়ে যাদব যদি আরও এগোতে চান, তাহলে তাঁর পরের পদক্ষেপ কী হবে? আদালতে যাওয়াই ওই তরুণ আরজেডি নেতার সামনে একমাত্র পথ যেটি খোলা আছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে, পুনর্গণনার পক্ষে তাঁকে যথেষ্ট প্রমাণ পেশ করতে হবে আদালতে।
এক সাংবাদিক সম্মেলনে যাদব দাবি করেন যে, তাঁর পার্টি ১১০ নয়, ১৩০ টি আসনে জিততে পারত (সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ১২২ টি আসন)। তিনি আরও বলেন যে, ২০ টি আসনে ভোটের ব্যবধান ছিল খুবই সামান্য। তাই সেগুলির ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। তবে ওই ২০ আসনের নাম তিনি জানাননি।
নির্বাচন কমিশন তাঁর দলের প্রার্থীর দাবি মানতে না চাইলে তিনি শেষ পর্যন্ত কোর্টে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। "আমি অবাক হচ্ছি কিভাবে ৫০০-৭০০-৯০০ পোস্টাল ব্যালট বাতিল হয়।নির্বাচন কমিশনকে আমার প্রার্থীদের প্রশ্নের জবাব দিতে হবে নাহলে কোর্টে গিয়ে লড়তেও প্রস্তুত," তেজস্বী বলেন।
অতীতে পুনর্গণনার ঘটনা
২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম প্রথমে শিবগঙ্গা আসনে এআইএডিএমকে-র রাজা কানাপ্পনের কাছে ৩,০০০ ভোটে হেরে যান। কিন্তু সেই কেন্দ্রে চিদম্বরম পুনর্গণনা দাবি করেন। এবং নতুন করে ভোট গণনা হলে, উনি জয়ী হন।
কিন্তু কানাপ্পন আবার গণনা দাবি করেন। পুনরায় ভোট গোণা হলেও কিন্তু দেখা যায় ৩,৩৫৪ ভোটে চিদম্বরম জিতেছেন।
এরপর, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাঅভিযোগ করেনযে, চিদম্বরম কারচুপি করে জয়ী হয়েছেন। এবং ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনী প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে 'রিকাউনটিং মিনিস্টার' (পুনর্গণনা মন্ত্রী) বলে সম্বোধন করেছিলেন।
২০১৯-এ, মাদ্রাজ হাইকোর্ট রাধাপুরম বিধানসভা কেন্দ্রে পুনর্গণনার নির্দেশ দেয়। এআইএডিএকে-র আই এস ইনবাদুরাই খুব কম ভোটের ব্যবধানে ডিএমকে-র এম আপ্পাভু-কে হারিয়ে ওই আসনটি জেতেন। ৪ অক্টোবর ২০১৯-এ, সারাদিন ধরে ম্যাডরাস হাইকোর্টে গণনা চলে।
কিন্তু গণনার ফল ঘোষণার বিরুদ্ধে ইনবাদুরাই সুপ্রিমকোর্টের স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন। ফলে, পুনর্গণনার ফলাফল আর জানা যায়নি।
পুনর্গণনার মাধ্যমে বিহার নির্বাচনের রায় কি তেজস্বী যাদব পাল্টাতে পারবেন? পুনর্গণনার ইতিহাস দেখলে মনে হয়, ২০ টি আসনের ফলাফল বদলানো সম্ভব হবে না।
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গে লোকাল ট্রেন চালু হওয়ার পর ছড়াল পুরনো ভিড় স্টেশনের দৃশ্য